E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সমাজকল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

২০১৫ জুলাই ১৩ ২১:০০:৫৪
সমাজকল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

।।সৌমিত্র দেব।।

সমাজকল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কতটা এগিয়েছে এ সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিলনা । কিন্তু সৈয়দ মহসিন আলীর মতো একজন নিবেদিত প্রাণ সমাজকর্মী যখন এই মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পেলেন তখন থেকে সুযোগ হলো তাদের কর্মকান্ড কাছে থেকে দেখার । শুধু মহসিন আলী নন , এই মন্ত্রনালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসাবে কাজ করছেন এদেশের একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ এডভোকেট প্রমোদ মানকিন । বিশেষ করে আমাদের দেশের একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যেখানে এতিমদের টাকা মেরে দেয়ার অভিযোগ আছে সেখানে সমাজকল্যাণমন্ত্রী হবার পর সৈয়দ মহসিন আলীকে আমরা দেখলাম তার প্রথম ইফতার এতিমদের সঙ্গে করতে । সমাজকল্যাণে অবদান রাখার জন্য তিনি সম্প্রতি কলকাতায় স্বর্ণ পদকে ভূষিত হয়েছেন ।

দুস্থ, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৭৪ সালে দেশে সমাজকল্যাণ বিভাগের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বাংলাদেশে সমাজসেবা কার্যক্রমে রয়েছে পথ পরিক্রমার এক সুবর্ণ ইতিহাস। দুস্থ, অবহেলিত এবং অধিকার বঞ্চিত আমাদের কাছের মানুষও যেন একীভূত হতে পারে সমাজের মূল স্রোতের সাথে, গাইতে পারে জীবনের জয়গান সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় তথা সমাজসেবা অধিদফতর। পূর্বে এ মন্ত্রণালয়ের নাম ছিল স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ এবং শ্রম ও জনশক্তি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সমাজকল্যাণ সংক্রান্ত কাজের ব্যাপক বিস্তৃতি ও গুণগতমান উপলব্ধি করে সরকার ১৯৮৯ সালে এ মন্ত্রণালয়কে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নামে একক মন্ত্রণালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের যাত্রা
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, প্রচলিত আইন, সরকারের অনুসৃত নীতি এবং অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ মন্ত্রণালয় গ্রহণ করে নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা এবং বাস্তবধর্মী কর্মসূচি। এজন্য নিয়মিত বৈঠক, মতবিনিময় এবং অংশীদারিত্বমূলক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় গ্রহণ করে বিভিন্ন কর্মসূচি। বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এতিম, প্রতিবন্ধী, সমাজের অবহেলিত, দুস্থ গরিব, অসহায় বৃদ্ধ এবং সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য দাতব্য কর্মসূচির পরিবর্তে অধিকারভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার এক দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করে যাচেছ। সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গি এবং পদ্ধতির পরিবর্তে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে দৃঢ় প্রত্যয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত এবং তাঁর সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিনবদলের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব এবং অঙ্গ সংস্থাসমূহের প্রধানগণসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাখছেন উত্তম সেবার সেরা স্বাক্ষর। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ও প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন তাদের সুযোগ্য নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । সমাজসেবা অধিদপ্তরকে গতিশীল ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছেন মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান । তিনি অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান
বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় তার ৪ টি অঙ্গ সংস্থার মাধ্যমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ সংস্থাগুলো হচেছ –
ক. সমাজসেবা অধিদফতর
খ. বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ
গ. জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন
ঘ. শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান ট্রাস্ট।

সমাজসেবা অধিদফতরের আত্মপ্রকাশ
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় তথা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম জাতিগঠনমূলক প্রতিষ্ঠান হচেছ সমাজসেবা অধিদফতর। ব্যাপক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এ অধিদফতর ১৯৬১ সালে সৃষ্টি হয়। প্রথমতঃ এ অধিদফতরের মর্যাদা ছিল পরিদফতর হিসেবে। সে সময় নাম ছিল সমাজকল্যাণ পরিদফতর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সমাজকল্যাণ পরিদফতরকে সমাজকল্যাণ বিভাগে উন্নীত করেন। তিনি এসময় গ্রহণ করেন কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বাংলাদেশের শিশুদের অধিকার সুরক্ষার জন্য প্রবর্তন করেন যুগান্তকারী শিশু আইন ১৯৭৪। তিনি শহর অঞ্চল থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সমাজসেবার কর্মধারাকে সম্প্রসারিত করেন। দরিদ্র মানুষের মুক্তির এবং আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রবর্তন করেন পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম এবং জনসংখ্যা কার্যক্রমে পল্লী মাতৃকেন্দ্রের ব্যবহার কর্মসূচি, সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমসহ সমাজের দুঃস্থ মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে গর্বিত অংশীদার সমাজসেবা অধিদফতর। বর্তমানে এ অধিদফতরের আওতায় বিভিন্ন ধরনের ৪২ টি কর্মসূচি পরিচালিত হচেছ।

