E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুই মাসের মধ্যেই হোক গুরুতর অপরাধের বিচার

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০৭ ১৬:০১:৪৮
দুই মাসের মধ্যেই হোক গুরুতর অপরাধের বিচার

প্রবীর সিকদার


অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ, বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়া। মামলা দায়ের, তদন্ত, সাক্ষ্য, যুক্তিতর্ক, রায়, আপিল, আবার আপিল এবং সবশেষে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার ফল পেতে পেতে অনেকের মন থেকেই হারিয়ে যায় এক সময়ের আলোচিত অপরাধের ঘটনা। ফলে মামলার রায় এবং তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কোনই আগ্রহ থাকে না সাধারণ মানুষের। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও সাধারণ মানুষের নির্লিপ্ততার সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা থাকে বেপরোয়া; ঘটতেই থাকে এবং বাড়তেই থাকে অপরাধ। আমি মনে করি, দ্রত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করে দূর করতে হবে সাধারণ মানুষের বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি হতাশা বোধ। খুন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, সাম্প্রদায়িক হামলাসহ গুরুতর অপরাধ, যে ঘটনাগুলো সাধারণ মানুষের মনে দারুণ রেখাপাত করে, সেই সব অপরাধের মামলা দ্রুত নিস্পত্তি করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিচারের চলমান দীর্ঘসূত্রিতা বিচারহীনতার অপসংস্কৃতিকেই উস্কে দেয়। আমার পর্যবেক্ষণ বলছে, খুন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, সাম্প্রদায়িক হামলাসহ গুরুতর অপরাধের মামলার বিচার সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অনধিক দুই মাসের মধ্যে শেষ করা উচিত। অপরাধী সাজা পেয়ে কারাগারে থাকবে এবং উচ্চ আদালতে আপিল করে অপরাধী নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণের চেষ্টা করবে। এতে ভিকটিম ও সাধারণ মানুষের মনে স্বস্তি কাজ করবে। অনেকে হয়তো বলবেন, এটি অসম্ভব। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে শেষ করলে অনেক নিরাপরাধী সাজা পেয়ে যাবে। আমি তেমনটি মনে করি না। আমার বিশ্বাস, গণমানুষের মনে অপরাধ ও অপরাধীর বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা বোধ জাগ্রত থাকতে থাকতেই বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলে প্রকৃত অপরাধী সনাক্ত ও সাজা দেওয়াটা অনেকটাই স্বচ্ছ থাকে। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে, সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে গুরুতর অপরাধের বিষয়টি ভুলে যায়। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিচার্য অপরাধের নানা ডালপালা গজায়, অপরাধী নিজেকে রক্ষায় সক্ষম হয়ে যায়।

কেউ কেউ বলতে পারেন, এতো দ্রুত গুরুতর অপরাধের বিচার করা হলে সেই বিচার প্রক্রিয়া অনেকটাই জংলী আইনে বিচারের সামিল হবে। আমি বলি, অনেক গুরুত্বপূর্ণ অপরাধের বিচার হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই অপরাধীকে সাজা দেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তিকে জরিমানা গুনতে হয় কিংবা কারাগারে যেতে হয়। তাকে উচ্চ আদালতে আপিল করে জামিন কিংবা মুক্তি পেতে হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে যতো সমালোচনাই করা হোক না কেন, ওই বিচার প্রক্রিয়া সাধারণ মানুষের মনে দারুণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থাশীল হন। বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে উত্তরণে সাধারণ মানুষের এই আস্থা অর্জন করা খুবই জরুরি। আর সেই আস্থা পাকা করতে এবং সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা কমাতে খুন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, সাম্প্রদায়িক হামলাসহ গুরুতর অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া অনধিক দুই মাসের মধ্যে শেষ করা খুবই জরুরি। আশা করি, সংশ্লিষ্টরা আমার এই প্রস্তাবনাটি বিবেচনা করে দেখবেন।


পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test