E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রুশ ইতিহাসের রহস্যঃ জালিয়াত দামিত্রির মুখোশ

২০১৫ জুলাই ১২ ১২:৩৮:৩৯
রুশ ইতিহাসের রহস্যঃ জালিয়াত দামিত্রির মুখোশ

পরিতোষ বড়ুয়া লিমনঃ চিরকাল সব জাতির মানুষের মধ্যে যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় আসীন হতে উত্গ্রীব লোক কম ছিল না। অনুগামীদের আকৃষ্ট করে এই সব লোক সিংহাসনের ন্যায্য উত্তরাধিকার বলে দাবী জানাতো। অধিকাংশ নাম ভাড়ানো মিথ্যুকরা ধরা পড়েছে, তবে কেউ কেউ সিংহাসনে আসীন হতে পেরেছে। সপ্তদশ শতকের সূচনাকে রাশিয়ায় মাত্স্যন্যায় বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

চিরকাল সব জাতির মানুষের মধ্যে যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় আসীন হতে উত্গ্রীব লোক কম ছিল না। অনুগামীদের আকৃষ্ট করে এই সব লোক সিংহাসনের ন্যায্য উত্তরাধিকার বলে দাবী জানাতো। অধিকাংশ নাম ভাড়ানো মিথ্যুকরা ধরা পড়েছে, তবে কেউ কেউ সিংহাসনে আসীন হতে পেরেছে।

সপ্তদশ শতকের সূচনাকে রাশিয়ায় মাত্স্যন্যায় বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ইভান দ্য টেরিবলের পুত্র নিঃসন্তান ফেওদরের মৃত্যুর পরে নাইট রিউরিকদের সাম্রাজ্যের অবসান ঘটেছিল। সিংহাসন তার পরে অধিকার করেন পারিষদ বরিস গদুনোভ। তার তেমন জনপ্রিয়তা ছিল না। উপরন্তু জনশ্রুতি ছিল, যে গদুনোভই অল্পবয়সে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী রাজপুত্র দমিত্রিকে হত্যার জন্য দায়ী। গদুনোভ অসন্তুষ্টদের কড়া শাস্তি দিত, কিন্তু জারের প্রতি ঘৃণা তাতে বেড়েই চললো। যখন ১৬০১ সালে রাশিয়ায় দুর্ভিক্ষ ঘটলো, তখন জনতা জারকেই তার জন্য দায়ী করলো।

এদিকে সিগিজমুন্ডের রাজত্বে পোল্যান্ডের রাজসভায় আবির্ভাব হয়েছিল এক তরুনের, যে নিজের পরিচয় দিয়েছিল অকল্পনীয় সৌভাগ্যবশতঃ বেঁচে যাওয়া রাজপুত্র দমিত্রি বলে। সে পোল্যান্ডের রাজাকে অনুরোধ করেছিল ক্ষমতা কুক্ষিগত করা গদুনোভকে উত্খাত করতে সাহায্য করার জন্য। আধুনিক ঐতিহাসিকরা এখনো তর্ক করেন, যে ঐ লোকটা আদপে কে ছিল। অধিকাংশই সমর্থন করে বরিস গদুনোভের বক্তব্য, যে সে আসলে ছিল গ্রিগোরি নামের পলাতক এক সন্ন্যাসী। অন্যরা জোর দিয়ে বলে, যে নামভাড়ানো দমিত্রি আসলে ছিল পোল্যান্ডের একজন রাজার জারজ পুত্র। সিগিজমুন্ড ও তার পারিষদদের বয়েই গেছিল রাশিয়ায় কি নামের জার সিংহাসনে আসীন হবে। তাদের দরকার ছিল রাশিয়ায় অরাজকতা, যাতে সেই সুযোগে নিজেদের আখের গোছানো যায়। নামভাড়ানো লোকটি প্রতিশ্রুতি দিতে কার্পণ্য করেনি। রাজা সিগিজমুন্ডকে সে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ক্যাথলিক পোপের কাছে অঙ্গীকার করেছিল অর্থোডক্স খ্রীষ্টান রাশিয়াকে ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাসীতে পরিণত করার। সুতরাং ঐ জালিয়াত বিভিন্ন পক্ষ থেকে পুরো সমর্থন পেয়েছিল।

