E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন গৌরীপুর শহর 

২০২১ এপ্রিল ২৮ ১৭:৫০:০৯
কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন গৌরীপুর শহর 

শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : করোনার বৈষ্যিক মহামারিতে মানুষ গৃহবন্দী হওয়ায় প্রকৃতি তার আপন মহিমায় সেজেছে। চৈতালি হাওয়ার ঝাপটায় পাতা ঝরে যাওয়া কৃষ্ণচূড়ার শাখা গ্রীষ্মের শুরুতেই অজস্র রঙ্গীন ফুলে ফুলে ভরে ওঠেছে। প্রখর রৌদ্রদীপ্তে এই বিপুল বর্ণবৈভব চোখে প্রায় ঘোর লাগিয়ে দেয়। দিনে দিনে গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের চারপাশ দিয়ে উদ্গত সবুজ পাতারা ফুলগুলোকে যেন সযতনে রচিত স্তবকে পরিণত করে তোলেছে। চলতি পথে আপনা থেকেই পথিকের দৃষ্টি চলে যায় সেদিকে। অনাবিল আনন্দের অনুভূতি মনকে প্রশান্ত করে।

যার আভা পথচারী থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী মনে দোলা দেয়। এই উপমহাদেশের কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী কিশোর কুমার গেয়েছেন, ‘এই সেই কৃষ্ণচূড়া যার তলে দাঁড়িয়ে হাতে হাত/চোখে চোখ রেখে কথা যেতো হারিয়ে.../আশা ছিলো ভালোবাসা ছিলো...। এই গানটি যারা শুনেছেন বা মনে রেখেছেন এমন একজনকেও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না যে কৃষ্ণচূড়াকে দেখে অন্তত এই দু’লাইন গুণ গুণ করেও গাননি।

গ্রামের মেঠোপথ, সবুজ প্রান্তর, কালো দীঘির জল ছাপিয়ে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরকে রাঙ্গিয়ে তুলেছে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ। পৌর শহরের উত্তর বাজার নূরুল আমিন খান সড়ক, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, বড় মসজিদ, পুরাতন সোনালী ব্যাংকের কৃষ্ণচূড়া চত্বর, গৌরীপুর থানা কম্পাউন্ড, গৌরীপুর সরকারী কলেজ, খেলার মাঠ, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মৎস্য খামার, রাজেন্দ্র কিশোর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন আবাসিক ভবনে, মধ্যবাজার, কলতাপাড়া বাজার, ডেল্টা মিল এলাকা, নাপ্তের আলগী বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়ার লাল, হালকা লাল, হলদে আভা ছড়িয়ে প্রকৃতিকে করেছে নয়নাভিরাম। যা শহরের নাগরিকদের হৃদয়-মন কেড়ে নিয়েছে। প্রতিদিনই সকাল-বিকেলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, যুবক-যুবতী এর সৌন্দর্য উপভোগে মেতে উঠে।

কেউ কেউ আবার নাগরিক কবি শামছুর রহমানের সেই বিখ্যাত কবিতা- আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে/কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা/একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়- ফুল নয়, ওরা/শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।/একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং...। কবির মতো এখানে অনেকেই মনে করে থাকেন কৃষ্ণচূড়া বাঙালির চেতনারই রঙ।

কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। এটি ফাবাসিয় পরিবারের অন্তর্গত। পাকিস্তান, ভারতে এই ফুলকে গুলমোহর নামেও ডাকা হয়। এর আদি নিবাস আফ্রিকার মাদাগাস্কার। ১৮২৪ সালে সেখান থেকে প্রথম মুরিটাস, পরে ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার ঘটে। এখন জন্মে আমেরিকা, ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে। ধারণা করা হয়, কৃষ্ণচূড়া ভারত উপমহাদেশে এসেছে তিন থেকে চারশ’ বছর আগে। তবে ফুলের নাম কী করে কৃষ্ণচূড়া হলো সে সম্পর্কে ধূম্রজাল রয়েছে।

গৌরীপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা মোঃ লুৎফুর রহমান জানান, কৃষ্ণচূড়া শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ, পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে, জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ও মাটি ক্ষয়রোধ করে থাকে।

(এস/এসপি/এপ্রিল ২৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test