E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সেই লালন সাঁই...

২০১৪ অক্টোবর ১৮ ১২:৩১:০২
সেই লালন সাঁই...
 
 

উত্তরাধিকার৭১ নিউজ ডেস্ক: কোনো সাধকই বিশেষ কোনো জাতি, বর্ণ বা ধর্মের জন্য আসেন না। তারা আলোর মতো। অথচ তাদের অন্ধ অনুসারীরা সাম্প্রদায়িক গণ্ডির মধ্যে নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখে। এর ফলে সংঘাতের পরিস্থিতি শুরু হয়। কিন্তু গর্বের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের এই মাটিতে এমন একজন সাধক জন্ম নিয়েছেন যিনি এসব গণ্ডি উপেক্ষা করে মানবধর্ম নিয়েই কেবল সাধনা করেছেন। তিনি হচ্ছেন লোকসাধক ফকির লালন শাহ।

লালন শাহের জন্ম কোথায়, তা নিয়ে বির্তক রয়েছে। তবে কিছু সূত্রে পাওয়া যায়, তিনি ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার হারিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ধর্মবিশ্বাস নিয়েও বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। সকল ধর্মের মানুষের সাথেই তার ভালো সম্পর্ক ছিল। তাই কেউ কেউ তাকে হিন্দু মনে করতেন, আবার কখনো কখনো অনেকে মুসলমান বলে মনে করতেন। তার মৃত্যুর পর লেখা লালনের প্রথম জীবনী রচয়িতা বসন্ত কুমার পাল বলেছেন- “সাঁইজি হিন্দু কি, মুসলমান তা আমিও স্থির করিতে পারি নাই।”

লালন শাহ বাংলার জন্য রচনা করে গেছেন অসংখ্য বাউল সঙ্গীত। বাউল দর্শন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফকির লালন শাহের অবদানে। তিনি তার রচিত গানগুলো মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো বাংলায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালনের মৃত্যুর দুই বছর পর তার আখরায় যান এবং তার গানে প্রভাবিত হয়ে প্রবাসী পত্রিকার হারামনি বিভাগে ২০টি গান প্রকাশ করেন। এরপর মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন তার হারামনি গ্রন্থে তিন শতাধিক গান সংগ্রহ করেছেন। ধারণা করা হয়, লালন সহস্রাধিক গান রচনা করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালন নিয়ে ১৫০টি গান রচনা করেন। ১৯৬৩ সালে ছেউড়িয়ায় আখরা ঘিরে লালন লোকসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে তা বিলুপ্ত হয়ে শিল্পকলা একাডেমীর অধীন লালন একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর এই আখরায় লালন উৎসব হয়ে আসছে।

রণজিৎ কুমার লালন নিয়ে সেনাবাউল রাজা নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। এরপর পরেশ ভট্টাচার্য রচনা করেন বাউল রাজার প্রেম। ভারতের বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার জীবনী নিয়ে রচনা করেন মনের মানুষ উপন্যাস।

এছাড়া লালন নিয়ে সুনির্মল বসু লালন ফকিরের ভিটে এবং শওকত ওসমান দুই মুসাফির নামে ছোটগল্প রচনা করেন।

এমনকি তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় অনেকেই তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, লিখেছেন কবিতা। ১৯৭২ সালে সৈয়দ হাসান ইমাম পরিচালনা করেন লালন ফকির। ১৯৮৬ সালে শক্তি চট্টোপাধ্যায় একই নামের আরেকটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। ড. হামিদ ১৯৮৮ সালে পরিচালনা করেন তথ্যচিত্র দেখে কয়জনা। তানভীর মোকাম্মেল পরিচালনা করেন তথ্যচিত্র অচিন পাখি। এছাড়া ২০১০ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে গৌতম ঘোষ, মনের মানুষ নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন, যা ভারতের ৪১তম ফিল্ম ফ্যাস্টিভেলে সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।

লালন তার এসব গান মানুষের কাছে বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি ১১৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মৃত্যুর দিনও সকাল বেলায় শিষ্যদের নিয়ে গান করেছেন। কথিত রয়েছে, লালন শাহ তার কণ্ঠের শেষ গানটি গেয়ে শিষ্যদের বলেছিলেন– আমি চলিলাম। এবং তার সাথে সাথে তার একতারার তারও ছিঁড়ে গিয়েছিল। এবং একই সাথে তার কণ্ঠের প্রদীপও নিভে গিয়েছিল চিরতরে-

আমি অপার হয়ে বসে আছি...

(এমএম/এনডি/অক্টোবর ১৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test