E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নড়াইলের পথে-প্রান্তরে কৃষ্ণচূড়ার অপার সৌন্দর্য

২০২৪ এপ্রিল ২৯ ১৬:২৪:১৫
নড়াইলের পথে-প্রান্তরে কৃষ্ণচূড়ার অপার সৌন্দর্য

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : কাঠফাটা রোদের তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করেই কৃষ্ণচূড়া তার সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে হাজির হয়েছে! গ্রীষ্মের এই রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরে আপন মহিমায়। লাল আবির মাখা প্রেমের চিরন্তন আবেশ নিয়ে হাজির কৃষ্ণচূড়া। যে দিকে চোখ যায় সবুজের মাঝে শুধু লাল রঙের মূর্ছনা। প্রকৃতির এই অপরূপ রঙ্গের সাজ দেখে দু’চোখ জুড়িয়ে যায় প্রকৃতি প্রেমীদের। চোখে নেমে আশে প্রশান্তি। এ যেন প্রকৃতিজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার মন জুড়িয়ে দেয়া। 

এই সময়টায় সারাদেশের মতোই নড়াইল-লোহাগড়ার পথে-প্রান্তরে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য।

কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর, তা কম লোকই জানেন। কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। এখন কৃষ্ণচূড়ার সময়, এই ফুল ফুটে প্রতিটি গাছ লালে লাল হয়ে আছে। এই লালের সমারোহ কৃষ্ণচূড়ারই মহিমা। কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে অভ্যস্ত।

তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালেভদ্রে। তিন রঙের কৃষ্ণচূড়ার গাছ উঁচু। অনেকটা জায়গাজুড়ে শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটায়। তিন রঙেরই ফুল ফোটে প্রায় একই সময়ে। এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে যখন এই ফুল ফুটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে তাকাতে বাধ্য হন।

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। সৌন্দর্যবর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত।

কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় সাধারণত ১২ থেকে ১৫ মিটার হলেও শাখা-পল্লবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশস্ত। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়িযুক্ত। মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় ৭-৮টি পাপড়িযুক্ত গাঢ় লাল। ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাপড়িগুলো প্রায় আট সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ।

বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটে।

বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি আর বহু আন্দোলনের পটভূমির সাথে কৃষ্ণচূড়া গাছের সম্পর্ক খুব নিবিড়। শোভাবর্ধনকারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরুত্ব বহন করে। শখের বশে এ গাছের কদর থাকলেও; এর কাঠ তুলনামূলক দামি না হওয়া এবং ভালো কোনো ব্যবহারে না আসায় বাণিজ্যিকভাবে এ গাছ বপনে স্থানীয়দের আগ্রহ অনেক কম।

(আরএম/এসপি/এপ্রিল ২৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test