E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলাদেশের শিকারি পাখি

২০১৫ জুন ২৯ ১৭:৩৩:৩১
বাংলাদেশের শিকারি পাখি

পরিতোষ বড়ুয়া লিমনঃ পৃথিবীতে সকল প্রাণীকুলকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। আবার প্রত্যেক শ্রেণিকে প্রতিটি দেশের নিজস্ব ভাষায় নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের গবেষণার কাজে সুবিধার্থে আবার বৈজ্ঞানিক নামকরণও করা হয়েছে ল্যাটিন ভাষায়।

সারা পৃথিবীতে ৯ হাজার ২২ প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে আছে ৬০০ প্রজাতির। এই ৬০০ প্রজাতির মধ্যে শিকারি পাখির সংখ্যা কম। বাংলাদেশে শিকারি পাখি হিসেবে যাদের তালিকাভুক্ত, তাদের মধ্যে রয়েছে ঈগল, বাজ, চিল, কুড়য়া, শকুন ও পেঁচা। এদের মধ্যে পেঁচা স্ট্রেগি পরিবারভুক্ত। আর অন্য সব পাখি ফ্যালকন পরিবারভুক্ত। কেবল শকুন ছাড়া অন্যসব শিকারি পাখি জীবন্ত পাখি ও ক্ষুদ্র প্রাণী ধাওয়া করে তাদের আহার পর্ব সারে।

শিকারি পাখি (Bird of prey) অন্য প্রাণী, বিশেষত মেরুদন্ডী প্রাণী শিকার করে খায় এমন পাখি। এদের বোধশক্তি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ এবং ঠোঁট ও নখর খুব ধারাল ও মজবুত। শিকারি পাখিরা দুটি দলভুক্ত: দিবাচর ও নিশাচর। প্রথম দলে আছে ঈগল, শিকরা, বাজ, বাজার্ড, ফ্যালকন, হ্যারিয়ার, চিল, ওসপ্রে (osprey) ও শকুন। আর দ্বিতীয় দলের পাখি হলো পেঁচা।

সারা পৃথিবীতে দিবাচর ও নিশাচর শিকারি পাখির প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ৪০০। বাংলাদেশের ৬২৮ প্রজাতির পাখির ৬৮ প্রজাতি শিকারি, তন্মধ্যে ৩৭ আবাসিক ও ৩১ পরিযায়ী। এদের সবগুলি প্রজাতিই Ciconiiformes বর্গভুক্ত এবং শিকারি পাখিরা প্রায় একান্তভাবেই মাংসাশী; উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী এবং কখনও মাছ খেয়ে থাকে। তাদের আছে মজবুত বাঁকা ঠোঁট এবং শিকার আটকে রাখা ও ছিঁড়ে খাওয়ার সহায়ক সুগঠিত পেশিতন্ত্র। আঙুলগুলির ৩টি আছে সামনের দিকে ও ১টি পিছনের দিকে এবং তাতে থাকে লম্বা ধারালো বাঁকা নখর। ওসপ্রে পৃথিবীর সর্বত্র বিস্তৃত। এরা মাছ শিকারি, ছোঁ-মেরে নখর দিয়ে শিকার গেঁথে কাঁটাযুক্ত পায়ের তলায় চেপে ধরে।