সিটিজেন চার্টার
সমাজসেবা অধিদফতরের কার্যক্রম ও প্রদেয় সেবা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা, তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা এবং সেবার মান উন্নয়ন ও সেবা প্রদানে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সমাজসেবা অধিদফতর সিটিজেন চার্টার প্রকাশ করছে। অধিদফতরের সদর কার্যালয়সহ জেলা ও উপজেলা মিলিয়ে রয়েছে ৭৩৫টি কার্যালয়।

প্রশাসন ও অর্থ অধিশাখা
অধিদফতরে রয়েছে পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) এর নেতৃত্বে প্রশাসন ও অর্থ অধিশাখা। সমাজসেবা অধিদফতরের প্রশাসন, অর্থ, বাজেট, শৃঙ্খলা, তদন্ত, পরিকল্পনা, গবেষণা, মূল্যায়ন, প্রশিক্ষণ, প্রকাশনা, গণসংযোগ, ভাণ্ডার সংরক্ষণ, যন্ত্রপাতি, মুদ্রণ ও মনোহারী দ্রব্য ও যানবাহন ইত্যাদি সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার কাজ এই অধিশাখা করে থাকে।

কার্যক্রম অধিশাখা
সদর দপ্তর পর্যায়ে পরিচালক (কার্যক্রম) এবং অতিরিক্ত পরিচালক কার্যক্রমের নেতৃত্বে দায়িত্ব সমাজসেবা অধিদফতরের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি, চিকিৎসা ও প্রবেশন কর্মসূচি, নিবন্ধনসহ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং এর কাজ কার্যক্রম অধিশাখার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

প্রতিষ্ঠান অধিশাখা
সমাজসেবা অধিদফতরের প্রতিষ্ঠান অধিশাখা এতিম ও অনাথ শিশু, প্রতিবন্ধী, দুস্থ, ভবঘুরে, অপরাধপ্রবণ ও সামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকল প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন, নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং কাজ সম্পাদন করে থাকে।

প্রতিবন্ধী বিষয়ক কার্যক্রম
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় তথা সমাজসেবা অধিদফতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য গ্রহণ করেছে বিভিন্ন কর্মসূচি। এ সকল কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৬৪ টি জেলায় ৬৪ টি সমন্নিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম। সাধারণ বিদ্যালয়ে চক্ষুষ্মান ছাত্রদের সাথে একই পরিবেশে এবং একই সাথে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রদের পড়াশুনার সুযোগ দানের জন্য এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচেছ।
সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫ টি, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য ৭ টি বিদ্যালয়, মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ টি প্রতিষ্ঠান, শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ১টি, গ্রামীণ প্রশিক্ষণ উপকেন্দ্র ১ টি, প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদন কেন্দ্র ১ টি, কৃত্রিম অঙ্গ উৎপাদন কেন্দ্র ১ টি, মিনারেল ওয়াটার প্লান ১ টি এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রদের জন্য ব্রেইল প্রেস পরিচালিত হচেছ। এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সর্বমোট ৯ হাজার ৮৫০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি

ক. বয়স্ক ভাতা
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বিগত শাসন আমলে সর্বপ্রথম প্রবর্তন করেন সাংবিধানিক অঙ্গীকার বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বয়স্কভাতা কার্যক্রম। এটি সরকারের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে, সমন্নুত হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ভাতা কার্যক্রম প্রবর্তনের মাধ্যমে আমাদের শ্রদ্ধেয় গুরুজন বয়স্ক ব্যক্তিদের এক দিকে যেমন দিয়েছেন শেষ বয়সের আর্থিক নিরাপত্তা অন্যদিকে সমাজসেবা অধিদফতরকে পরিচিত করেছে আমাদের গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের সাথে। প্রধানমন্ত্রী প্রবর্তিত এ কর্মসূচি প্রথমতঃ শুরু হয় সীমিত পরিসরে চালু করা হলেও প্রধানমন্ত্রী এ কার্যক্রমের ব্যাপক গতির সঞ্চার করেন। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ভাতাভোগীর সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষ জন এবং বরাদ্দ ছিল ৬০০ কোটি টাকা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এবং সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালকের বিশেষ তদারকিতে এ ভাতা বিতরণ কার্যক্রম প্রায় শতভাগ নিশ্চিত হয় যা ছিল রেকর্ড পরিমাণ। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সরকার এ ভাতার হার বাড়িয়ে ৪০০ টাকায় উন্নীত করেন এবং এ জন্য বরাদ্দ করেন ১৩০৬.৮ কোটি টাকা। বর্তমানে ২৭ লক্ষ ২২ হাজার ৫০০ জন এ ভাতা ভোগ করছেন।

খ. মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা অসচছল অবস্থায় আছেন তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২০০০-০১ অর্থ বছরে প্রবর্তন করেন মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেন। এর ফলশ্রুতিতে ভাতার পরিমাণ জনপ্রতি ৫০০০/- টাকায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে ২ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা লাভ করছেন। এ জন্য সরকার ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ করেছেন ১২০০ কোটি টাকা।

গ. বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা দুস্থ মহিলাদের ভাতা
১৯৯৮ সালে এ কর্মসূচি শুরু হয়। বর্তমানে ৪০০ টাকা হারে ২০১৪-১৫ অর্থ-বছরে প্রায় ১০ লক্ষ ১২ হাজার বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত দুস্থ মহিলাকে এ ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এ খাতে বর্তমান অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ৪৮৫ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা।

ঘ. অসচছল প্রতিবন্ধী ভাতা
সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য প্রবর্তন করে অসচছল প্রতিবন্ধী ভাতা। এ কার্যক্রমের আওতায় ৪ লক্ষ অসচছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মাসে ৫০০/- টাকা হারে বর্তমান অর্থ বছরে ভাতা ভোগ করছে। এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২৪০.০০ কোটি টাকা।

ঙ. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি
সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষিত করার লক্ষ্যে তাদের জন্য ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে প্রবর্তন করেছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি। ৪ স্তরে এ বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক স্তরে ৩০০/- টাকা, মাধ্যধিক স্তরে ৪০০/- টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০/- টাকা এবং উচ্চতর স্তরের জন্য মাসিক ১,০০০/- টাকা হারে মোট ৫০ হাজার জনকে এ ভাতা প্রদান করা হচেছ। এ জন্য সরকারের বরাদ্দ রয়েছে ২৫.৫৬ কোটি টাকা।

দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি
ক. পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম
বাংলাদেশের গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের আত্মকর্মসংস্থান এবং তাদের অধিকার সচেতনতার জন্য পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচেছ। এ কার্যক্রমের আওতায় তৃণমূল পর্যায়ে দলগঠনপূর্বক ব্যক্তি, পরিবার, এবং সমাজ উন্নয়নের জন্য লক্ষ্যভুক্ত গরিব নারী-পুরুষদের প্রদান করা হয় সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা। বর্তমানে এ কর্মসূচির আওতায় ২৫৫ কোটি টাকা সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। আবর্তক তহবিল হিসেবে ব্যবহৃত এ কর্মসূচির আওতায় উপকৃত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ২৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ।

খ. জাতীয় জনসংখ্যা কার্যক্রমে পল্লী মাতৃকেন্দ্রের ব্যবহার কর্মসূচি
১৯৭৫ সালে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রামীণ গরিব মহিলাদের জন্য এ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। এ কার্যক্রমের লক্ষ্যভুক্ত ব্যক্তিগণ হচেছ বিবাহিত মহিলা। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এ কর্মসূচির আওতায় সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। এ কর্মসূচির জন্য সরকার আবর্তক তহবিল হিসেবে বরাদ্দ করেছে ৩৯ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। বর্তমানে এ কর্মসূচির আওতায় উপকৃত পরিবারের সংখ্যা ৮ লক্ষ ৪২ হাজার ৭ ।

