E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সফিপুর আনসার একাডেমীতে একদিন

২০১৪ মে ০১ ১৫:৩৩:২০
সফিপুর আনসার একাডেমীতে একদিন

মো. ওয়াহাব উদ্দিন : ক’দিন ধরেই অফিসে আলোচনা হচ্ছে একটা পিকনিক হওয়া বিষয়ক। কোথায় যাওয়া যায়, কোথায় যাওয়া যায় করে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগার পর অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো এমন একটা জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যায়। এমন জায়গার কথা ভাবতেই মনের মধ্যে যে জায়গাটির ছবি ভেসে উঠল তা হলো সফিপুর আনসার একাডেমী।

ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার সফিপুর থানায় এই আনসার একাডেমী অবস্থিত। সবার অনুমতিক্রমে চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হলো সফিপুর আনসার একডেমীতেই যাওয়া হবে। দিনক্ষণ ঠিক করা হলো। বুকিং করা হলো আনসার একাডেমীর একটি পিকনিক স্পট। আমাদের পিকনিক স্পটটির নাম মালঞ্চ। এখানে মোট দশটি পিকনিক স্পট রয়েছে। যেমন মালঞ্চ, সাগরিকা, বর্ণালী আনন্দ, পল্লব প্রভৃতি। একেকটি পিকনিক স্পট বুকিং দিতে লাগবে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। শুক্রবার ঢাকার উত্তরা থেকে বাসে চেপে বসলাম সফিপুর আনসার একাডেমী যাওয়ার উদ্দেশ্যে। রাস্তার দু’ধারে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে যাচ্ছি, হঠাত্ আমার একটুখানি তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব হয়েছে। অমনি পাশে বসা নূর ইসলাম ডেকে উঠলেন ওয়াহাব ভাই, ওয়াহাব ভাই। হকচকিয়ে জেগে উঠে বললাম, কি হয়েছে? কি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি নির্বিকারভাবে বললেন, না মানে আর কতক্ষণ লাগবে। পেটের মধ্যে তো যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
নূর ইসলামের কথা শুনতে পেয়ে কি-না জানি না, গাজীপুর বাজার পার হওয়ার পর আমাদের নাস্তা পর্ব শুরু হলো। বাস চলছে তো চলছেই। পেছনের সিট থেকে হারুন ভাই গেয়ে উঠলেন, এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলত। নূর ইসলাম বলল, তুমিই বল। হারুন ভাই বললেন, না না তুমিই বল। এমন মজার মজার গান আর হাস্য কৌতুকে আনসার একাডেমীর পথে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। আমাকে চুপচাপ থাকতে দেখে মাহবুব স্যার বললেন, কী ওয়াহাব সাহেব একেবারে বেরসিকের মতো বসে আছেন যে, একটা কিছু শোনান। আমি কী বলব, আদৌ বলব কি-না ভাবতে ভাবতে হঠাত্ কণ্ঠ গেয়ে উঠল, তোমার খোলা হওয়া লাগিয়ে পালে...। সবাই তো পিনপতন নীরবতা পালন করা শুরু করল। আমার কণ্ঠ থেকে গান, এ যেন কাকের কণ্ঠে কুহু সুর। সবাইকে বেশ অবাক করে দিলাম। নিজে যে একটু অবাক হইনি তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ আবার বললেন, ওয়ান মোর ওয়াহাব ভাই, ওয়ান মোর। এমন কথোপকথনের একপর্যায়ে আমাদের বাস চলে এল আনসার একাডেমীর মূল ফটকের সামনে। ডেকোরেটরের বিভিন্ন জিনিসপত্র সমেত নিচে নামলাম আমরা। আহঃ! দু’চোখ যেন শান্তি খুঁজে পেল। একরাশ সবুজ ঘাস, সারিবদ্ধ পামট্রি, জানা-অজানা বাহারি ফুলগাছ। সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো গোছানো গেস্ট হাউস। সত্যি মনটা ভরে গেল। চোখ জুড়িয়ে গেল। কোথাও কোনো ময়লা নেই। যাকে বলে নিট অ্যান্ড ক্লিন।