ঈগল

শিকারি পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে ঈগল। বিশ্বে চার প্রজাতির ঈগল রয়েছে। এরা সোনালি ঈগল, গস হক, স্প্যারো হক ও আমেরিকান ঈগল। সোনালি ঈগল এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সোনালি ঈগলকে জাতীয় প্রতীক ও পাখি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। পাখিদের মধ্যে এরা সব চাইতে বড় বাসা বানায়। এদের বাসা ৬ মিটার গভীর এবং ৯১ সে.মি. বেড় বিশিষ্ট হতেও দেখা গেছে। এরা সাধারণত কোন ঝুটঝামেলা না হলে বাসা বদল করে না। পুরনো বাসায় প্রতি প্রজনন মৌসুমে নতুন ডালপালা দিয়ে এরা বাসা সাজায়। ঈগলের পা ও ডানা অত্যনত্ম শক্ত এবং পায়ের আগায় রয়েছে তীক্ষ্ন এবং অসম্ভব ধারালো নখ। এদের চোখের দৃষ্টি অসম্ভব প্রখর এবং শ্রবণ শক্তিও খুবই সংবেদনশীল। যে কোন পাখি, খরগোশ ও ইঁদুরসহ ক্ষুদ্র প্রাণী এবং পানির ওপরে ভাসমান মাছ ও জলজ সাপকে এরা তীব্র বেগে উড়ে এসে পায়ের ধারালো নখে বর্শার মতো গেঁথে ফেলে। তারপর উড়নত্ম অবস্থায় অথবা কোন ডালে বসে ধারালো বাঁকা ঠোঁট দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলে জীবনত্ম শিকার। ঈগল পাখির গায়ের রং বাদামি, সোনালি ও সাদা রং মিশেল। অধিকাংশ হক ও ঈগল মাটিতে শিকার না দেখা পর্যন্ত আকাশে চক্কর দিতে বা গাছের ডালে বসে থাকে এবং দেখামাত্র উপর থেকে ঝাপিয়ে পড়ে শিকারকে আহত বা নিহত করে। হবি ও গোসহকরা উড়ন্ত অবস্থায় তাড়া করে শিকার ধরে।

বাজ

বাজপাখি ঈগলের মতো তীব্র বেগে শিকারের পিছু ছুটে তাকে ধরে ফেলে। বাজপাখি আকারে ছোট। অনেকটা কাকের সমান। তাবে এরা শিকারি পাখিদের মধ্যে সবচাইতে দ্রুত বেগে উড়তে পারে। এছাড়া এদের দৃষ্টিশক্তি অত্যনত্ম প্রখর। অনেক দূর থেকেই এরা শিকারের অবস্থান নির্ণয় করতে পারে। মূলত ছোট ছোট পাখি এরা শিকার করে থাকে। শিকারের খোঁজে আকাশের অনেক ওপর দিয়ে উড়ে বেড়ায়। উড়ন্ত কোন পাখি নজরে এলেই এরা পাখা গুটিয়ে নিচে নেমে আসে এবং পায়ের নখ দিয়ে শিকারকে গেঁথে ফেলে। বাজ পাখির মতো উত্তর গোলার্ধের পেরিগ্রিন ফ্যালকন ও জির ফ্যালকন এই দুই প্রজাতির বাজকেই এখন সচরাচর দেখা যায়।বাজপাখি ঈগলের মতো তীব্র বেগে শিকারের পিছু ছুটে তাকে ধরে ফেলে। বাজপাখি আকারে ছোট। অনেকটা কাকের সমান। তাবে এরা শিকারি পাখিদের মধ্যে সবচাইতে দ্রম্নত বেগে উড়তে পারে। এছাড়া এদের দৃষ্টিশক্তি অত্যনত্ম প্রখর। অনেক দূর থেকেই এরা শিকারের অবস্থান নির্ণয় করতে পারে। মূলত ছোট ছোট পাখি এরা শিকার করে থাকে। শিকারের খোঁজে আকাশের অনেক ওপর দিয়ে উড়ে বেড়ায়। উড়ন্ত কোন পাখি নজরে এলেই এরা পাখা গুটিয়ে নিচে নেমে আসে এবং পায়ের নখ দিয়ে শিকারকে গেঁথে ফেলে। বাজ পাখির মতো পেরিগ্রিন ফ্যালকন ও জির ফ্যালকন এই দুই প্রজাতির বাজকেই এখন সচরাচর দেখা যায়।

