E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেশে তালাকের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার ছাড়িয়ে

২০১৪ অক্টোবর ১৫ ১৮:৩৯:০৩
দেশে তালাকের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার ছাড়িয়ে

বিশেষ প্রতিবেদক : নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছিল হালিমা খাতুন লিপি এবং রিয়াজুল আলম। প্রথম দিকে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সংসারে শুরু হয় অশান্তি। এইভাবেই হালিমা খাতুন মানবাধিকার সংস্থায় দেওয়া  অভিযোগ পত্রে লিখেছিল।

বর্তমানে বাংলাদেশে বেড়ে গেছে তালাকের সংখ্যা। এর কারনগুলোও হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন। শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সবার কাছেই এখন তালাক হয়ে দাঁড়িয়েছে ছেলে-খেলা। আর এই তালাকের বিভিন্ন কেসগুলো হস্তান্তর করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে রয়েছে আইন ও শালিস কেন্দ্র, অপরাজয়, মহিলা ও নারী পরিশদ, মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।


মানবাধিকার সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এই বছর বাংলাদেশে তালাকের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে। এইসকল সংগঠনের সাথে কথা বলে উত্তরাধিকার৭১ নিউজ জানতে পারে প্রতিদিনই তাদের কাছে আসছে তালাকের কেস। তারা এই কেসগুলোর ফাইল প্রতি মাসে খুলে। প্রতি মাসেই প্রতিটি সংগঠন ৫-৬ টি তালাকের ফাইল খোলে।

উত্তরাধিকার৭১ নিউজ এই সকল সংগঠন থেকে বেশ কিছু কেস স্টাডি করে। এরই একটি হলো হালিমা খাতুন এবং রিয়াজুল আলমের তালাকের ফাইল।

অভিযোগে ছিল যৌতুকের সূত্র ধরেই রিয়াজুল আলম তালাক দেয় হালিমা খাতুনকে। কিন্তু সংগঠনটি রিয়াজুল আলমের সাথে কথা বলে জানতে পারে, রিয়াজুলের মা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারেনি হালিমাকে। প্রতিদিনই তার মা এবং স্ত্রীর মধ্যে বেধে থাকে দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব আর মেনে নিতে না পেরেই তালাকের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

আরেকটি ব্যাতিক্রম ধর্মী তালাকের কেস নাজমা ইয়াসিন এবং আয়ুব আলীর। এই কেসটিতে দেখা গেছে নাজমা ইয়াসমিন তালাক দিয়েছে আয়ূব আলীকে। অভিযোগে ছিল আয়ূব বিনা কারণে সন্দেহ করে নাজমাকে। তাছাড়া যৌতুকের জন্য আয়ূব বিভিন্ন সময়েই মানসিক ও শারীরিক নির্যানত করতো নাজমাকে। এই নির্যাতন আর সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিল না বিধায়ই তালাকের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে নাজমাকে। কিন্তু সংগঠনটি আয়ূবের সাথে কথা বললে আয়ূব তাদের জানায় নাজমার অন্য ছেলের সাথে অবৈধ সর্ম্পক ছিল। এই নিয়েই মূলত তাদের মধ্যে সবসময় গন্ডগোল হতো।

এই কেসগুলো স্টাডি করতে গিয়ে উত্তরাধিকার৭১ নিউজ সন্ধান পায় নতুন ধর্মী এক তালাকের। তার নাম খোলা তালাক। এই ধরনের তালাক স্বামী এবং স্ত্রী দুইজনের সমোঝতাতেই হয়ে থাকে। যেমন হয়েছে যাত্রাবাড়িতে বসবাসরত শামীম আরা এবং নূরুল ইসলামের।

এছাড়াও অন্য সকল তালাকের কেস স্টাডি করে দেখা যায় এই তালাকের কারনগুলোও বেশ মজার। বর্তমানে তারাকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারও সাথে অবৈধ সর্ম্পক। এছাড়াও রয়েছে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য, মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন । তার চেয়ে বড় একটি ব্যাপার হচ্ছে স্বাধীনতা। তালাক নিতে আসা অনেকেরই কথা নিজেদের স্বাধীনতা পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্যই এই তালাকের সিদ্ধান্ত নেওয়া।

তালাক নেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য বর্তমানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কার ইচ্ছা বেশী পাওয়া যাচ্ছে এই সর্ম্পকে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রোজেক্ট অফিসার এ্যাড.সালমা সুলতানা উত্তরাধিকার৭১ নিউজকে জানান, আমি দেখছি নারীদের চেয়ে পুরুষেরাই বিভিন্ন সূত্র সৃষ্টি করে তালাকের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমার দেখা বেশীর ভাগ নারীই চায় তাদের সংসারটি টিকিয়ে রাখতে। যদি নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবোঝিও হয়ে থাকে তবে সমোঝোতায় আসতে। কিন্তু পুরুষেরা এই বিষয়টিতে বেশ অনাগ্রহী।

ঢাবির সোসিওলোজির প্রফেসর ডা.মোকাদ্দেম হোসেনকে এই বিষয়ে জিঞ্জাসা করলে তিনি উত্তরাধিকার৭১ নিউজকে বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজে আধুনিকায়নের ছোঁয়া বোধ হয় একটু বেশীই লেগে গিয়েছে। আর এই আধুনিকায়নের জন্যই বেড়ে গেছে তালাকের সংখ্যা।

তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে সমাজে প্রেমের সর্ম্পকের পরে যেই বিবাহগুলো সম্পন্ন হচ্ছে তা বেশীর ভাগই টিকে থাকছে না। বিয়ের পরে তাদের মধ্যে মনমালিন্য লেগেই থাকছে।

নিম্নবর্তী পরিবারে বেশীর ভাগই বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যৌতুক প্রথা। আর উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যরা বেশী স্বাধীনতা কামী। নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্যই তারা মূলত বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

(এমএম/এএস/অক্টোবর ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test