E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝিনাইদহে ভাষা আন্দোলন যেভাবে শুরু হয়েছিল

২০২১ ফেব্রুয়ারি ২০ ১৯:৪১:১২
ঝিনাইদহে ভাষা আন্দোলন যেভাবে শুরু হয়েছিল

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলন নিয়ে। আর এই বিকৃতির কারণ হচ্ছে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ ভাষা সৈনিকদের মৃত্যু। বর্তমান নতুন প্রজন্মের অনেকেই ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ভালোভাবে জানে না। প্রশাসনে আসা কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদরাও ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলনের খণ্ডিত অংশ প্রচার করছে। ভাষা যুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে এখনো অনেকেই জীবতি। কিন্তু বয়স জনিত কারণে তারা ঠিকমতো স্মৃতি চারণ করতে পারছেন না।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন জীবিত ৬ জন ভাষা সৈনিকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পোষ্টার তৈরী করেছে। সেখানে তাদের ছবি শোভা পাচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের এমন একজন জীবিত সৈনিক হচ্ছে বিশিষ্ট আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও চলচিত্র পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মালিতা।

১৯৯৯ সালের ২১ ফেব্রয়ারি তিনি “ভাষা আন্দোলনে ঝিনাইদহ” নামে একটি বই প্রকাশ করেন। বইটিতে অনেক গুরুত্বপুর্ন তথ্য সন্নিবেশন করে তিনি ঝিনাইদহের তৎকালীন রাজনীতিবিদ, তাদের নেতৃত্ব, রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার দালিলিক খোরাক তৈরী করেছেন। যে কেও তার লেখা এই ইতিহাস বিকৃত করতে বা অস্বীকার করতে পারবেন না। ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলন নিয়ে এড. আমীর হোসেন মালিতা তার বইতে উল্লেখ করেছেন, ঝিনাইদহ শহরে একজন কট্টরপন্থি মুসলিমলীগের সমর্থক ছিলেন। তিনি ছিলেন পেশায় চিকিৎসক। তাকে হুগলী ডাক্তার বলে সবাই চিনতেন।

১৯৫২ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে তার মুখ থেকেই তখনকার ছাত্ররা ঝিনাইদহ শহরের কাজীর হোটেলে বসে বা দাড়িয়ে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে খবর জানতে পারেন। কারণ তখন ঝিনাইদহে কোন পত্রিকা আসতো না। কোন পত্রিকায় ভাষা আন্দোলনের খবর ছাপা হতো না। ভারত থেকে একটি পত্রিকা আসতো, তাও আবার ২/৩ দিন পর। রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর বা পাকিস্থানের কোন রেডিও স্টেশন ভাষা আন্দোলনের খবর প্রচার করতো না। তবে ভারতের আকাশবানীতে মাঝেমধ্যে ভাষা আন্দোলনের খবর প্রচার হতো। সে সময় আওয়ামী মুসলিমলীগের নেতা সিরাজুল ইসলাম পচা মিয়া ও ডাঃ কে আহম্মেদের বাসায় রেডিও শোনার সুবিধা পেতেন তরুন ছাত্র নেতারা। পাকিস্তানপন্থি সেই হুগলী ডাক্তার গল্পেরছলে একদিন বলে ফেলেন, “ছি ছি ছি ঢাকায় মুসলিম ছাত্রদের জবানে উর্দুর বদলে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই বলে আন্দোলন দেশটা রসাতলে নিয়ে যাবে”। সেখানে দাড়িয়ে থাকা তখনকার তরুন ছাত্রনেতা পরবর্তীতে উজির আলী হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষক গোলজার হোসেন ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার জাহিদ ওরফে টিপু হুগলী ডাক্তারের উক্তিটি শোনেন। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের কোন জ্ঞান তাদের ছিল না। তার সবেমাত্র হাইস্কুলের ছাত্র।