ছোট একটা ফৌজ নিয়ে জালিয়াত দমিত্রি এসেছিল রাশিয়ার সীমান্তে। মনে হয়েছিল, যে বরিস গদুনোভের বিশাল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার জেতার কোনোই সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এখানে কাজ করলো জনসাধারনের জার বরিসের প্রতি ঘৃণা। রুশী সেনারা দলবদল করে যোগ দিতে লাগলো জালিয়াত দমিত্রির ফৌজে, নগরবাসীরা তাদের দূর্গের দুয়ার উন্মুক্ত করে দমিত্রিকে অভ্যর্থনা জানাতে লাগলো। পরাজয়ে শিহরিত হয়ে বরিস গদুনোভ শীঘ্রই মারা যান। লোকে বলতো, যে তিনি নাকি বিষপান করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ১৬০৫ সালে সমস্ত গীর্জায় ঘন্টাধ্বনির সাথেসাথে জালিয়াত দমিত্রি প্রবেশ করলো মস্কোয়।

কিন্তু জালিয়াত একটা গুরুতর সমস্যার কথা ভুলে যায়নি। জনগণের কাছে তার ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের আইনানুগতা প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজন ছিল রাজমাতা মারিয়ার সমর্থন, যিনি ছিলেন সত্যিকারের দমিত্রির মাতা। তাদের দেখা হয়েছিল কোনো সাক্ষী ছাড়া। আমরা কোনোদিন জানতে পারবো না, যে পুত্রহারা রাজমাতা ও তার পুত্রের মুখোশধারী লোকটির মধ্যে কি কথাবার্তা হয়েছিল। কিন্তু ফলশ্রুতিতে রাজমাতা জনগণের কাছে ঘোষনা করেছিলেন, যে নতুন জারই আসল রাজপুত্র দমিত্রি। জালিয়াত রাশিয়ার সিংহাসনে আসীন হল। জনগণ আনন্দে মেতে উঠলো।

সবচেয়ে আকাঙ্খিত স্বপ্ন সার্থক হল। এই তো আরাধ্য ক্ষমতা। কিন্তু হিসাব মেটানোরও সময় হল – পোল্যান্ডের রাজার, ক্যাথলিক পোপের, পারিষদদের, ভাড়া করা সৈনিকদের। জালিয়াত দমিত্রির সাথে মস্কোয় আসা পোলিশরা এমন আচরন করতে শুরু করলো, যেন তারা জয় করা নগরীতে। হিংসা ও অরাজকতা ছড়ালো তারা। জালিয়াত দমিত্রি নিজেও মস্কোবাসীদের ভালোমন্দকে গুরুত্ব দিত নাঃ রাজদরবারে বিভিন্ন পোলিশ ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করলো, অর্থোডক্স রীতিনীতি মানতো না, পারিষদদের প্রকাশ্যে ব্যাঙ্গ করতো। জনগণের উল্লাস পরিণত হল প্রথমে মোহভঙ্গে, তারপরে ক্ষোভে। এ কি সত্যিকারের জার? সহ্যক্ষমতার শেষবিন্দুটি ভরে গেল, যখন জালিয়াত দমিত্রি ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাসী পোলিশ মেয়ে মারিনা ম্নিশেককে বিবাহ করলো ও তাকে অর্থোডক্স রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী বলে ঘোষনা করলো। পারিষদবর্গ দ্বারা উদ্দীপ্ত দেশের জনগণ অভ্যুত্থান ঘটালো। জালিয়াত দমিত্রি খুন হল। তাকে পুত্র বলে স্বীকার করা মারিয়া জালিয়াতকে আর স্বীকার করলেন না, এই বলে, যে সে ভয় দেখিয়ে তাকে মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য করেছিল। মৃত জালিয়াতের মুখে কেউ একজন ভাঁড়ের মুখোশ পরিয়ে দিল। ভাগ্যের কৌতুকঃ যে জীবতকালে জারের মুখোশ পরে ছিল, মরণোত্তরকালে তার পুরস্কার জুটলো ভাঁড়ের মুখোশ। কিন্তু সত্যিই কে ছিল ঐ লোকটা? সে রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি।

রাশিয়া, রাশিয়ার মুখ, ধর্ম, গণ অভ্যুত্থান, রুশী ইতিহাসের রহস্য, সমাজ জীবন

(এলপিবি/জুলাই ১২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test