E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভূগর্ভ থেকে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার কার্যক্রম ঝুঁকিপূর্ণ

২০১৫ নভেম্বর ২৩ ২৩:১০:৫৯
ভূগর্ভ থেকে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার কার্যক্রম ঝুঁকিপূর্ণ

মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন,পার্বতীপুর (দিনাজপুর)প্রতিনিধি : বাংলাদেশের জ্বালানী চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার দেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেন। ১৯৯৪ সালের ২৭শে জুন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন করে ভূগর্ভস্থ কয়লা উত্তোলনের যাত্রা শুরু করে।

২০০৩ সালের ২৩শে এপ্রিল কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের উদ্ভোধন হয়।

উল্লেক্ষ্য যে, ১৯৯৪ সালের ৭ই ফেব্র“য়ারী পেট্রোবাংলা ও গণচীনের চায়না ন্যাশনাল মেশিনারী ইনপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের মধ্যে খনির সকল কার্যক্রম করার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়। শুরু হয় পুরোদমে খনির ভূগর্ভ থেকে সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার কার্যক্রম। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথমে ৫০০ কোটি টাকা বেড়ে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা দাঁড়ায় ঐ প্রকল্প বাস্তবায়নে তৎকালীন সময় কত কোটি টাকার পিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল তা জানা যায় নি।

সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তোলা অতিরিক্ত ব্যয় এবং খনিটি ভবিষ্যতের জন্য ধ্বংস হয়ে যাওয়া। সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারণ এ রকম ভূগর্ভস্থ খনি থেকে মাত্র ১৫% কয়লা তোলা সম্ভব হয়। বাকি ৮৫% ভাগ কয়লা ভূগর্ভের নিচে থেকে যায়।

খবর নিয়ে জানা গেছে খনি কর্তৃপক্ষ ও জ্বালনী মšত্রণালয় চিন্তা ভাবনা করে খনির উত্তর দিকে একাংশ থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতেই কয়লা তোলার পরিকল্পনা করছেন। কবে বাস্তবায়ন হবে তা বলা যাচ্ছে না।

প্রাপ্ত সূত্রে জানা গেছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ভূগর্ভ থেকে ওপেন মাইনিং পদ্ধতিতে কয়লা তুলে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এই পদ্ধতিতে কয়লার তুলতে সরকারের ব্যয় কম হবে এবং ৯০ ভাগ কয়লা ভূগর্ভ থেকে উঠে আসবে। বর্তমান ঐ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার জন্য বেশ কিছু দিন আগে পানি ব্যবস্থাপনা, এলাকার পরিবেশ এবং মানুষের বসবাসের সমস্যা বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন। তবে সরকার কবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের কাজ করবে তা সঠিক ভাবে কেউ বিষয়টি জানাননি।

তবে কর্মপরিকল্পনার কাজ চলছে। তবে এই পদ্ধতিতে রীতিমতো বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। এক অংশ এই পদ্ধতি ঘোর বিরোধিতা করে আসছেন। সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে গিয়ে এই খনিটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি কয়লা আর কোন দিন এই ভূগর্ভ থেকে তুলে আনা সম্ভব হবে না। এতে দেশের প্রচুর অর্থনীতির ক্ষতি হবে। এই পদ্ধতিতে এখনি কয়লা তোলা বন্ধ করা উচিৎ। আর হয়তো বা গুরুত্বের সাথে ওপেন পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটি ।এমনিতেই ১৫% কয়লা তুলতে ও নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিশেষজ্ঞদেরকে। খনিতে বিভিন্ন সময় একাধিক বিপর্যয় ঘটেছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। জাতীয় কমিটি বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার সুপারিশ করেছেন বেশ কিছুদিন আগে।

জানা যায় যে, বড়পুকুরিয়া ১১৮ থেকে ২৫০ মিটার গভীরতা থেকে যে কয়লা উঠবে তা দিয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটির বিস্তার ৬.৬৮ বর্গ.কি.মি। এই খনিতে ১১৮ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৫০৯ গভীরতায় কয়লা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। এই ছোট মাপের খনিটিতে ভুগর্ভের নিচে মজুদ কয়লার পরিমাণ প্রায় ৩৯ কোটি টন বা তার বেশিও হতে পারে। বড়পুকুরিয়ার ভুগর্ভের কয়লা এত উন্নত যা ইন্দোনেশিয়া এবং ভারতেও নাই। এই কয়লা খনিটি দেশের এক বিরাট সম্পদ। এই খনিটি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন না করা হলে হয়তোবা যেকোন সময় দুর্ঘটনায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ সুড়ঙ্গপথে কয়লা তুলতে ঝুকিপুর্ন এবং অর্থের ব্যায় বেড়ে যায়। তবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে অনেক বেশী কয়লা তোলা সম্ভব হওয়ায় আর্থিকভাবে তা বেশী লাভজনক।

এলাকার মানুষকে পুনর্বাসন, পরিবেশ ব্যাবস্থা সংরক্ষণ করা, খনি বাস্তবায়নের যাবতীয় খরচ মিটিয়ে বিপুল অংকের অর্থ লাভ করা যাবে। অপরদিকে কিছু ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। যেমন, পানি ব্যাবস্থাপনা, ভূমিধস এবং এলাকার মানুষকে পুনর্বাসন ও তাদের ক্ষতিপুরণ পুষিয়ে দিতে হবে। আবাদী জমির কিছু ক্ষতি হবে। এসব দেখিয়ে সবকিছু মিলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে। যাতে করে এলাকার মানুষের কোন ক্ষতি না হয়। দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করে কয়লা উত্তোলন করা হলে খনিটি লাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

বর্তমান বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটি গত কয়েক বছর আগে ঋণ পরিশোধ করার পর লাভজনক হিসেবে এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তৃতীয় ইউনিট নির্মান হওয়ায় ঐ প্রকল্পে প্রতিদিন এই খনি থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানী খাতে সরবরাহ করা হবে। বর্তমান দুটি ইউনিটে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আমিনুজ্জামান এর সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান ভবিষ্যতে কয়লা উত্তোলনে উন্নত পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং এলাকায় কিছুদিন আগে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সবকিছু মিলে সময়ের ব্যাপার। বর্তমান কয়লা খনিটি লাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


(এএএম/এসসি/নবেম্বর২৩,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test