৫২ সালের ফেব্রয়ারি মাসের ২/৩ তারিখে তৎকালীন ঢাকা কলেজের ছাত্র সদর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের মরহুম জহর আলী মিয়ার মেজো ছেলে এনামুল হক কোটন বাড়িতে আসেন। মুলত তার কাছ থেকেই ভাষা আন্দোলনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। কোটন মিয়া সে সময় ঢাকা থেকে হ্যান্ডবিল, পোষ্টার, প্যাম্পপ্লেট ও গনসাক্ষরের জন্য কিছু ফরম নিয়ে আসেন। সেগুলো গ্রহন করেন নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের আনোয়ার জাহিদ টিপু, ভুটিয়ারগাতি গ্রামের গোলজার হোসেন, দরিগোবিন্দপুর গ্রামের সাব্দার হোসেন সাবু ও খাজুরা গ্রামের হাবিবুর রহমান প্রমুখ ছাত্রনেতারা। কোটন মিয়া ঝিনাইদহের তরুন ছাত্রনেতাদের হাতে প্রচারপত্র ধরিয়ে দিয়ে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে গনসাক্ষর ও করণীয় পরামর্শ দিয়ে চলে যান। কোটন মিয়া হচ্ছে ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলনের অগ্রপথিক জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার ভাতিজা।

তিনি চাচা জাহিদ হোসেন মুসা মিয়াকে যশোরে খবর দেওয়ার ব্যবস্থাও করে যান। জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া তখন পুর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের যশোর জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক ও কলেজ ছাত্র। এদিকে আন্দোলনমুখী ছাত্ররা সে সময় জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার ঝিনাইদহে আগমনের প্রত্যাশায় দিনগুনতে থাকেন। মুসা মিয়া না আসায় কোন কাজই ঠিকমেতা এগুচ্ছিলো না। না মিছিল মিটিং না গনস্বাক্ষর আদায় ও পোস্টারিংয়ের কাজ। মুসা মিয়া ঝিনাইদহে আসার পর তার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ লাগে ঝিনাইদহে।

ওই সময় ঝিনাইদহ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুরারী মোহন ঘোষাল সিনিয়র সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফার মাধ্যমে স্থানীয় ছাত্রনেতাদের গোপনে খবর দেন বাংলা ভাষার দাবীতে ২১ ফেব্রয়ারি সারা দেশে হরতাল ডাকা হয়েছে। আন্দোলনমুখী ছাত্ররা অসীম সাহস বুকে নিয়ে দিনক্ষন গুনতে থাকেন। কলেজ ছাত্র মুসা মিয়া আগেই সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি কমিটি গঠন করে দেন। সেই কমিটির সভাপতি হন গোলজার হোসেন আর সাধারণ সম্পাদক হন ১০ম শ্রেনীর ছাত্র পরবর্তীতে সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার জাহিদ। কমিটিতে ডাঃ আব্দুল লতিফ ও আমীর হোসেন মালিতাও ছিলেন। মালিতাকে প্রচার সম্পাদক করা হয়। কমিটি গঠন ও ২১ ফেব্রয়ারির হরতাল সামনে করে উত্তাল হয় ঝিনাইদহ। এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সাহস যোগায় ঝিনাইদহ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুরারী মোহন ঘোষাল, সহকারী গোলাম মোস্তফা, শ্রীপন্নগভুষন মজুমদার, মকবুল হোসেন দেবেন্দ্রনাথ পন্ডিত, অরাজনৈতিক ব্যক্তি আলাউদ্দীন ওরফে আলা মিয়া, নঈম উদ্দীন আহম্মেদ, কবিরাজ নৃপেন্দ্র নাথ সেন, দ্বারক নাথ পন্ডিত, বাবু দেবেনগুপ্তসহ অনেকেই।

২১ ফেব্রয়ারি হরতালের খবর ঝিনাইদহের সব ছাত্রছাত্রীরা জেনে গেলেও কি ভাবে হরতাল হয় বা হরতাল কি ভাবে পালন করতে হয় তা কখনো তারা দেখেন নি। এ ভাবে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্তিতি সৃষ্টি হলো। ২১ ফেব্রয়ারির হরতাল সামনে রেখে স্কুলের টিফিনের পর ঝিনাইদহ শহরে কাঞ্চিলালের আম বাগানে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়–য়া শিক্ষাথীদের নিয়ে গোপনে বৈঠক ডাকা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন গোলজার হোসেন মিয়া ও পরিচালনা করেন আনোয়ার জাহিদ টিপু। হারতালের প্রেক্ষপটে ঢাকায় কিভাবে কমিটি হয়েছে, কি কি কর্মসুচি ইত্যাদীর কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় ছাত্রনেতা এনামুল হক কোটনের অনুপস্থিতিতে তাকেই সভাপতি ও আনোয়ার জাহিদ টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে আন্দোলনের একটি রুপরেখা তৈরী করা হয়।

