E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রুশ ইতিহাসের রহস্যঃ ইভান দ্য টেরিবলের ভাগ্য বিড়ম্বনা

২০১৫ জুলাই ০৮ ১৪:৩৫:০৫
রুশ ইতিহাসের রহস্যঃ ইভান দ্য টেরিবলের ভাগ্য বিড়ম্বনা

পরিতোষ বড়ুয়া লিমনঃ যে কোনো সভ্যতার ইতিহাস বহু রহস্য দিয়ে বোনা, রাশিয়া– তার ব্যতিক্রম নয়। রুশদেশের ইতিহাস যেন জটিল এক শব্দজব্দ। তার এক অংশ মোটামুটি তথ্যভিত্তিক উত্সের মাধ্যমে ভরা, দ্বিতীয়াংশ শব্দজব্দের ফাঁকা ঘর। তবে ভরা ঘরগুলোর মধ্যেও কম ধাঁধা লুকিয়ে নেই, কারণ সেগুলিকে পূর্ণ করেছে নিস্পৃহ লোকেরা নয়। একই ঘটনাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়, তাই উত্তরপুরুষদের মধ্যেও মতভেদের সৃষ্টি হয়।

যে কোনো সভ্যতার ইতিহাস বহু রহস্য দিয়ে বোনা, রাশিয়া– তার ব্যতিক্রম নয়। রুশদেশের ইতিহাস যেন জটিল এক শব্দজব্দ। তার এক অংশ মোটামুটি তথ্যভিত্তিক উত্সের মাধ্যমে ভরা, দ্বিতীয়াংশ শব্দজব্দের ফাঁকা ঘর। তবে ভরা ঘরগুলোর মধ্যেও কম ধাঁধা লুকিয়ে নেই, কারণ সেগুলিকে পূর্ণ করেছে নিস্পৃহ লোকেরা নয়। একই ঘটনাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়, তাই উত্তরপুরুষদের মধ্যেও মতভেদের সৃষ্টি হয়। আমরা চেষ্টা করবো নিজেরা মূল্যায়ণ করার রহস্যময় ও ব্যাখ্যাতীত ঘটনাবলী নিয়ে বিপুল সমৃদ্ধ রাশিয়ার ইতিহাসের।

আমরা জানবো রুশ জারদের (সম্রাটদের) গোপণীয় জীবন সম্পর্কে ও মহান ব্যক্তিদের সেই সব দুর্বলতা সম্পর্কে, যা তারা লুকাতে চাইতেন।

আমরা রাশিয়ার ভূখন্ডে অবস্থিত সেই সব অমূল্য, রহস্যজনক জায়গার বর্ণনা দেব, যেখানে এমন সব কান্ড-কারখানা ঘটে, যার ব্যাখ্যা আধুনিক বিজ্ঞান দিতে অক্ষম।

আমরা সেই সব বিস্ময়কর ঘটনার সরেজমিনে তদন্ত করবো, যা বাস্তবে ঘটেছিল এবং যে কোনো অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাসকে ছাপিয়ে যায়।

আমরা পরিচয় করাবো ধূর্ত সব রুশী কূটনীতিজ্ঞ ও গুপ্তচরদের সঙ্গে, যাদের কাছে সিনেমার জেমস বন্ড হার মানবে।

আমরা সবচেয়ে দুঃসাহসী অ্যাডভেঞ্চারিস্টদের মুখোশ খুলে দেব, যারা বহুআকাঙ্খিত ক্ষমতায় আসীন হওয়ার উদ্দেশ্যে নিজেদের নাম ভাঙিয়ে ছিল ও নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল।

আমরা রুশ পান্ডুলিপি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের স্মৃতিকথায় বর্ণিত জাদুকরী ও ব্যাখ্যাতীত জগতে নিমজ্জন করবো।

আপনারা অতীতে ভ্রমণ করার জন্য তৈরী? তাহলে আসুন, বেরিয়ে পড়া যাক...

ইভান দ্য টেরিবলের ভাগ্য বিড়ম্বনাঃ

ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি রাশিয়ার শাসন ক্ষমতায় আসীন থাকা জার (সম্রাট) চতুর্থ ইভানকে তাঁর সমসাময়িকরা বিনা কারণে ইভান দ্য টেরিবল বলে নাম দেয়নি। প্রথম রুশ জারের (তার আগে সম্রাটরা নিজেদের নাইট বলে অভিহিত করতো) উত্তরাধিকার অভূতপূর্ব। একদিকে তিনি দেশের সীমানা সম্প্রসারিত করতে পেরেছিলেন, যুদ্ধপ্রেমী প্রতিবেশীদের বাগ মানিয়ে। অন্যদিকে, সম্রাটের খামখেয়ালীপনা, বিশেষতঃ শেষবয়সে এবং তার নৃশংসতা রাজত্বকে সারাক্ষণ উদ্বেগে রেখেছিল। চতুর্থ ইভানের রাজত্বকালে গণ মৃত্যুদন্ড দেওয়া হত, যা তার সমকালীনদের ত্রস্ত করেছে। তবে পরবর্তীকালে ঐতিহাসিকরা হিসাব করে দেখেছেন, যে প্যারিসে ভার্ফালিয়েমের একরাত্রে যতজনকে হত্যা করা হয়েছিল, চতুর্থ ইভানের ৪০ বছরের রাজত্বকালে তার চেয়ে অনেক কম লোককে ফাঁসিতে লটকানো হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে জানাই, যে প্যারিসে ঐ নারকীয় রাতটা নেমেছিল ১৫৭২ সালে, যখন রাশিয়ার শাসন ক্ষমতায় ছিলেন ইভান দ্য টেরিবল। ফরাসী রাজা, যিনি একরাত্রে তার ৩০ হাজার প্রজাকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন, তাকে কিন্তু কেউ টেরিবল বলে অভিহিত করেনি। তবে সে অন্য কাহিনী।

