E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুপারির খোল দিয়ে নান্দনিক তৈজসপত্র তৈরি করছেন লক্ষ্মীপুরের মামুনুর

২০২১ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৪:৫৮:২৩
সুপারির খোল দিয়ে নান্দনিক তৈজসপত্র তৈরি করছেন লক্ষ্মীপুরের মামুনুর

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : ছোটবেলায় সুপারির খোল দিয়ে আমরা গাড়ি বানতাম,সেই গাড়িতে একজন বসতাম,বাকীরা টেনে নিয়ে যেত অনেক দূর এভাবেই পালাক্রমে একজনের পর আরেকজন গাড়িতে চড়ার সাধ মেটাতাম। এছাড়া এ-ই খোল কুড়িয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতেন গ্রামের নারীরা। তবে এবার সুপারির খোল দিয়ে খেলনা গাড়ি ও জ্বালানির পাশাপাশি  এ খোল দিয়েই পরিবেশবান্ধব পন্য তৈরি করা যায় তা দেখিয়ে দিয়েছেন মামুনুর রশিদ নামে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের উদ্যোক্তা। 

তিনি খোল দিয়ে পরিবেশ বান্ধব বাসন, ট্রে ও বাটিসহ নানা রকম তৈজসপত্র তৈরি করছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর শহরের মামুনুর রশিদ। কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়া তৈরি করা পণ্যগুলো ক্রমেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে পুরো জেলা জুড়ে। সম্প্রতি উদ্যোক্তা মামুন তার কারখানায় তৈরি করা কয়েকটি পন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করেন।

উদ্যোক্তা মো. মামুনুর রশিদ রায়পুর এলএম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি, ১৯৮৫ সালে রায়পুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৯১ সালে ঢাকা তেঁজগাও কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। বর্তমানে তিনি এস্যানসিয়াল ড্রাগস এর প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। চাকুরী ছাড়া অন্য কিছু করা যায় কিনা তা নিয়ে পরিবারের সাথে আলোচনা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে স্ত্রীর উৎসাহে ২০১৫ সালে ইউটিউবে দেখে ঝরে যাওয়া সুপারির পাতা (খোল) দিয়ে অসাধারণ পন্য তৈরি করা যায়। এই সূত্র ধরে তিনি সাপ্তাহিক ছুটির দু’দিন গ্রামের বাড়িতে এসে সুপারির খোল খোঁজ করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে তার অনুসারী কয়েকজন যুবক নিয়ে সুপারির খোল সংগ্রহ করেন। এই সুপারির খোল সংগ্রহ করতে গিয়ে তাকে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়,অনেকে তাকে নিয়ে ট্রল শুরু করেন। একসময় যারা তাকে নিয়ে বিভিন্ন বিদ্রুপ করতেন পরে তারাই তার সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পরে তার বাড়ীর পাশে রায়পুর-মীরগঞ্জ সড়কের তুলাতলি নামকস্থানে সুপারির পাতা দিয়ে বিভিন্ন রকমের বাসন তৈরির কারখানা স্থাপন করেন মামুন। পরে তার কারখানার প্রথম তৈরি করা বাসন তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করেন। চলতি বছরে নিউজিল্যান্ড থেকে জেরিক নামে একজন বায়ার এসে পণ্য দেখে সস্তোষ প্রকাশ করেন।

উদ্যোক্তা মামুনুর রশিদ আরো জানান, বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বনভোজন এবং বিভিন্ন স্থানে ভ্রমনের সময় আমরা প্লাস্টিকের তৈরি ওয়ান টাইম প্লেট, বাটি,গ্লাস ব্যবহার করে থাকি, এসব পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে, সুপারি পাতা যাওয়া পাতা দিয়ে শতভাগ পরিবেশ বান্ধব পণ্য শুধু আমার আয়ের উৎস হবে না তার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখবে। এক সময় প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে মানুষ এই পণ্য ব্যবহার করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আর এটি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, সুপারির খোলের বাসনগুলি প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে বিভিন্ন চাইনিজ, রেষ্টুরেন্টসহ বহুবিধ ব্যবহারযোগ্য, পাশাপাশি দেশের বাহিরে ও রপ্তানি করার মত। এই পন্যের উৎপাদন, ব্যবহার এবং বাজারজাত করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

(এস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test