পিকনিক স্পটে পৌঁছে চা পানের ব্যবস্থা করা হলো। তারপর এমডি গ্রুপ বনাম চেয়ারম্যান গ্রুপের দশ ওভারের প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হয়। খেলা ভালই চলছিল এক পর্যায়ে বল হারিয়ে গেলে চেয়ারম্যান স্যার বললেন, আর বল খুঁজো না। খেলা হবে না। খেলা ড্র। এমডি স্যার নতুন বল এনে আবার খেলা শুরু করলেন। চেয়ারম্যান স্যারের দল এই খেলাতে হেরে যান। আমিও অবশ্য ওই দলে ছিলাম। আরে খেলাতে তো হার-জিত থাকবেই। খেলা পর্ব শেষে শুরু হলো দুপুরের খাবারের আয়োজন। দুপুরের খাওয়া শেষ হলে অফিসের সবার অংশগ্রহণে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হলো। আর হলো মোরগ লড়াই।
আমি এসবের মধ্যে নেই। খাওয়া শেষ হলে নূর ইসলামকে বললাম, চলেন পুরোটা ঘুরে দেখি। তিনি রাজি হলেন। দু’জন বেরিয়ে পড়লাম ঘুরতে। টিভিতে প্রচারিত নানা পণ্যের বিজ্ঞাপনের শুটিং স্পটে ঢুকে পড়েছি। গার্ড বলল, ভেতরে যাওয়ার পাস লাগবে। কি আর করা দূর থেকে সৌন্দর্য দেখতে হলো, ওদিকে সবাই হাস্যোল্লাসে মেতেছে। পটাপট কয়েকটা ছবি উঠিয়ে আবার সবার মাঝে ফিরে এলাম। ম্যানেজার সুলতান মাহবুব স্যারের সাবলীল ও সুন্দর উপস্থাপনা আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করল। মুগ্ধ হয়তো অন্যরাও হয়েছে। আরও মুগ্ধ হলাম জিএম স্যারের কণ্ঠে রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর লেখা একটা চিঠি পড়া শুনে।
সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। আমাদের সব আয়োজন একে একে শেষ হলো। এবার ঘরে ফেরার পালা। আবার সেই যানজটময় শহরের উদ্দেশে যাত্রা। সবাই বাসে চেপে বসলাম। বিদায় জানালাম গাজীপুরের সফিপুর আনসার একাডেমীকে।
যদি আপনি যেতে চান, কীভাবে যাবেন? ঢাকার মহাখালী থেকে আজমেরী, বনশ্রী প্রভৃতি বাস সফিপুর বাসস্ট্যান্ডে আপনাকে নামিয়ে দেবে। সেখান থেকে দশ-পনের টাকার রিকশা ভাড়া করে পৌঁছে যাবেন সফিপুর আনসার একাডেমীতে। ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসবেন তাদের জন্য রাত কাটানোর সুব্যবস্থা আছে। আর রেস্ট নেয়ার জন্যও রয়েছে আলাদা রেস্টরুম। আর এখানের বাথরুমগুলোর ব্যবস্থাপনা অসাধারণ। যা না বললে অন্যায় করা হবে। আরও অন্যায় হবে এই পিকনিক স্পটের ব্যবস্থাপনাকারী ও আয়োজকদের নাম না বললে। তারা হলেন আমাদের অফিসের লজিস্টিকের হারুন ভাই ও আসাদ ভাই। তাদের কাছ থেকেই জানতে পারলাম এখানে যাবার পূর্বে ডিরেক্টরের বরাবর একটা আবেদন করতে হয়। আনসার ভিডিপির ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে আবেদন করতে পারেন। কিংবা আনসার ভিডিপির হেডকোয়ার্টার থেকে ও আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। অফিসিয়াল ফরমালিটিজ শেষ হলেই আপনি তৈরি হয়ে যান সফিপুর আনসার একাডেমীতে যাওয়ার জন্য। আশা করি আমার মতো আপনাদেরও মন জুড়িয়ে যাবে। জুড়িয়ে যাবে নয়ন যুগলও।

(এএস/মে ০১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test