চতুর্থ ইভান ৮ বছর বয়সে অনাথ হয়ে যান। তার নামে দেশ শাসন করতো পারিষদরা। বালক জারকে তারা পাত্তা দিত না। পরবর্তীকালে ইভান স্মৃতিচারণা করেছিলেন, যে তার খাওয়া পরার কোনো অভাব তারা রাখতো না। মনে করা হয়, যে সেই সময়ের অপমান ও ত্রাস জারের প্রকৃতিকে নৃশংস করে তুলেছিল।

জার ইভান সিংহাসনে বসেন ১৫৪৭ সালের জানুয়ারীতে আর ফেব্রুয়ারীতে তিনি ছোট্ট আনাস্তাসিয়াকে বিবাহ করেছিলেন। সেই সময় তরুন জার সর্বত্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সন্দেহ করতেন। আজ বলা মুশকিল, সত্যিই ষড়যন্ত্র ছিল কিনা। যাই হোক না কেন, ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বহু লোককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। যুবক স্বামীর নৃশংস চরিত্র তরুনী রানীকে আতঙ্কিত করতো। তাকে বাঁচিয়েছিল ভয়ঙ্কর বিপর্যয়– অগ্নিকান্ড, যা অর্ধেকের বেশি মস্কোকে ছাই করে দিয়েছিল। ঐ ঘটনার পরে জার প্রজাদের দুর্দশা দেখে শিহরিত হয়ে উঠে খানিকটা নরম হয়েছিলেন। রাশিয়ার সমৃদ্ধি ঘটেছিল তারপরে ১৩ বছর ধরে। কিন্তু তারপর অকস্মাৎ মৃত্যু হয় রানী আনাস্তাসিয়ার। ইভান মুষড়ে পড়েছিলেন। আবার শুরু করলেন হত্যালীলা। অতঃপর জারের হিংস্র প্রকৃতিকে বশে আনার মতো আর কেউ থাকলো না। ইভান মাতলেন নৃশংস রক্তক্ষয়ী হত্যালীলায়। আনাস্তাসিয়ার পরে তার আরও ৬ জন পত্নী ও অসংখ্য দাসী হয়েছিল, কিন্তু তাদের কেউই প্রথম রানীর অভাব পূরণ করতে পারেনি।

ইভানের মতোই ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হয়েছিল তার দেহাঙ্গিনীরাও। রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় দ্বিতীয় পত্নী মারিয়ার। তৃতীয় রানী মারফা বিবাহবাসরের মাত্র ১৫ দিন পরে মারা যায়। একই নামের দুই পত্নী আন্নাদের জারের আদেশে জোর করে মস্তকমুন্ডন করে মঠে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মারিয়া নামের আরও একজন স্ত্রীকে জার ইভান বিবাহের পরের দিনই জলে ডুবিয়ে মারার আদেশ দেন, সে নাকি কুমারী ছিল না– এই সন্দেহে। ১৫৮০ সালে জার শেষবার বিবাহ করেছিলেন আরও এক মারিয়াকে, যে জন্ম দিয়েছিল রাজপুত্র দমিত্রির। শীঘ্রই জার তার প্রতি নিরাসক্ত হয়ে মারিয়াকে পুত্রসহ উগলিচ শহরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

ইভান দ্য টেরিবলের সন্তানদেরও দুর্ভাগ্য তাড়া করেছিল। প্রিয়তম পত্নী আনাস্তাসিয়ার জন্ম দেওয়া তিন কন্যা বাল্যকালেই মারা যায়। কনিষ্ঠ পুত্র নদীর জলে ডুবে যায়। অন্যপুত্র, ২৭-বছর বয়সী জারের প্রিয়তম সিংহাসনের উত্তরাধিকারী দমিত্রিকে জার স্বয়ং বচসা চলা কালে রাজদন্ড দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছিলেন রাগের বশে। তার অসংখ্য সন্তানদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বেঁচে ছিল একমাত্র রোগগ্রস্ত ও দেশ পরিচালনায় অক্ষম ফেওদর। কিন্তু ১৫৮৪ সালে তারই কপালে ছিল পিতার মৃত্যুর পরে সিংহাসনে আসীন হওয়া। ফেওদরের ছেলেপুলে ছিল না। এভাবেই স্বনামধন্য রিউরিকের সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।

এর পরে রাশিয়ায় দেড় দশক ধরে চলেছিল অরাজকতা ও মাত্স্যন্যায়। এই দুঃখকষ্টকে কি ইভান দ্য টেরিবলের ভুলের জন্য শাস্তি বলা যেতে পারে? ঐতিহাসিকরা এর বিভিন্ন উত্তর দিয়ে থাকেন। তবে এটা অস্বীকার করা যায় না, যে জীবনের অধিকাংশ সময় ধরেই জার ইভান তার ঘনিষ্ঠদের নির্যাতন করেছিলেন। এবং হতে পারে, যে ভাগ্য অত্যাচারী শাসককে তার নৃশংসতার প্রত্যুত্তর কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দিয়েছিল।

রাশিয়া, রাশিয়ার মুখ, রুশী ইতিহাসের রহস্য, সমাজ জীবন

(এলপিবি/জুলাই ০৮, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test