E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালের বিবর্তণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি

২০২২ আগস্ট ০৬ ১৭:৩৮:১৫
কালের বিবর্তণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি

নওগাঁ প্রতিনিধি : “ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে। পথে ঘাটে আর এমন গান শোনা যায়না। গরুর গাড়ি আর মোষের গাড়ি চালাতে গিয়ে গাড়িয়ালরা গলা ছেড়ে এমন গান গাইতো আপন মনে। দুই যুগ আগেও গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে কল্পনাও করা যেত না। বিয়ে বাড়ি বা মালামাল পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন।

গরুর গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। আর তাই চালককে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়েছে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা ‘আস্তে চালাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিয়া নেই মুই দয়াল বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল’ এ রকম যুগান্তকারী সব ভাওয়াইয়া গান। তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। বর্তমান যুগ হচ্ছে যান্ত্রিক যুগ। মৎস্য ও শস্যভান্ডার খ্যাত উত্তরের নওগাঁ জেলায় এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল গ্রামবাংলার জনপ্রিয় এই ঐতিহ্যবাহি গরুর গাড়ি আজ বিলুপ্তির পথে। নতুন নতুন প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটছে। পক্ষান্তরে হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের এই ঐতিহ্যগুলো।

জানা গেছে, গরুর গাড়ির ইতিহাস সু-প্রাচীন। খ্রিষ্টজন্মের ১৫০০-১৬০০ বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল। যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে। গ্রাম বাংলায় এ ঐতিহ্য আজ তা বিলুপ্তির পথে। এক সময় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পল্লী এলাকার জনপ্রিয় বাহন ছিল গরুর গাড়ি। বিশেষ করে এই জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের জনপ্রিয় বাহন ছিল গরুর গাড়ি। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই বাহন। মাঝে মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। সে কারণে শহরের ছেলে মেয়েরা দূরের কথা বর্তমানে গ্রামের ছেলে মেয়েরাও গরুর গাড়ি শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। এমনকি অনেক শহুরে শিশু গরুর গাড়ি দেখলে বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করে গরুর গাড়ি সম্পর্কে।

গরুর গাড়ি দুই চাকা বিশিষ্ট। গরু বা বলদে টানা এক প্রকার বিশেষ যান। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। আর পেছনে বসেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পেছন দিকে। বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল ব্যাপক। মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি।

মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে এতে তেমন কোনো দুর্ঘটনারও আশংকা থাকে না। ঠিক একই রকম একটু বড় আকারের গাড়িতে মোষ জুড়ে দিয়ে চালানো হতো মোষের গাড়ি। গরু বা মোষের গাড়ি আর চোখে পড়েনা। অথচ যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুর না মোষের গাড়ির প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গর্ভে।

(বিএস/এসপি/আগস্ট ০৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test