E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাবা-মায়ের তালাকের খেশারত দিচ্ছে সন্তান

২০১৪ অক্টোবর ১৬ ১৪:২১:৫৬
বাবা-মায়ের তালাকের খেশারত দিচ্ছে সন্তান

বিশেষ প্রতিবেদক : জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে এই তিনটিই ঠিক করেন বিধাতা। এই ভাষ্যটা হয়তোবা মানধাত্যার আমলের হয়ে গেছে। কেননা এখন এই সব কিছুই ঠিক করার চেষ্টা করছে সৃষ্টির জীব অর্থাৎ মানুষ নিজেই।

বিশেষ করে বিয়ে নামক জিনিসটিতো তারা একেবারেই নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়েছে। অবশ্য এদিক থেকে দেখতে গেলে বিয়ে মানে সংসার গড়ার চেয়ে নিজেদের হাতের মুঠোয় করে নিয়েছে সংসার ভাঙ্গার কাজটিকে। অর্থাৎ তালাকের কাজটি। বর্তমানে তালাক দেওয়াকে একটি ফ্যাশন বানিয়ে নিয়েছে আধুনিক ভদ্র সমাজ। আর এই ভদ্র সমাজের ভদ্রতা নামক অভদ্রতার খেশারত দিতে হচ্ছে এই সংসারের মাঝে আসা নিস্পাপ সন্তানটিকে।


ভাঙ্গা গড়ার মাঝে বেঁচে থাকা এমনই কিছু পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছিল উত্তরাধিকার৭১ নিউজ। তারই একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।


মা কাকে বলে জানে না মাহমুদ

বিমান বাহিনীতে কর্মরত মাহমুদ। মা কাকে বলে তা সে জানে। কেবল জানে মা জিনিসটি খুবই খারাপ। শুধু মা নয় মেয়ে মানেই খারাপ। আর তার এই ধারনার সৃষ্টি যারা করেছেন তারা হলেন মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন দুইজন। একজন তার মা এবং অন্যজন তার স্ত্রী।


মাহমুদ যখন খুব ছোট তখন তার মা চলে যায় সিঙ্গাপুরে তাকে এবং তার বাবাকে রেখে। তাও আবার অন্য একজনের হাত ধরে। কারন, একটিই যেই লোকটির সাথে তার মা চলে গেছে তার অনেক টাকা। বাবার মুখে এমনটিই শুনেছে সে।


বহুবছর পরে একটি মেয়ের সন্ধান পেয়েছিল মাহমুদ। যাকে সে ভালোবেসেছিল মন দিয়ে। কিন্তু মেয়েটি হয়তো তাকে ভালোবাসতো না। অথবা ভালোবাসলেও সমাজ আর পরিবারের ভয়ে মাহামুদের কাছে আসতে পারেনি। সেই মেয়েটির ওপর রাগ করে বন্ধুর বোনকে বিয়ে করেছিল মাহমুদ। কিন্তু সংসার টেকাতে পারেনি।


তার বিয়ে ভাঙ্গার কারণ জানতে চাইলে মাহমুদ বলেন, আমি মধ্যবৃত্ত পরিবারের ছেলে। আমার চিন্তা ভাবনাও মধ্যবিত্ত ঘরনার। আর এটাই ছিল আমার দোষ। ও হাই সোসাইটিতে মানুষ হয়েছে। চিন্তা ভাবনাও সেরকম। তার কাছে মধ্যরাতে নাইট ক্লাব থেকে বাড়িতে ফেরা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। বিয়ের পরের দিন থেকেই চলছে এই অবস্থা। মেনে নিতে পারিনি তাই ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছি। এখন আমার জীবনের আর কোনো সাধ আল্লাদ বলতে কিছু নেই। যার কাছে মানুষ হয়েছি, অর্থাৎ আমার বাবা তিনিও তো চলে গেছেন পরপারে। এখন কেবল সময় গুনছি আমার পরপারের ডাক কবে আসবে।


