E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজবাড়ীর গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত

২০২১ নভেম্বর ১৮ ১৯:৩৯:২৮
রাজবাড়ীর গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত

এ কে আজাদ, রাজবাড়ী : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের পদ্মা ও গড়াই নদীর তীরবর্তী জেলা রাজবাড়ী। এই জেলার ঐতিহ্য খেজুরের গুড়ের কদর রয়েছে দেশ জুড়ে। এখান থেকে প্রবাসীরা জীবিকার তাগিদে বিদেশ যাবার সময়ও এই গুড় নিয়ে যায়।

উত্তর অঞ্চলের জেলা গুলোতে শীতের আভাস অনেক আগেই দিতে শুরু করেছে। তবে কিছুটা বিলম্বিত হলেও রাজবাড়ীতে ইতিমধ্যে শীতের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস আহরণের জন্য জেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গাছিরা গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন।

আগের মতো আর দেখা মেলে না দিগন্ত জোড়া মাঠ কিংবা সড়কের দুই পাশে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ।

একটা সময় ছিলো শীত মানেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সুস্বাদু পানীয় খেজুর গাছের রস পান করা। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে এই সুস্বাদু খেজুর গাছের রস পানের মজাই আলাদা।

এখন আর তেমন খেজুর গাছ না পাওয়া গেলেও যা আছে তার জন্য গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, জেলায় মোট ৮০ হাজার ৮৩৯ টি খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ৪৫০টি গাছ, দাকালুখালি উপজেলায় ১৭ হাজার ২০০টি গাছ, পাংশা উপজেলায় ২১ হাজার ১২৭টি গাছ, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৯ হাজার ৫১১ ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ৮ হাজার ৭১২টি খেজুর গাছ রয়েছে। যা থেকে এ বছর ০.৯০ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন গুড় উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

শীত মৌসুম এলেই সর্বত্র শীত উদযাপনের নতুন আয়োজন শুরু হয়। খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এ অঞ্চলের গাছিরা। তাদের মুখে ফুটে ওঠে রসালো হাসি। শীতের দিন মানেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস ও নলেন গুড়ের ম-ম গন্ধ। শীতের সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটা তৃপ্তিকর তা বলে বোঝানো যায় না। আর খেজুর রসের পিঠা এবং পায়েসতো খুবই মজাদার। এ কারণে শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রসের ক্ষির, পায়েস ও পিঠে খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।

তথ্য সংগ্রহ কালে স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছি। আর মাত্র কয়েক দিন পরই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হবে। রস থেকে গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। হেমন্তের প্রথমে বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করবে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি ও গুড়। অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছের কদর এখন অনেক বেশি।

জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের ঘিকমলা গ্রামের খেজুর রস সংগ্রহকারী (গাছি) সদর মল্লিক বলেন, এখন আর তেমন খেজুর গাছ নাই। একটা সময় ছিলো যখন আমি প্রতিদিন ১০০ হাড়ি রস সংগ্রহ করতাম। এখন সেটা ১০ এর কোঠায় নেমে এসেছে। এছাড়াও খেজুর গুড়ের তেমন দাম পাওয়া যায় না।যার কারণে খেজুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে ২ নাম্বার গুড় তৈরি করছে অনেকই।

অন্য আর এক কৃষক আব্দুর রশিদ মন্ডল (রোসে) বলেন, অত্র জেলা জুড়ে আমার তৈরি খেজুরের গুড়ের সুনাম রয়েছে। আমি অরজিনাল খেজুরের রস দিয়ে গুড়, পাটালি তৈরি করি। তবে এখন বাজারে ভেজাল গুড় ও পাটালির জন্য আমাদের টা নিতে চায় না। কারণ ওরা কম দামে বিক্রি করে। একটা সময় ছিলো যখন শীত আসলেই মানুষ পিঠা তৈরির জন্য আমার কাছে গুড় ও পাটালি বায়না দিয়ে যেতো, এখন তেমন আর আসে না।

কয়েক জন স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিদিন ইটভাটায় জ্বালানির কাজে নিধন হচ্ছে এলাকার শত শত খেজুর গাছ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরপরেও আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

শীতের সকাল মানেই গ্রাম অঞ্চলে রাস্তা গুলোতে কাচা রসের জালানো ঘ্রাণ। এখন অবশ্য সে কথা নতুন প্রজন্মের কাছে গল্প।

(একেএ/এএস/নভেম্বর ১৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test