গ. শহর সমাজসেবা কার্যক্রম
শহর সমাজসেবা কার্যক্রম সমাজসেবা অধিদফতরের পুরাতন কর্মসূচি। এ কর্মসূচির আওতায় শহর এলাকায় দরিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বেকার যুবক যুবতীদের কম্পিউটারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এ কর্মসূচি পালন করছে অনন্য ভূমিকা। এ কর্মসূচির আওতায় সরকার আবর্তক তহবিল হিসেবে বরাদ্দ করেছে ৩০ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা এবং এর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজারটি পরিবার।

ঘ. এসিডদগ্ধ মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম
সরকার এসিডদগ্ধ মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজে পুনর্বাসনের জন্য সরকার প্রবর্তন করেছে এসিডদগ্ধ মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম। এ কার্যক্রম সকল উপজেলা ও শহর সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচেছ। এজন্য সরকার আবর্তক তহবিল হিসেবে বরাদ্দ করেছে ৮৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা। এ কার্যক্রমের আওতায় উপকৃত পরিবারের সংখ্যা ১ লক্ষ ৪৯ হাজার।

শিশু বিষয়ক কর্মসূচি

ক. শিশু পরিবার
সমাজসেবা অধিদফতরের অন্যতম কর্মসূচি হচেছ সরকারি শিশু পরিবার। বর্তমানে দেশে ৮৫ টি শিশু পরিবার রয়েছে। এ সকল শিশু পরিবারের সর্বমোট আসন সংখ্যা ১০ হাজার ৩০০ জন। ৫ বছর উর্ধ্ব এতিম শিশুদের এ সকল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। শিশু পরিবারে প্রতিপালিত শিশুদের বিনামূল্যে ভরণপোষণসহ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। ১৮ বছর পরে তাদেরকে সমাজে পুনর্বাসন করা হয়। এ পর্যন্ত (জুলাই ১৪) সরকারি শিশু পরিবার হতে পুনর্বাসিতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৬৪২ জন।

খ. ছোটমণি নিবাস
সমাজসেবা অধিদফতর পরিত্যক্ত, ঠিকানা ও দাবীদারহীন শিশুদের দায়িত্ব গ্রহণ করে পরিচালনা করছে ৬ বিভাগে ৬ টি ছোটমণি নিবাস। মহাপরিচালক সমাজসেবা অধিদফতর এ সকল শিশু বিধিসম্মত অভিভাবক। শূন্য থেকে ৫ বছর পর্যনÍ শিশুদের এ সকল প্রতিষ্ঠানে গ্রহণ করে মাতৃস্নেহে প্রতিপালন করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এ সকল শিশুদের শিশু পরিবারে স্থানানÍরিত করা হয়। এ পর্যন্ত (জুলাই ১৪) পুনর্বাসনের সংখ্যা ১ হাজার ৯১ জন।

গ. দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র
সমাজসেবা অধিদফতর দুঃস্থ এবং পিতামাতা পরিত্যক্ত শিশুদের ভরণপোষণ ও শিক্ষা প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য দেশে ৩ টি এ ধরণের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচেছ ও শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, টুঙ্গীপাড়া, গোপালগঞ্জ, দুঃস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, কোনাবাড়ী, গাজীপুর, দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, রাংগুনিয়া, চট্টগ্রাম। ৩ টি প্রতিষ্ঠানের ধারণক্ষমতা ৭৫০ জন।

ঘ. কিশোর কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্তৃক প্রণীত ঐতিহাসিক শিশু আইনের আওতায় দেশে বর্তমানে ৩ টি কিশোর কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালিত হচেছ। প্রতিষ্ঠান ৩টি হচ্ছে, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, টঙ্গী, গাজিপুর, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, পুলের হাট, যশোর, কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র, কোণাবাড়ি, গাজিপুর। ১৬ বছরের নীচে আইনের সংঘাতে লিপ্ত শিশুদের আদালতের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি করে কিশোর আদালত রয়েছে। সংশোধন এবং সুনাগরিক হিসেবে সমাজে পুনর্বাসনের জন্য এ সকল প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কাউন্সিলিং, বিনোদন, খেলাধুলাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা।

