E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমায় ক্ষমা কর পিতা : ০৯

২০১৭ আগস্ট ০৯ ০০:০১:২৪
আমায় ক্ষমা কর পিতা : ০৯

প্রবীর সিকদার


মোশতাক-জিয়া খুনি চক্র সেদিন শুধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বহমানকে খুন করেনি, তারা খুন করেছিলো বাংলা ও বাঙালির আশা, আকাঙ্খা আর সম্ভাবনাকে। ১৫ আগষ্টের কাল রাতে বঙ্গবন্ধুর সাথে আরও যারা খুন হয়েছিলেন তারা হলেন, বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, শেখ কামাল, বেগম সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, বেগম রোজী জামাল, শেখ রাসেল, শেখ ফজলুল হক মনি, বেগম সামসুন্নেসা মনি, শেখ আবু নাসের, আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, বেবী সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, বাবু সেরনিয়াবাত, নান্টু, কর্ণেল জামিল ও বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা। জানোয়ার ঘাতক চক্র বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ রাসেলসহ বেশ কয়েকজন শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি। এই শিশুদের বয়স ছিল ৫ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এ কী বিভৎসতা!
পিতা! তোমার খুনি ফারুক ও রশিদ একাধিকবার বলেছে, তোমাকে খুনের বিষয়টি তোমারই প্রিয়ভাজন খন্দকার মোশতাককে তারা ১৯৭৫ এর জুলাই মাসে জানায়। পরে ২ আগষ্ট মোশতাকের সঙ্গে পরামর্শ করেই তারা তোমাকে খুন করার পরিকল্পনাটি পাকা করে। তোমার মন্ত্রী পরিষদের আরেক সদস্য তাহের উদ্দিন ঠাকুরও বলেছে, তার বাসাতেই নাকি তোমার হত্যাকান্ডের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। এমনও শোনা যায়, তুমি নাকি বালি হাঁসের মাংস ভালো খেতে। তোমাকে খুন করবার মাত্র দুই দিন আগে মোশতাক বালি হাঁসের মাংস রান্না করে তোমার বাসায় দিয়ে যায়। কী ভয়ংকর খুনি মোশতাক! মানুষ এতো ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করতে পারে! সেটাও আবার তোমার মতো একজন মহৎপ্রাণ মানুষকে!

পিতা! ভাঙা ঘর জোড়া লাগানোর সময় তুমি বেগম খালেদাকে নিজের মেয়ে বলেছিলে। সেই হিসেবে জিয়া তোমার স্নেহধন্য জামাতা। তোমার খুনি ফারুক বলেছে, সরকার পরিবর্তনের বিষয়টি তারা জিয়াকে জানিয়েছে ১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ। জিয়া তাদের পরিকল্পনাকে উস্কে দিতেই বলেছিলেন ‘আমি জংলী কিছু করতে পারবো না। তোমরা ইয়ং অফিসার, যা খুশি করো গিয়ে।’ ফারুক-রশিদ চক্র তারপরই সংগঠিতভাবে তোমাকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে থাকে। সেদিন জিয়ার ভূমিকাটি পরিচ্ছন্ন হলে আমরা তোমাকে হারাতাম না।

কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে তোমাকে হত্যা করবার একটি পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দিয়েছিলেন মেজর মুজিব। তুমি পাত্তা দাওনি। উল্টো কর্র্নেল তাহেরসহ অন্য ষড়যন্ত্রকারীদের পদোন্নতি দিয়ে ভালো পোষ্টিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলে তুমি! পরে ওই মেজর মুজিবকে চাকুরিচ্যুত করা হয়।

পিতা! তোমার প্রিয় বন্ধু মোশতাক দুই দিন আগে বালি হাঁসের মাংস রেঁধে তোমার বাসায় দিয়ে যায়। ১৫ আগষ্ট সপরিবারে তোমাকে নৃশংসভাবে খুন করে তোমার রাষ্ট্রপতি পদটি দখল করে নেয় তোমারই মোশতাক! শুধু কি তাই! তোমাকে যারা খুন করেছে তাদের কোনো দিন বিচার করা যাবে না- এই মর্মে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সও জারি করে মোশতাক! তোমার সরলতা, তোমার উদারতা, তোমার মহানুভবতাকে পুঁজি করে খুনি মোশতাক-জিয়া চক্র আমাদেরকে এতো বড় বিশাল সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেয়। তোমার খুনিদের বিচার করা যাবে না সেটা আমি নির্বিবাদে মেনে নিলাম দুই দশকেরও বেশি সময়! কী অকৃতজ্ঞ, কী কৃতঘ্ন সন্তান আমি!
পিতা মুজিব, আমায় ক্ষমা কর তুমি, ক্ষমা কর।

পাঠকের মতামত:

২৮ মার্চ ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test