সেদিনের ওই ভাষা আন্দোলনের কমিটিতে কংশি গ্রামের ময়েনউদ্দীন, দরিগোবিন্দপুর গ্রামের সবদার হোসেন, গোলজার হোসেন, হাবিবুর রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম বুলু, শিকারপুরের আনোয়ারুল কাদির লড্ডু, আব্দুল লতিফ, আনোয়ারুল ইসলাম বাটুল, আমীর হোসেন মালিতা, বাসুদেব বিশ্বাস, পবহাটী গ্রামের জবেদ আলী সরদার, আরাপপুরের পবিত্র মিত্র, নুরুল ইসলাম খান হায়দার, বড়গ্রামের শফিউদ্দীন, পুর্ণেন্দু রায় চৌধুরী খোকন প্রমুখরা নেতা নির্বাচিত হন।

তবে বৈঠকে অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে মিজানুর রহমান মিজু ও তার ভাই শহীদুর রহমান, কাজী আকতারুল ইসলাম মধু, আব্দুর রউফ, আরাপপুরের জালাল উদ্দীন আহম্মেদ, সৈয়দ আলী, রবিউল ইসলাম রবি, নির্মল কুন্ডু, আব্দুর রাজ্জাক, সুরাটের আবুল হোসেন, শিকারপুরের আসাদুর রহমান মতি, কামারকুন্ডু গ্রামের শাহাদৎ হোসেন, ঝন্টু, ভগবাননগরের দবির উদ্দীন আহম্মেদ, কুন্টি জোয়ারদার, খলিলুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, পুটিয়া গ্রামের আসাদুর রহমান ওরফে আলী ও তারসহপাঠী কালী, এমদাদুল হক কুন্টি, নন্দ দুলাল সাহা, গোরাপদ সাহা, মকবুল হোসেন, পরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, নিতাই পদ, তেতুলবাড়িয়ার আমজাদ হোসেন, চুন্নু, সমশপুর গ্রামের ছোট ঝন্টু, সুখদেব বিশ্বাস, দিলিপ কুমার, মুরারী মোহন ঘোষালের দুই ছেলে অবনী ও কেষ্ট, উদয়পুর গ্রামের আবু বকর, অমলেন্দু সরকার, নিতাই পদ স্বর্ণকার, আড়ুয়াডাঙ্গা গ্রামের আহাজার বিশ্বাসের ছেলে ঠান্ডু, সুশীল ওরফে ঝড়ো, দুলাল, আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া, শিকারপুরের আশাফৎ জোয়ারদার, পুটিয়া গ্রামের আহসান উল্লাহ, ষাটবাড়িয়া গ্রামের অজয় দাস, ব্যাপারীপাড়ার মরহুম আব্বাস উদ্দীন (রহঃ) ও তার ভাই আব্দুস সাত্তার, ডাকাতিয়া গ্রামের গুরুপদ বিশ্বাস, চাকলাপাড়ার আজিজুর রহমান, বেজিমারা গ্রামের আইয়ুব হোসেন, দোগাছির আমজাদ হোসেন, একই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মধু, বড়কামারকুন্ডু গ্রামের ইছাহাক আলী, ঝিনাইদহ শহরের সুবোধ মিত্র, নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম দুলাল, বড়কামারকুন্ডু গ্রামের আখতারুজ্জামান, ভুটিয়ারগাতি গ্রামের নওশের আলী জোয়ারদার, একই গ্রামের মোছা হেমো, কেমো, হাসিয়া খাতুন, আয়েশা খাতুন, পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে মসিউজ্জামান মসি, আমিনুল ইসলাম, কালিঞ্জ দাস, শৈলকুপার বড়দা গ্রামের গিয়াস উদ্দীন, ভগবাননগরের সিরাজুল ইসলাম, এক পশু চিকিৎসকরে কন্যা, সুরাট গ্রামের আবুল হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাক, ব্যাপারীপাগার আব্দুল মতলেব, ছামসুর রহমান, নাছির উদ্দীন ওরফে মহি, আব্দুস শুকুর, রেজাউল করিম বেনু ডাক্তার, কল্যানপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ, আব্দুল মতলেব, কাস্টসাগরা গ্রামের লতাফৎ হোসেন, ছোটকামারকুন্ডু গ্রামের ডাঃ শাহাদৎ হোসেন, ইস্তেগাপুরের আকবর আলী, আর্যনারায়নপুর গ্রামের আবেদ আলী ও পানামী গ্রামের সুধির কুমার বৈরাগী প্রমুখ ছাত্ররা।