সমাজসেবা অধিদফরের কর্মসূচি

ক. হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন:
২০১২-২০১৩ মেয়াদকালে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে এ কর্মসূচি শুরু হয়। পাইলট হিসেবে দেশের ৭ টি জেলায়(ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা, বগুড়া ও সিলেট)এ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। বর্ণিত বছরে ৪ স্তরে ১৩৫ জন হিজড়া শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপবৃত্তি এবং ১৮ বছর বা তদুর্ধ্ব ৩৫০ জন হিজড়াকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থ ছিল ৪০৭.৯১৬ লক্ষ টাকা। উক্ত বছর ২১ টি জেলায় বাস্তবায়িত এ কর্মসূচির আওতায় ৭৬২ জন হিজড়া শিক্ষার্থী উপবৃত্তি, ১৮ বয়স উর্ধ্ব ১০৭১ জনকে মাসিক ৩০০ টাকা হারে ভাতা এবং ৯৫০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩৫ জেলায় কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হবে।

খ. বেদে, দলিত ও হরিজন সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি :
২০১২-২০১৩ মেয়াদকালে বেদে, দলিত ও হরিজন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে তাদের জীবনমান সাধারণের পর্যায়ে উন্নীত করার নিমিত্ত এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হয়। পাইলট হিসেবে দেশের ৭টি জেলায়(ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, যশোর, নওগাঁ ও হবিগঞ্জ) এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। উক্ত বছরে বরাদ্দকৃত ৬৬.০০ লক্ষ টাকায় ৪ স্তরে ৮৭৫ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপবৃত্তি এবং ৫০ বছর বা তদুর্ধ্ব ২১০০ জনকে মাসিক ৩০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থ ৭৯৬.৯৮ কোটি টাকা। ২১ টি জেলায় এ কর্মসূচির আওতায় ২৮৭৭ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪ স্তরে উপবৃত্তি প্রদান, ১০৫০ জনকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও ১০,৫০০ জনকে ৩০০ টাকা হারে মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩৫টি জেলায় কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হবে।

গ. ক্যান্সার, কিডনী ও লিভার সিরোসিস রোগীর আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি :
ক্যান্সার, কিডনী এবং লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত গরীব রোগীদের সহায়তায় দেশব্যাপী এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ক্যান্সার, কিডনী ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত গরীব রোগীদেরকে এককালীন ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে রোগীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই এ কর্মসূচির লক্ষ্য। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ২ কোটি ৮২ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকার মাধ্যমে ৫৬১ জন দরিদ্র রোগীকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা হারে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে ১০.০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

ঘ. চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন :
চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধানকল্পে তাদের আপদকালীন সময়ে খাদ্য সহায়তা প্রদান, পরিবার ও সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধির নিমিত্ত ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে রাজস্ব বাজেটের আওতায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত ১.০০ কোটির মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলার সদর ও রাজনগর উপজেলার ১৯৪০ জন চাশ্রমিকের মধ্যে জনপ্রতি ৫০০০ টাকা হারে ৯৭ লক্ষ টাকার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে ৫.০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

ঙ. প্রতিবন্ধিতা সনাক্তকরণ জরিপ:
‘প্রতিবন্ধী জরিপে অংশ নিন, দিন বদলের সুযোগ দিন’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সঠিক পরিসংখ্যান নির্ণয়ের লক্ষ্যে ২০১১-১২ অর্থবছর হতে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ১৭ জুলাই/২০১৪ পর্যন্ত ১৭,৫০,৭১৬ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জরিপকৃত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ৫৬৪ টি উপজেলা/ইউসিডির এ পর্যন্ত ডাক্তার কর্তৃক শনাক্তকৃত প্রতিবন্ধী ১২,৯৭,৪২৫ জন।
প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচির আওতায় মাঠ পর্যায়ের সংগৃহীত তথ্য সংরক্ষণের জন্য ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় Disability Information Storage Software তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

চ. ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান :
ঢাকা মহানগরীকে ভিক্ষুকমুক্তকরণ এবং ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিতদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০১০ সালে কর্মসূচিটি গ্রহণ করা হয়। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনভূক্ত ১০টি জোনে জরিপ করে ১০,০০০(দশ হাজার) জন ভিক্ষুকের আর্থসামাজিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। জরিপকৃতদের মধ্য হতে পাইলটিং পর্যায়ে ময়মনসিংহ জেলায় ৩৭ জন ও জামালপুর জেলায় ২৯ জন ভিক্ষুককে রিক্শা, ভ্যান ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার পুঁজি হিসেবে মূলধন প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর ৬ (ছয়)টি জোনকে ভিক্ষুকমুক্ত করার কাজ চলমান। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার বিসয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদন গ্রহণের কার্যক্রম চলমান। এ কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হলে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে এবং পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করার মাধ্যমে ঢাকা শহরকে ভিক্ষুক মুক্ত করাও সহজ হবে।

সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কার্যক্রম

ক. সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র
১৯৪৩ সালের বঙ্গীয় ভবঘুরে আইন অনুযায়ী বর্তমানে সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় ৬ টি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র পরিচালিত হচেছ। এ সকল আশ্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে ভবঘুরে ব্যক্তি, ভিক্ষুকদের বিশেষ আদালত কর্তৃক ঘোষণার পর গ্রহণ করা হয়। তাদেরকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কাউন্সিলিং প্রদানের মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসন করা হয়।

খ. সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র
সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক অনৈতিক পেশায় জড়িত এবং পথচারীদের হাত থেকে উদ্ধারকৃত মেয়েদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ উপযুক্ত কাডন্সিলিং প্রদানপূর্বক সমাজে পুনর্বাসন করার জন্য ৬ টি বিভাগে ৬ টি সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হচেছ।

গ. মহিলা ও শিশুকিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র (সেফহোম) :
থানা/কারাগারে আটক মহিলা ও শিশু-কিশোরীদের ভরণপোষণ, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন এবং পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট ও ফরিদপুর জেলায় সেফ হোমের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রটি নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা ৩০০ এবং আদালত কর্তৃক মুক্তির মাধ্যমে এ পর্যন্ত পুনর্বাসনের সংখ্যা ৭,১৭০।

ঘ. প্রবেশন ও আফটার কেয়ার সার্ভিস
প্রবেশন এন্ড আফটার কেয়ার সার্ভিস একটি অন্যতম সমাজভিত্তিক অপরাধ সংশোধনমূলক কার্যক্রম। প্রথমবারের অপরাধী ও লঘু অপরাধে দন্ডিত অথবা বিচারাধীন অপরাধীদের জেলখানায় না রেখে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে কেস ওয়ার্ক, সংশোধন, সামাজিকীকরণ ও অন্যান্য আইনসংগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ১৯৬০ সালে দ্যা প্রবেশন অফ অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স (সংশোধিত) এবং পরবর্তীতে সংশোধিত প্রবেশন এ্যাক্ট ১৯৬৪ বিধি এর আওতায় পারিবারিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে ৭১ টি ইউনিটে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে শিশু আইন ২০১৩ এর ৫(৩) ধারা মোতাবেক সকল উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে প্রবেশনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় প্রবেশনে মুক্তি ১৩,৪৩৬ জন এবং আফটার কেয়ার সেবা প্রদান করা হয়েছে ৮১,৮৭৮ জনকে।

হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম
সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৯১ টি হাসপাতাল এবং ৪১৯টি উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অসহায়, দুঃস্থ, গরিব রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা এবং রোগ মুক্তির পর পুনর্বাসনের সহায়তা করাই এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে গরিব রোগীদের প্রয়োজনবোধে ঔষধ, পথ্য, যাতায়াত ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। এ কর্মসূচির আওতায় স্থানীয়ভাবে তহবিল সংগ্রহের জন্য রয়েছে রোগী কল্যাণ সমিতি। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ অসহায়, গরীব রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে।

কমিউনিটি ক্ষমতায়ন কার্যক্রম
সমাজসেবা অধিদফতর স্বেচ্ছাসেবী সমাজকর্মীদের সংগঠিত করে সমাজ উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহ ( নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অর্ডিন্যান্সে, ১৯৬১ এর আওতায় এ পর্যন্ত ৬২ হাজার ৭৭৩ টি সংস্থাকে নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে। সম্প্রতি নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের মধ্যে ১০৮২৭টি নিষ্ক্রিয় সংস্থা ইতোমধ্যে বিলুপ্ত করা হয়েছে।

শিশু উন্নয়ন কার্যক্রম
সমাজসেবা অধিদফতর শিশুদের জন্য স্কার ( সার্ভিসেস ফর চিলড্রেন এ্যাট রিস্ক), সিএসপিবি, শিশু বিকাশ কেন্দ্র নামে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত করছে। এ সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, শিশুদের অনানুষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান, তাদের অধিকার নিশ্চিতকরণ, সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা হচেছ।

