E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শখের পেশা ওয়েডিং ফটোগ্রাফি

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১৪ ১৮:৫৮:৫৮
শখের পেশা ওয়েডিং ফটোগ্রাফি

শোভন সাহা : অনেক বড় আশা নিয়ে এমআর রানা ভর্তি হয়েছিল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইউনির্ভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব)। রানার স্বপ্ন একদিন সে বংলাদেশের অন্যতম ফিল্ম মেকার ও প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে এসএসসি, রাইফেলস স্কুল এন্ড কলেজে থেকে এইচএসসি পরীক্ষা পাশ করে রানা। ছোট বেলা থেকে মনের মধ্যে পুষে রাখা স্বপ্নটাও আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে রানা এখন ইউল্যাব ইউনির্ভাসিটিতে মিড়িয়া স্টাডিস এন্ড জার্নালিজম বিভাগের ডিজিটাল প্রোডাকশন নিয়ে পড়াশুনা করছে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিয়ানের কাছ থেকে ওয়েডিং ফটোগ্রাফির হাতে খড়ি রানার।

রানা প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার হতে বিভিন্ন মিডিয়ার সাথে বিভিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে । ছবি তোলার হাত দারুণ ছেলেটার।

রানাসহ আরও অনেকে ক্যামেরা হাতে এগিয়ে আসছে, নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। তেমনি বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের এক্সপেরিমেন্টাল স্যুট, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, মডেলিং ফটোগ্রাফি করে থাকে।

প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার হতে হলে দরকার একটি ভাল মানের ক্যামেরা, বিভিন্ন ধরনের লেন্স, স্ট্যান্ড, ক্যামেরার ব্যাগসহ আরো অনেক কিছু। ক্যামেরার প্রকারভেদে বিভিন্ন দাম এবং রয়েছে বিভিন্ন মানের লেন্স।

রানার উঠে আসা স্বচ্ছল পরিবার থেকে। ভাল মানের একটি ক্যামেরা এবং আনুসাঙ্গিক জিনিস কিনতে ততটা কষ্ট না হলেও একেবারে সহজলভ্যও ছিল না। ছেলের ইচ্ছাপূরণ এবং আগ্রহের জন্য রানার বাবা ক্যামেরা এবং এর আনুসাঙ্গিক জিনিস কেনার জন্য সর্বোপরি সহায়তা করেছে। তিনি চেয়েছেন তার ছেলে পরবর্তী জীবনে তার ইচ্ছাকে নিজেরমত করে বাস্তব রূপ দিতে পারে ।

রানার বাবা মোঃ ফয়েজুর রহমান বলেন, ছোট বেলা থেকে টেকনিক্যাল বিষয়ে রানা অনেক আগ্রহী। তাছাড়া রানা ক্যামেরা কেনার পর থেকে পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করছে।

রানা বলেন, ক্যামেরা কিনতে আমার পরিবার আমাকে অনেক সার্পোট দিয়েছে। আমি বিভিন্ন ভাবে ক্যামেরার কাজ করার চেষ্টা করছি । রানা আরও বলেন, এখন কোন বিয়ে বা জন্মদিনের ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করলে ১০০০০-১৫০০০টাকা পাই। বিনিময়ে ৩০০-৩৩০ সফটকপি এবং ১০০-৮০কপি ছবি ম্যাট অথবা গ্লোসি পেপারে প্রিন্ট করে দিতে হয়। মাসে ৫ থেকে ৭টা কাজ করলে ভালোভাবে নিজের খরচ চালানো যায়।

নিজের ইচ্ছা মত কাজ করা যায় এই চিন্তা করে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে এবং অনেক শিক্ষিত মানুষ ক্যামেরা হাতে এগিয়ে আসছে এই পেশায়। তাছাড়া ৫-৬ঘন্টা সময় ব্যয় করে যদি ৫০০০-৫৫০০টাকা আয় করা যায় তাহলে ক্ষতি কি ?

ওয়েডিং ফটোগ্রাফার জাহিদ বলেন, শুধুমাত্র বিয়ের ছবি তুলে প্রতি মাসে আমি ২৫-৩৫ হাজার টাকা আয় করি। আমি যা আয় করি তা ছাত্র হিসাবে অনেক। তিনি বলেন, এটি একটি স্বাধীন পেশা ।

ওয়েডিং ফটোগ্রাফার সাকিব বলেন, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করে যদি আমি মাসে ৩৫-৪০ হাজার টাকা রোজগার করি তাহলে আমি চাকরী কেন করব ? চাকরীতে অনেক ধরা বাধা নিয়ম এগুলো থেকে যা আমাকে দিয়ে হবে না।

ফটোগ্রাফার বৃত্ত রহমান বলেন, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি না শুধু আমি সকল ফটোগ্রাফিতে মজা পাই। কিন্তু ওয়েডিং ফটোগ্রাফিতে সব সময় টাকাটা ঠিক ভাবে পাওয়া যায় না।

ওয়েডিং ফটোগ্রাফার ফাহিম বলেন, সিএসসি'র ছাত্র আমি। পড়াশোনা করছি একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে । বড় ভাই মিশুর হাত ধরে আজ আমি একজন প্রফেশনাল ওয়েডিং ফটোগ্রাফার। এখন আমি প্রায় প্রতিমাসে ২০-২২ হাজার টাকা আয় করি।

ফাহিমের পিতা বলেন, এটা একটা চালেঞ্জিং পেশা । আমি মনে করি তরুণরা এই পেশাকে অনেকটা উপভোগের সাথে নিবে।

বর্তমানে বিয়ে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার থাকবে না তা কি করে হয় ! এই পেশা এখন একটা ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। যা এই ফ্যাশানকে একটা পূর্ণাঙ্গ প্যাশনের(আয়) পথ হিসাবে চিহ্নিত করে ।

মোঃ আসিফ পাঠান বলেন, আমি আমার ভাগ্নের জন্মদিনের ছবি তোলার জন্য ৪০০০টাকায় প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার ভাড়া করি মাত্র চার ঘন্টার জন্য। জন্মদিনের কিছু ভাল ছবি তোলার জন্য। টাকার পরিমাণ একটু বেশি হলেও আমাদের স্মৃতির পাতায় থাকবে কিছু দারুণ ছবি।
ড. এমএম আকাশ বলেন, বর্তমানে ওয়েডিং ফটোগ্রাফিতে তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে আসছে যা দেশের অর্থনীতিতে একটি বিরাট ভূমিকা রাখছে। ওয়েডিং ফটোগ্রাফি একটি স্বাধীন পেশা। কিন্তু অনেক অভিভাবক এ পেশাকে সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করছে না। কিন্তু যারা এই পেশাটিতে আছে তাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ এই পেশার একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বে ক্রমশ বেকারদের সংখ্যা বাড়ছে । তাছাড়া বিভিন্ন ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও অনেকের চাকরী বা কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্চে না । সেক্ষেত্রে তরুণেরা যদি নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে তা চাকরীর বাজারে একটি বিরাট জোয়ার আনবে । এই তরুণদের দেখানো পথেই একদিন বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যাবে।

(এসএস/অ/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test