ওই সভায় দোকানপাট, রাস্তা, বাজার ও যানবাহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন করে নেন। আসে সেই সন্ধিক্ষন। ২১শে ফেব্রয়ারি কঠোরভাবে হরতাল পালিত হয় ঝিনাইদহে। “এক মিনিটের নাই ভরসা সাঙ্গ হবে রং তামাশা” এই জনপ্রিয় গানের শিল্পী ফিরোজ সাঁই তখন দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন। তার পিতা ডাঃ আব্দুল ওয়াহেদ ছিলেন ঝিনাইদহ মহাকুমার একজন চিকিৎসক। তিনিও মিছিলে গিয়েছিলেন তার পিতার অনুপ্রেরণায়। এছাড়া ডাঃ কে আহম্মেদের শিশু সন্তান মঞ্জুর আহম্মেদ ও লতাফৎ মিয়ার শিশু পুত্র শহিদুল আলম বাচ্চুও বড়দের সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন। তৎকালীন কাঞ্চননগর প্রাইমারীর সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক শ্রী ধিরেন্দ্র নাথ সরকার ওই স্কুলের কচিকাচা শিক্ষাথীদের নিয়ে মিছিলে যোগদান করেন। ডাঃ কে আহম্মেদের স্ত্রী ও বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা খাতুন ভাষা আন্দোলনে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন।

তিনি সে সময়কার ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের মেয়েকে ২১ ফেব্রয়ারির মিছিলে আনতে সক্ষম হন। ১৯ ফেব্রয়ারি রাতে ঝিনাইদহ শহরে হরতালের সমর্থনে পোষ্টারিং করা হয়। পরদিন সকালে কে বা কারা তুলে ফেলে। ২০ তারিখে আব্দুল লতিফ, গোলজার হোসেন ও নুরুল ইসলাম খান হায়দার অনেকটা জেদ ধরে বাটুল, আমীর হোসেন মালিতা ও পবিত্র মিত্রকে আবারো পোস্টারিং করতে পাঠান। গমের আঠার সাথে তুতে মিশিয়ে আঠা তৈরী করেন শিবপদ বৈরাগী। আর এসব দেখভাল করেন সাবদার হোসেন সাবু ও আনোয়ার জাহিদ টিপু।

সে দিন মানুষকে ভাষা আন্দোলনে এ ভাবেই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। হরতাল শেষে ২১ শে ফেব্রয়ারি আওয়ামী মুসলীমলীগ নেতা নজমুল হক সিনেমা হল বন্ধ করে আনোয়ার জাহিদকে বক্তৃতা দিতে তুলে দেন। সেদিন টিনের চোঙ্গা হাতে ১৯/২০ মিনিট বক্তৃতা করেন টিপু। সিনেমা দেখতে আসা দর্শকরা সেদিন আনোয়ার জাহিদের বক্তৃতা শুনেছিলেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো। ২১শে ফেব্রয়ারির হরতালে ঢাকায় পৈশাচিক ভাবে গুলি করে হত্যার খবর ২২ তারিখেও ঝিনাইদহে এসে পৌছায়নি।

সন্ধার পরে আকাশবানী কলকাতার খবরে এই হত্যার খবর ঝিনাইদহে ছড়িয়ে পড়লে ২৩ ফেব্রয়ারি ভোরবেলা তেকেই ঝিনাইদহ শহরের বর্তমান বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। বাঁশ দিয়ে ছাত্ররা রাস্তায় ব্যরিকেড সৃষ্টি করে। পুলিশ টহল থাকলেও তারা কোন বাধা দেয়নি। শহরের মানুষ দলমত নির্বিশেষে কর্মসুচিতে অংশ গ্রহন করেন।

ব্যারিকেড দেখে তৎকালীন ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল মান্নান দাড়িয়ে ছাত্রদের ডেকে বলেন “আমি খাস কামরায় গিয়ে লিখে রেখে আসবো কেও কোর্টে আসে নি”। আওয়ামী মসুলিমলীগের নেতারা সর্বক্ষন ছাত্রদের এই আন্দোলন মনিটরিং করতেন। এ ভাবেই ঝিনাইদহে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচিত হয় (এড আমীর হোসেন মালিতার গ্রন্থ অবলম্বনে)।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test