E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাপের কথা ‘সংস্কার বনাম কুসংস্কার’

২০১৫ জুন ২২ ১৪:৪৪:৪৯
সাপের কথা ‘সংস্কার বনাম কুসংস্কার’

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের মানুষ যে প্রাণীটিকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে সেটি হলো সাপ। সাপ সম্পর্কে মানুষের ভয় এতই তীব্র যে, অনেকে সাপ শব্দটি শোনা মাত্র লাফ দিয়ে খাট, টেবিল বা অন্য কোণ উঁচু জায়গায় গিয়ে উঠে পড়েন। আবার অন্ধকার ঘরে সাপ মানেই সারা ঘরময় সাপ! সাপ নিয়ে সবার ভয়ের কারণ হলো, সাপ দেখতে যথেষ্ট ভয়ঙ্কর, এবং এর কিছু কিছু প্রজাতি এতই বিষধর যে, এর কামড়ে মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী খুব দ্রুত মারা যেতে পারে। সাপ (Squamata) উপবর্গের অন্তর্ভুক্ত প্রাণী।

বাংলাদেশী সাপ : বাংলাদেশে ঠিক কত প্রজাতির সাপ আছে তা নিয়ে মতভেদ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড: মুহম্মদ আলী রেজা খানের ‘বাংলাদেশের সাপ‘’ বই অনুসারে এ দেশে সাপের প্রজাতি ৮১ বা তারও কিছু বেশি। আসলে বাংলাদেশে সাপের প্রজাতির সংখ্যা নিয়ে তথ্য বিভ্রাট আছে। কারণ, ড: আলী রেজা খান তার অপর বই ‘বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী‘-তে বাংলাদেশে ৭৯ প্রজাতির সাপ আছে বলে উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে ৫২ টি অবিষধর আর ২৭ টি বিষধর প্রজাতির সাপ বলে উল্লেখিত আছে।এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে একই নামে দুই থেকে তিন প্রজাতির সাপের অস্তিত্ব আছে। এ কারণে, বাংলাদেশে সাপের প্রজাতি এত বেশি হলেও আসলে সাপের নাম খুব কমই পাওয়া যায়। যেমন, দুমুখো সাপ বা ব্লাইন্ড স্নেক এর তিনটি প্রজাতি Typhlops diiardii, T. porrectus ও T. briaminus থাকলেও সবগুলো একত্রে দুমুখো সাপ নামে পরিচিত।

সাপ সম্পর্কে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা :
বাংলাদেশে সাপ সম্পর্কে ভুল ধারণার কোন কমতি নেই। এর পিছনে কিছু কারণও রয়েছে। সাপ সম্পর্কে এ দেশের সাধারণ মানুষের যা জ্ঞান, তা এসেছে সাপুড়েদের থেকে। ফলে সাপ সম্পর্কে নানা প্রকার বিভ্রান্তিকর ও অমূলক ধারনা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে। নিচে এর কিছু উল্লেখ করা হলো :

* সাপের মণি : সাপের মাথায় এ জাতীয় কোন পাথুরে পদার্থ আদৌ তৈরী হয়না। সাপুড়েরা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নানা চটকদার কথা বলে। আর মাঝে মাঝে তারা মণি হিসাবে যা দেখায় তা হলো মুক্তা বা অন্য কোন পাথর যা কোনভাবেই মণি নয়।

* সাপের দুধপান : অনেকের ধারণা, দুধরাজ (Elaphe radiate) নামক সাপ গরুর পা পেঁচিয়ে বাঁটে মুখ লাগিয়ে দুধপান করে। কেন এই ধারণার উৎপত্তি? উত্তরটা খুবই সহজ। উপমহাদেশের বেশিরভাগ মানুষ হিন্দু এবং দেবী মনসার বাহন হবার কারণে, সাপকে উচ্চ শ্রেণীর খাদক, এবং সম্মানযোগ্য প্রাণী হিসেবে একটা ধারণা অনেকের মধ্যে প্রচলিত আছে। সাপুড়েরা অতীতে যে কাজটি করতো তা হলো, সাপকে দীর্ঘ সময় পানি থেকে দূরে রেখে তাদের তেষ্টা দারুণভাবে জাগাতো। তারপর জনতার সামনে তৃষ্ণার্ত সাপের সামনে দুধের বাটি রাখতো। বেচারা সাপ তেষ্টার চোটে সেই দুধই পান করতো। এভাবে সাপের দুধপানের বিষয়টি জনমনে প্রচলিত হয়ে গেছে।

* প্রতিহিংসা : অনেকের ধারণা, সাপ একবার কারও দ্বারা আক্রান্ত হলে সে আক্রমণকারীকে চিনে রাখে এবং রাতে এসে কামড়ে দিয়ে যায়। এটা সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক ধারণামাত্র।

* জীহবা দিয়ে শ্রবণ : সাপ চলাফেরার প্রয়োজনে বার বার জীহবা বের করে তা আসলে শোনার জন্য নয়। সাপের জিহবার অগ্রভাগে ‘জেকবসন অর্গান’ নামে একধরনের গ্রন্থি আছে যদ্বারা সাপ বায়ুস্থ বিভিন্ন পদার্থের অস্তিত্ব অনুভব করে। এটিকে ঘ্রাণ নেয়াও বলা যেতে পারে।

* লেজ দিয়ে আঘাত : অনেকেরই ধারণা দাঁরাশ (Coluber mucosus) সাপ লেজ দিয়ে আঘাত করে এবং এই আঘাত যেখানে লাগে সেখানে পচন ধরে ইত্যাদী। কিন্তু এই ধারনা সত্য নয়। সাপের মাথা চেপে ধরলে সাপ লেজ দিয়ে হাত পেঁচিয়ে ধরবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দাঁড়াশ সাপের ক্ষেত্রে কোন বিশেষত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উপরন্তু এটি নির্বিষ ও মানুষের উপকারি বন্ধু। কারণ, এদের প্রধান খাদ্য ইঁদুর।
* পিচ্ছিল সাপ : আমাদের দেশের সকলের ধারনা সাপ পিচ্ছিল। কিন্তু এটি সত্য নয়। সাপ পিচ্ছিলতো নয়ই বরং খসখসে। সাপের গা থেকে কোন প্রকার পিচ্ছিল পদার্থ নিঃসৃত হয়না।

* সাপের পা : আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, সাপের পা দেখলে রাজা হওয়া যায়। কিন্তু সাপের কোন পা নেই। তাই সাপের পা দেখে রাজা হবার কোন সম্ভাবনাও নেই।

* সাপের ওঝা : সাপের ওঝারা যে চিকিৎসা করে তা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। সাপের ওঝার চিকিৎসায় সেই রোগীই ভালো হয় যাকে এমন সাপে কামড় দিয়েছে যার বিষ নেই।

এছাড়াও আমাদের দেশে প্রায় সব সাপকেই বিষধর মনে করা হয়। কিন্তু তা সত্য নয়। যেমন, কালনাগিনী (Chrysopelea ornata) সাপের নাম শুনলেই মনে হয় যে, এই সাপের কামড়ে মৃত্য অনিবার্য, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি নির্বিষ সাপ।

তথ্যসূত্র : 'বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী' - বাংলা একাডেমী, উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট
(এলপিবি/পিবি/জুন ২২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test