E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুমারী পূজা কী কেন করা হয় এবং কুমারী পূজার ইতিহাস কী?

২০২৩ অক্টোবর ২০ ১৫:০১:১৯
কুমারী পূজা কী কেন করা হয় এবং কুমারী পূজার ইতিহাস কী?

পূর্ণি ঘোষাল


কুমারী পূজা হলো তন্ত্রশাস্ত্রমতে অনধিক ষোলো বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেয়ের পূজা। আরেকটু স্পষ্ট করে বলা যায়, হিন্দু তন্ত্রশাস্ত্রমতে ষোলো বছরের কম বয়সী এমন কন্যা, যার আদ্য ঋতুস্রাব হয়নি এবং পুরুষ সংসর্গে যোনি বিদীর্ণ হয়নি— এমন কন্যাকে দুর্গার দেবীর প্রতীকে পূজা করার নাম হলো কুমারী পূজা। বিশেষত দুর্গাপূজার অংশ হিসেবে কুমারী পূজা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা এবং অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে এবং কামাখ্যাদি শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে কুমারী পূজার প্রচলন কমে গেছে।

পৌরাণিক উপাখ্যান বা কুমারী পূজার ইতিহাস ও পটভূমি
শাস্ত্রমতে কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বানাসুর বা কোলাসুরকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে। উল্লেখ্য, কোলাসুর নামক অসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করে নেয়। কোলাসুর স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সে সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী দেবতাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী মানবকন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করেন কুমারী অবস্থায় কোলাসুরকে হত্যা করেন। পুনর্জন্মে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।

প্রতিবছর দুর্গাদেবীর মহাষ্টমী পূজাশেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মতান্তরে নবমী পূজার দিনও এ পূজা অনুষ্ঠিত হতে পারে।

কুমারী পূজায় কোন ধরনের কুমারীর পূজা করা যাবে?
পুরোহিতদর্পণ প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি এবং মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণিত হযে়ছে। বর্ণনানুসারে কুমারী পূজায় কোন জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যে-কোন কুমারীই পূজনীয় । তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সর্বত্র প্রচলিত।

এক্ষেত্রে এক থেকে ষোলো বছর বয়সী যে-কোনো কুমারী মেয়ের পূজা করা যায়। অনেকের মতে দুই বছর থেকে দশ বছরের মেয়েদের পূজা করা যায়।

বয়সের ক্রমানুসারে পূজাকালে সকল বয়সের কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়, এগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো—
১. এক বছরের কন্যাকে বলা হয় সন্ধ্যা, ২. দুই বছরের কন্যাকে বলা হয় সরস্বতী, ৩. তিন বছরের কন্যাকে বলা হয় ত্রিধামূর্তি, ৪. চার বছরের কন্যাকে বলা হয় কালীকা, ৫. পাঁচ বছরের কন্যাকে বলা হয় সুভগা, ৬. ছয় বছরের কন্যাকে বলা হয় উমা, ৭. সাত বছরের কন্যাকে বলা হয় মালিনী, ৮. আট বছরের কন্যাকে বলা হয় কুব্জিকা, ৯. নয় বছরের কন্যাকে বলা হয় কালসন্দর্ভা, ১০. দশ বছরের কন্যাকে বলা হয় অপরাজিতা, ১১. এগারো বছরের কন্যাকে বলা হয় রূদ্রাণী, ১২. বারো বছরের কন্যাকে বলা হয় ভৈরবী, ১৩. তেরো বছরের কন্যাকে বলা হয় মহালক্ষ্মী, ১৪. চৌদ্দ বছরের কন্যাকে বলা হয় পীঠনায়িকা, ১৫পনেরো বছরের কন্যাকে বলা হয় ক্ষেত্রজ্ঞা, ১৬.ষোলো বছরের কন্যাকে বলা হয় অন্নদা বা অম্বিকা।

কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব
কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো— নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় ক্রিয়া সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত। কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক ও বীজাবস্থা। তাই কুমারী বা নারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার সাধনা করা হয়। পৌরাণিক কল্পকাহিনিতে বর্ণিত আছে, এ ভাবনায় ভাবিত হওয়ার মাধ্যমে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজের স্ত্রীকে ষোড়শী জ্ঞানে পূজা করেছিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণের মতে— সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমীতে সাধারণ ৫ থেকে ৭ বছরের একটি কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে পূজা করা হয়। চণ্ডীতে বলা হয়েছে— “যা দেবী সর্বভূতেষু; মাতৃরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্য মধ্যে মায়ের রূপ”

হিন্দু ধর্মে বলা হয়- দেবকী কুমারী প্রতীকে হিন্দুদের মাতৃরূপে অবস্থিত। সর্বব্যাপী ঈশ্বরেরই মাতৃভাবে আরাধনা করার জন্য কুমারী পূজা করা হয়। আবার কুমারী পূজার মাধ্যমে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ নিজেকেই শ্রদ্ধা জানায়।

লেখক : সংবাদকর্মী।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test