মিডিয়াতে হাক ডাক থাকলেও নিজের ঘরে কোনো উচ্ছাসতা নেই ফয়সালের (ছদ্মনাম)
মিডিয়াতে বেশ হাক ডাক রয়েছে তার। কিন্তু হাক ডাক নেই ব্যাক্তি জীবনেই। ছোট বেলা থেকে মাকে দেখেনি সে। মা কি জিনিস তা আমি জানি না।


তবে কিছু বড় হওয়ার পর বাবাকে দেখেছি আমাদের বাড়িতে তিনি একজন মহিলাকে নিয়ে এসেছেন। বাড়ির আশেপাশে সবাই বলতো তিনি নাকি আমার সৎমা। সেই থেকে একা আমি আরও একা হয়ে গেলাম। আর একার সঙ্গী হিসাবে বেঁছে নিলাম বিভিন্ন মাদক দ্রব্যকে।


পৃথিবীতে ছোট একটি বোন ছাড়া আমার আর কেউ নেই। ফাজিলটা সারাক্ষন আমার সাথে চিল্লাচিল্লি করতে থাকে। অবশ্য ওর চিল্লাচিল্লিটা আমার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। না শুনলেও ভালো লাগে না।


অদ্ভুদ আরেকটি কথা জানা গেল ফয়সালের কাছ থেকে। এতোক্ষন ধরে সে তার যে বোনের কথা বলে যাচ্ছিল সে তার আপন বোন নয়। আপন তো দূরে থাক তার সেই বোনটির সাথে তার নেই কোনো রক্তের সর্ম্পক।


এই ব্যাপারে ফয়সাল বলেন, রক্তের সর্ম্পকে কি হয়? আমি আত্মার সর্ম্পকে বিশ্বাসী। আর ওর সাথে আমার আত্মার সর্ম্পক। আসলে পিচ্চি না থাকলে কবে যে চলে যেতাম এই শহর ছেড়ে। ঐ পাগলীটার জন্যই কোথাও যেতে পারি না। আমি অন্য কোথাও চলে যাব এই কথা শুনলেই ভ্যা করে কেঁদে দেয়। বলতে বলতে ফয়সালের মুখের মা না থাকার বেদনা ঘুঁচে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই নিজেকে একা মনে হয় সৈকতের
পুরান ঢাকার বঙ্গবাজারে বসবাসরত সৈকত, বাবার কাছে মানুষ। বাবার কাছে মানুষ হলেও বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই সে একা বলে মনে করে নিজেকে। তবে একা ভেবে নিজেকে শেষ করে দেয়নি সৈকত। একটা প্রাইভেট ভারসিটিতে পড়ছে সে। পাশাপাশি একটি বেসরকারি কোম্পনীতে চাকরীও করছে। নিজের খরচ নিজেই চালায়। সব সময় হাসতে পচ্ছন্দ করে সে। কেবল হাসতে নয়, অন্যকে হাসাতেও ভালোবাসে সৈকত। সৈকত বলে মুখেহাসলে নাকি মনের ভেতরকার কষ্ট কিছুটা হলেও দূর হয়। তাছাড়া কাঁদবো কার জন্য। আমি আমার। আর এই আমার আমি, হাসবো আমার নিজের জন্যই।


অদ্ভুত এই পৃথীবীতে আজব সব মানুষ। তার আজব লিলা খেলা। বিধাতা বানায় আর মানুষ ভাঙ্গে। ভাঙ্গা গড়ার খেলায় যেন তারা মাতাল হয়ে উঠেছে। কিন্তু তারই মাঝে ছন্ন ছাড়া হয়ে যাচ্ছে নিস্পাপ শিশু গুলো। যাদের দুনিয়াতে এনে তাদের নিয়ে ভাগাভাগি করছে তাদেরই বাবা-মা।

(এমএম/এএস/অক্টোবর ১৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test