E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ফেসবুক : গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া!

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ১১ ১৮:২৭:৪৮
ফেসবুক : গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া!

রূপক মুখার্জি : ফেসবুক আধুনিক বিজ্ঞানের বিষ্ময়কর আবিষ্কার। ফেসবুক নিয়ে গবেষনার শেষ নেই। ফেসবুকের সবোর্চ কর্তাব্যক্তিদের এবং একই সাথে হতাশার সুর বেজে উঠেছে। তবুও আসার কথা হলো, ফেসবুক সহসাই হারিয়ে যাচ্ছে না। তবে এটাও সত্য নয় যে, আগামীর পৃথিবী হবে ফেসবুকের পৃথিবী। ব্যবহারকারীদের মনে রাখতে হবে, এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পরিবার, সমাজ ও  রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর নয়। হুমকিও নয়। কেননা, শক্তিশালী, প্রযুক্তি নির্ভর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ফেসবুকের অবদান ও গুরুত্ব কোনা ভাবেই কম নয়। শাসন ব্যবস্থার সাথে ফেসবুক জড়িত হয়ে পড়েছে।

দুইশত কোটি মানুষের একটি অভিন্ন প্লাটফর্ম হলো, ফেসবুক। ফেসবুকের অবদান অনস্বীকার্য। বিশ্বকে কেবল তত্বীয় ভাবে ‘বিশ্বগ্রাম’ নয়, বাস্তবিকই এক বিষ্ময়কর ‘ভার্চুয়াল’ জগতে পরিনত করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই হলো ফেসবুক। মাত্র এক যুগের মধ্যেই পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ সমবেত হয়েছে ফেসবুক নেটওয়ার্কিংয়ে।

সহজ ভাষায়, পৃথিবীর অগুনতি মানুষের ধ্যান-ধারণা এবং বেঁচে থাকার শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো হয়ে পড়েছে ফেসবুক। ফেসবুকের কল্যাণে বর্তমানে পৃথিবী একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ বা বিশ্বগ্রামে পরিনত হয়েছে।
ফেসবুকের কল্যাণকর তথা শুভ দিক যেমন আছে, তেমনি অকল্যাণকর বা অশুভ দিকও রয়েছে।সাম্প্রতিক বিশ্বে ফেসবুক নিয়ে ব্যবহারকারীদের মাঝে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

ফেসবুক নিয়ে ফেসবুকের প্রতিষ্টাতা প্রেসিডেন্ট শন পার্কার ‘অশনি বার্তা’ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি তিনি এই মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ‘একমাত্র ঈশ্বরই জানেন ফেসবুক আমাদের সন্তানদের ‘মস্তিস্ক’ নিয়ে কীভাবে খেলছে? শন পার্কারের পাশাপাশি ফেসবুকের উন্নয়ন বিষয়ক সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট পালিহা পিথিয়া বলেছেন, মানুষের সামাজিক বন্ধন নষ্ট করে দিচ্ছে ফেসবুক। মানুষের ভেতরের কিছু সহজাত দূর্বলতাকে পূঁজি করে ফেসবুক মূলতঃ মানুষকে ধীরে ধীরে নিয়ে যাচ্ছে ‘রোবট নিয়ন্ত্রিত’ জীবনের দিকে। আর সস্তা প্রচারের লোভে মানুষ ভূলে যাচ্ছে নিজের মেধা ও সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগানোর কথা।

আত্বসমালোচনা করে তিনি বলেন, এই মাধ্যমটি এক ধরনের মাদক। ব্যবহারকারীদের ফেসবুকে আসক্ত করার জন্য তিনি নিজে প্রচন্ড অপরাধ বোধে ভোগেন। এ গোপন কথাও তিনি প্রকাশ করেছেন যে, মানুষকে ফেসবুকে আসক্ত করার জন্য মানব মনের দূর্বল জায়গা গুলোকে টার্গেট করার সিন্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন ফেসবুকের শীর্ষ কর্মকর্তারা। আর এভাবে ব্যবহারকারীদের ‘লাইক’, ‘কমেন্ট’, শেয়ার’, ‘ছবি’ সহ ইত্যাদির ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হন তারা।

এখন অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, এক সময় সমাজ ব্যবস্থায় মানবীয় বন্ধন গুলো যে ভাবে কাজ করতো, ফেসবুক তা খন্ড-বিখন্ড করে দিয়েছে। ফেসবুক মূলতঃ মাদকের মতো স্বল্প মেয়াদে ব্যবহারকারীদের মনে আনন্দ দিয়ে ‘ফিডব্যাক’ এর ফাঁদে ফেলে দেয়। এখানে ফিডব্যাকের ফাঁদ হলো, কোন লেখা বা মন্তব্য কিংবা ছবি পোষ্ট করার পর ‘লাইক’,‘কমেন্ট’, ‘শেয়ার’, ‘রিয়্যাকশন’ ইত্যাদির জন্য অপেক্ষা করা। এতে করে, ব্যবহারকারীদের সময় নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে মানুষের সৃজনশীলতা। আসলে এ সকল সামাজিক মাধ্যম মানুষকে যেভাবে পরিচালিত করছে, মানুষ সেই ভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। অনেকে এ মাধ্যম ব্যবহার করে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করার ‘কৌশল’ হিসাবে গ্রহণ করছে। যদিও এ জনপ্রিয়তা অনেকাংশেই ভঙ্গুর। এতে করে, সময় ও ব্যক্তি মূল্যায়নের অপরিসীম ক্ষতি হচ্ছে। ফেসবুক তৈরী করছে ‘রিউমার-গবলার’ তথা ‘গুজবখেকো’ জীব হিসেবে। দেরিতে হলেও ফেসবুকের সবোর্চ কর্তাব্যক্তিরা বুঝেছেন, তারা একটি ‘ফ্যাকেনষ্টাইন’ বা ‘দানব’ সৃষ্টি করেছেন।

এতো কিছুর পরেও মোর্দা কথা হলো, সাধারন মানুষকে ফেসবুকের ভালমন্দ দিক সম্পর্কে উপলদ্ধি করতে হবে। পরমানু শক্তির মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও বিপুল শক্তির অধিকারী। এই শক্তিকেও ব্যক্তি পর্যায়ে ইতিবাচক ভাবে কাজে লাগাতে হবে। তা না হলে, মানব জাতির জন্য ফেসবুক অপরীমেয় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই সত্য এবং এই সচেতনতা যত দ্রুত সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে, ততই মঙ্গল।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test