প্রশিক্ষণ কার্যক্রম
সমাজসেবা অধিদফতরের জনবলকে দক্ষ এবং আধুনিক কর্মসূচির সাথে পরিচিত করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে সমাজসেবা একাডেমি এবং ৬ বিভাগে ৬ টি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালিত হচেছ। জাতীয় সমাজসেবা একাডেমিতে কর্মকর্তাগণকে সমাজসেবা কার্যক্রম, সমসাময়িক অন্যান্য কার্যক্রম, অফিস ব্যবস্থাপনা এবং বিষয়ভিত্তিক কর্মসূচির উপর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে অন্যপক্ষে আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে কর্মচারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।

উন্নয়ন প্রকল্প
সমাজসেবা অধিদফতর বর্তমানে ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প/কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের অনুক’লে মোট বরাদ্দ) ১২৬০১.০০ লক্ষ টাকা, জিওবি ৭৩৪৫.০০ লক্ষ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৫২৫৬.০০ লক্ষ টাকা। সমাজসেবা অধিদফতরের আর্থিক সহায়তায় প্রবীণ হিতৈষী সংঘ, বার্ডেম কার্ডিয়েক সেন্টার, বাংলাদেশ মেডিক্যাল হাসপাতাল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, কমিউনিটি হাসপাতাল ইত্যাদি নির্মিত হয়েছে। এ সকল হাসপাতালে ৩০% গরিব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ও সমাজসেবা অধিদফতর
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায় অনুযায়ী এবং একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সমাজসেবা অধিদফতর ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে গর্বিত অংশীদার হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ জন্য অধিদফতরের পক্ষ হতে দুধরণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে :

দক্ষ জনবল সৃষ্টি

উপকরণ সহায়ত
প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচেছ। এ জন্য অধিদফতরের নিজস্ব সুযোগ সুবিধার বাইরেও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন কেন্দ্র, প্ল্যানিং একাডেমির সহায়তা গ্রহণ করা হচেছ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ৪৭৭ টি উপজেলা, ৫০ টি শহর সমাজসেবা কার্যালয়, ৭৭ টি সরকারি শিশু পরিবার, ৮৪ টি হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়, কিশোর -কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রসহ সকল জেলা কার্যালয়ে কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে। ৬৪টি জেলাকেই ইন্টারনেট এর আওতায় আনা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদফতরে রয়েছে একটি তথ্য সমৃদ্ধ ওয়্বে সাইট। আগামীতে এ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ
জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতা লাভের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য সে¦চছাসেবী সমাজকর্মীদের জাতীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার উপর স্ব-বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তাঁর অভিপ্রায় অনুযায়ী সমাজকল্যাণ পরিষদকে স্বাধীন দেশের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ১৯৭২ সালে রেজুলেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ গঠন করা হয়। সমাজকল্যাণ পরিষদ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রম জোরদারকরণ, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে ৫৫ হাজার ৬৬০ টি বেসরকারি সংস্থাকে সহায়তা করা হচেছ।

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন ও কল্যাণে ব্যাপক কর্মসূচি পরিচালিত করে আসছে। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নিয়োজিত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্নয়ে সরকার জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরকার ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন-২০০১ প্রণয়ন করেছেন। এ ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধীদের আশা আকাঙ্খা পূরণ, প্রতিবন্ধী আইন বাস্তবায়ন, প্রতিবন্ধী কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচেছ।

শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান ট্রাস্ট
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বর্তমানে শেখ জায়েদ বিন সুলতান নামে শিশু পরিবার পরিচালিত হচেছ – এর ১ টি হচেছ ঢাকার মিরপুরে অন্যটি লালমনিরহাট। শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান ট্রাস্ট এবং সরকারের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠান ২টি পরিচালিত হচেছ।
এ সকল প্রতিষ্ঠান ও কর্মসূচির মাধ্যমে যাদের জন্য কাজ করা হয় তারা সমাজের সাধারণ মানুষ। দিন বদলের প্রধান সৈনিক। এদের ম্লান মূক মুখে ভাষা জাগানোর ও ভগ্ন বুকে আশা জাগানোর কাজ করে যাচ্ছে সমাজসেবা অধিদফতর। জ্বলে উঠুক এইসব ক্ষুদ্র বিপন্ন জীবন শতশিখায়, তাদের জীবনের জয়গানে মুখরিত হোক সোনার বাংলাদেশ।

(ওএস/অ/জুলাই ১৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test