চিল

আমাদের দেশে একই গোত্রের চার প্রজাতির চিল রয়েছে। এরা হলো গোদা চিল, শঙ্খ চিল, সাধারণ চিল ও ভুবন চিল। চিল সাধারণত ৫০-৬০ সে.মি. লম্বা হয়ে থাকে। চিলের গায়ের রং লালচে হলুদ, গলা থেকে মাথা সাদা এবং বাহারি নৌকার দাঁড়ের মধ্যে ত্রিভুজ আকৃতির লেজ। চিলের চোখের নজর তীক্ষ্ণ। এরা অনেক উঁচু থেকেও নদী বা পুকুরের ছোট পুঁটি মাছের নড়াচড়াও দেখতে পারে। চিল সাধারণত আকাশে ডানা মেলে ভেসে বেড়ায়। নিচে পানিতে কোন মাছ বা ডাঙ্গায় মুরগি বা হাঁসের ছানা, কিংবা ইঁদুর জাতীয় ক্ষুদ্র প্রাণীর দেখা পেলেই চিল ছোঁ মেরে নিচে নেমে এসে পা দিয়ে অথবা ঠোঁট দিয়ে শিকার ধরে ফেলে।

শকুন

পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের শকুনরা শবভুক। শকুনকে বলা হয় মরা খেঁকো ভাগাড় পরিষ্কারক শিকারি পাখি। শকুনের মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে উত্তর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া কনডর এবং আমাদের দেশের রাজ শকুন ও টার্কি শকুন। এরা মূলত মৃত পশু-পাখির মাংস টেনে ছিঁড়ে খায়। মরা প্রাণী আহারের জন্য ওদের মাথা ও ঘাড় পালকহীন ঠোঁট ধারালো এবং বাঁকা। এরা ভয়াল দর্শনের হলেও হিংস্র নয় বরং কিছুটা ভীতু স্বভাবের। তবে নিজেদের আওতার মধ্যে পেলে এরা জীবন্ত পশু-পাখি ধরে খায়। অবশ্য তারা বিভিন্ন গোত্রভুক্ত এবং তাদের সাদৃশ্য আসলে অভিসৃত (convergent) বিবর্তনেরই সাক্ষ্য। ক্ষুদে মিশরীয় শকুন পশুর বিষ্ঠা খায়, বিশেষত সিংহের মল, তাতে থাকে প্রচুর অজীর্ণ প্রোটিন। এরা পাথর দিয়ে ডিম ভেঙ্গেও খায়। শকুনের ডানা লম্বা ও চওড়া এবং নখর অপেক্ষাকৃত সোজা। মৃত প্রাণীর খোঁজে তারা ডানা মেলে আকাশে চক্কর দেয়। এদের শিকারকে বাগ মানাতে হয় না, ছেঁড়ার সময় শুধু আটকে ধরতে হয়।

কুড়য়া

আর এক জাতের শিকারি পাখি হচ্ছে কুড়য়া/কুরা/কুরাঈগল। আমাদের দেশে পালাসি কুরাঈগল এবং মেটেমাথা কুরাঈগল নামে দুইজাতের কুড়য়া দেখা যায়। দেখতে অনেকটা ঈগলের মতোই। উজ্জ্বল ভীতিকর চোখ। এক সময় এ দেশের গ্রামগঞ্জের আনাচে-কানাচে কুড়য়ার দীর্ঘলয়ের ডাকাডাকিতে মুখর থাকত। কিন্তু এখন আর এদের তেমন দেখা মেলে না। মূলত মাছ, মুরগি, হাঁস ও ছোট পাখির ছানা এদের প্রধান শিকার।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই সকল প্রতিটি শিকারি পাখি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। কিন্তু মানুষের সৃষ্ট নানা প্রতিকূলতায় আজ এই শিকারি পাখিগুলো হুমকির সম্মুখীন। এর মধ্য কিছু প্রজাতি বিরল হয়ে পড়েছে। এই শিকারি পাখিগুলো আমাদের দেশের সম্পদ। তাই আমাদের উচিত এখনই সচেতন হওয়া এবং এদের রক্ষায় এগিয়ে আসা।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test