E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কর্ণফুলীতে বিলুপ্তির পথে লৌকজ সংস্কৃতি ও মঞ্চ নাটক 

২০১৯ জানুয়ারি ২১ ১৫:৫৩:০৭
কর্ণফুলীতে বিলুপ্তির পথে লৌকজ সংস্কৃতি ও মঞ্চ নাটক 

জে জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ মঞ্চ নাটক। এক সময় খুবই জনপ্রিয় ছিল চাঁদনী রাতে হাটে বাজারে বসা গ্রাম্য নাটকের। মধ্যরাত যখন কুয়াশায় ডাকা থাকত, তখনও মহল্লায় জমে ওঠতো মঞ্চ নাটক, পালা গান, জারি গান ও পুঁথির আসর। 

সবই যেন এখন অতীত। দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তা নয়। বরং গ্রামে গ্রামে মঞ্চের অভাবে কমে গেছে মঞ্চ নাটক এমনটি ধারণা অনেকের। ফলে গ্রামীণ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য হারাচ্ছে গ্রামের সাধারণ মানুষ। অথচ নাটক শুধু বিনোদন নয়, নাটক বিবেকের কথা বলে। নাটক জীবনের কথা ফুটিয়ে তুলতো।

অনেক দর্শকদের অভিমত এমন বিনোদন সারা দেশের মতো কর্ণফুলী হতেও এসব শিল্প সংস্কৃতি বিলিন হতে বসেছে। মাঝে মধ্যেও এখন আর ও রকম প্রানবন্ত আয়োজন দেখা যায়না।

যদিও গ্রামের মঞ্চ নাটকের বয়স কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমবয়সি। এ দেশে নাটক হয়েছে দুইশ বছরের উপরে। স্বাধীনতার পরপরই গ্রুপ থিয়েটার বা গ্রাম্য নাটক চর্চা শুরু হয়েছে। সিংহভাগ নাটক সামাজিক বিষয়বস্তু নিয়ে নির্মিত হতো।

বাংলার বৈচিত্রে ভরপুর ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালা আর পুরাণ কাহিনী। সেই অনাদিকাল থেকে দেখে আসছি যাত্রা গান। অপূর্ব লীলা নর্তন। যাত্রাদল আসলেই হৈ হৈ, রৈ রৈ পড়ে যেত পাড়া-মহল্লায়। যাত্রা মানেই ফূর্তি, নাটক মানেই আনন্দ, পুঁথি মানেই জীবন কাহিনী। যেখানে যাত্রা, সেখানেই শত শত মানুষ, সেখানেই হুক্কার টানে অফুরান আয়োজন হতো।

শিশু-কিশোর বয়স থেকেই যাত্রা পালা ও নাটক দেখে আসছিল উপজেলার আব্দু মালেক। যাত্রা দলের পেছনে ঘুরেছে কত রাত, কত আনন্দই না উপভোগ করেছিল বলে জানান।

নাটক রিহার্সেল থেকে শুরু করে মঞ্চায়ন পর্যন্ত নাটক পাড়ায় লোক সমাগম লেগেই থাকত, কি যে আনন্দ। আজ তার কিছুই নেই। যেদিন নাটক মঞ্চায়ন হলে মঞ্চ এলাকায় থাকতো লোকে লোকারণ্য। যেন মানুষের ঢল মানুষের বন্যা। আজ সেই গ্রাম্য নাটক আর সেই দর্শক কোথায়? সেই নাটকও নেই সেই দর্শকও নেই।

কেনো যাত্রা নাটক বন্ধ হয়ে গেল? কেনো আজ বিলুপ্তির পথে যাত্রা পালা ও নাটক? এই শিল্পের সাথে যারা জড়িত তারা আজ অর্থাভাবে খেয়ে না খেয়ে ধুকে ধুকে মরছে। আর যারা বেঁচে আছে রোগে আক্রান্ত হয়ে আছে। কেউ এদের দেখার নেই। এদের খোঁজ খবর কেউ নিচ্ছে না। একদিন এদের দেখার জন্য চারপাশে ভিড় জমাতো। যাত্রা বাড়িতে এখন সানাই আর ঘণ্টার ধ্বনি শোনা যাচ্ছে না। কেউ এদের খোঁজ খবরও নিচ্ছে না। প্রকৃতির নিয়মে হারাচ্ছে না অন্য কিছু!

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিকলবাহার ডাক্তার করিম বলেন, জঙ্গীগোষ্ঠী সংস্কতির উপর আঘাত হেনে চলেছে। রমনা বটমূলে ১ বৈশাখে বোমা হামলা, উদীচীর সম্মেলনে বোমা মেরে মানুষ হত্যা, এসব বিভিন্ন কারণে নাটক যাত্রা শিল্পী আজ বিলুপ্তির পথে।

এ থেকে আমাদের উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে তার প্রশাসন শক্তিশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে এ ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতারও প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে গ্রামের নাগরিক সচেতনতারও।

সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জঙ্গীদের মোকাবেলায় এদের দমন করতে হবে। সর্বোপরি শিল্পী কলাকুশলীদের আগ্রহ এবং প্রেরণা থাকতে হবে। তাহলে হয়ত যাত্রা শিল্প আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে।

কলেজ বাজার এলাকার মোহাম্মদ ওসমান হোসাইন বলেন, ‘আমি জীবনে সাতটি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছি। কিন্তু বর্তমানে সামাজিক অবক্ষয়, মূল্যবোধ এবং বিবেক বোধের কারণে গ্রামীণ সংস্কৃতি লোপ পাচ্ছে। কেন না আধুনিক যুগে আমরা বেশি বেশি করে দেশীয় ও নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতি দেখা ও প্রচার বন্ধ করে দিয়েছি।

বিপরীত দিকে আকাশ সংস্কৃতি ও ভারতীয় সিরিয়াল মুখী হয়ে পড়ায় সংসারে অশান্তি বাড়ছে এবং প্রজন্ম তার ইতিহাস হারাচ্ছে।’

(জেজে/এসপি/জানুয়ারি ২১, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test