E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সুনসান রিকিসুম : ঝমাঝম বৃষ্টি!

২০১৪ মে ২৯ ১২:০৪:০০
সুনসান রিকিসুম : ঝমাঝম বৃষ্টি!

সুচরিতা সেন চৌধুরী : সবে ঘুম ভেঙেছে৷ সানরাইজ দেখার ইচ্ছে নিয়েই আগের রাতে ঘুমোতে গিয়েছিল পুরো দল৷ কিন্তু পর্দা সরাতেই কোথায় কি? সাদা মেঘের দল খেলা করছে বাড়ান্দায় সঙ্গে ঝমঝম বৃষ্টি৷ বেশ বিরক্তই হল সঞ্জয়৷ ‘ধুর এ যাত্রায় মনে হয় না আর কাঞ্চনদার দেখা পাব’.. বলেই আবার লেপের তলায় সেধিয়ে গেল সে৷ সঞ্জয়ের সগতোক্তি শুনে ততক্ষণে ঘুম উড়েছে রবিরও৷ ঘুম জড়ান গলায় রবি বলল, ‘এটাই বা কম কিসে? পাহাড়ে বৃষ্টির একটা অন্য সৌন্দর্য রয়েছে৷ সেটা এনজয় কর৷’ ভোরের পাহাড় তখন মেঘ-বৃষ্টির দখলে৷ শনশন হাওয়ায় হোম স্টের সেই স্বপ্নের মতো ব্যালকনিতেও যাওয়া যাচ্ছে না৷ তানিয়া অনেক্ষণ ধরেই উসখুশ করছে যদি একটু ভেজা যেত৷ আমিই আটকে রেখেছি৷ ঠান্ডা লেগে জ্বর হয়ে গেলে কি হবে? তখন আর এক বিপদ৷ না না জানলার কাচ দিয়েই দেখ বাবা অত বীরাঙ্গনা হয়ে কাজ নেই৷ তাতে যে ও একটু বিরক্ত হয়েছে সেটা বোঝাই গেল৷ কিন্তু কি আর করা৷ লেপ মুড়ি দিয়েই জানলায় চোখ রাখলাম আমরা৷অন্য ঘরে তখন স্বপ্নের দেশে গ্রুপের একমাত্র বিবাহিত জোরি সন্দীপ-সুদীপা৷ নাম টা যে এভাবে মিলে যাবে সেটা দেখাশোনা হওয়ার আগে ভাবেইনি দু’জনে৷বেশ মজার ব্যাপার৷ ছ’জনের গ্রুপে দারুণ বোঝাপড়া৷

 

রিকিসুমের রাস্তায়৷

বর্ষায় পাহাড়ে যাব না ভেবেই কলকাতা থেকে দার্জিলিং মেলে চেপেছিলাম আমরা৷ কিন্তু কোথায় কি? মূর্তিতে একদিন থাকার পরেই মনটা কেমন পাহাড় পাহাড় করতে শুরু করল৷সবারই এক অবস্থা৷ কিন্তু কেউ কাউকে বলছে না৷ সবাই ভাবছে বললে হয়তো অন্যরা ব্যাপারটা ভালভাবে নেবে না৷ একরকম পরিকল্পনা করে আসা৷ রাতারাতি সেটা পরিবর্তন করাটাও মুশকিল৷ কিন্তু আমার সত্যিই ভাল লাগছিল না৷ আসার সময় গাড়ি থেকে দূরে পাহাড়ের হাতছানি দেখেই মনটা কেমন যেন বদলে গেল৷মূর্তিও খুব একটা কারও যে মনে ধরেনি সেটা বুঝেই রাতের খাবার খেতে খেতে প্রস্তাবটা দিয়েই ফেললাম৷ বলেই ফেললাম, ‘এখানে ভাল লাগছে না৷ পাহাড়ে চল৷ আমরা কবে বর্ষার ভয়ে পাহাড়ে যাইনি৷ এবারই বা ব্যাতিক্রম হবে কেন?’ সেকেন্ডের নিরবতা তার পরই উচ্ছ্বাস৷ সবাই ঘুরে-ফিরে বলতে থাকল ‘আমিও তাই ভাবছিলাম৷’ সেই রাতে মূর্তিতে প্রবল বৃষ্টি এল৷সারারাত বৃষ্টি হল৷ আমাদের কোথায় যাওয়া যায় ভাবতে ভাবতেই প্রায় গড়িয়ে গেল মধ্যরাত৷ শেষ পর্যন্ত ঠিক হলমূর্তি থেকে বেড়িয়ে আগে লাভা পর্যন্ত যাওয়া যাক৷ সেখান থেকে কিছু একা বিকল্প নিশ্চয় বেরবে৷হাতে তখনও তিনদিন৷সবাই বেশ খুশি খুশি ঘুমতে গেলাম৷ পরের দিন ভোর হল আকাশের মুখ ভার করেই৷ তবে বৃষ্টিটা নেই৷ মূর্তিকে বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে পরলাম লাভার উদ্দেশে৷ যেতে যেতেই গাড়ির ড্রাইভার বললেন রিকিসুমের নাম৷

যেমন বলা তেমনই কাজ৷ লাভা থেকে সেই গাড়ির ড্রাইভারই অন্য গাড়ি ঠিক করে দিল৷ কোথায় থাকব সেটাও বলে দিল৷ আমরা আবার চলতে শুরু করলাম৷মাঝে লাভায় হালকা ব্রেকফাস্টও সেরে নিলাম৷ লাভায় পৌঁছে যেন সবাই হাতে আকাশ পেল৷ এটাই তো চাইছিলাম৷ লাভার আকাশেও মেঘের রাজত্ব৷ জুলাই মাসে এ ছাড়া আর কিছু আশাও করা যায় না৷ লাভা ছেড়ে রিকিসুমের পথ ধরতেই শুরু হল বৃষ্টি৷ সামনের রাস্তা প্রায় অদৃশ্য৷ হেডলাইটের আলোতে সামনেটা কোনও রকমে দেখা যাচ্ছে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম রিকিসুমে৷ ড্রাইভার হাত দিয়ে দেখাল আমাদের আস্তানা৷ যা দেখে সবাই মুগ্ধ৷ ছুটে এলেন বাড়ির মালিক৷আমরাও ড্রাইভারকে বিদায় দিয়ে রাস্তা থেকে সোজা উঠে যাওয়া সিড়ি দিয়ে পৌঁছে গেলাম ঘরের সামনে৷ ঘর লাগোয়া খোলা ছাদ৷অফ সিজিন হওয়ায় ঘরগুলো খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই৷ তবে সঙ্গেই সঙ্গেই সব ব্যবস্থা করে গরম গরম চা নিয়ে হাজির সেই বাড়ির মেয়ে৷

দুপুরের খাওয়া সেরে রিকিসুমের জঙ্গলে ঘেরা রাস্তায় বেড়িয়ে পরলাম শুধুই হেঁটে বেড়াতে৷ মাঝে মাঝেই ছিটে-ফোটা বৃষ্টি সঙ্গে নানা নাম না জানা পাখির কলকাকলি৷ফুরুৎ করে সামনে দিয়ে উড়ে গেল নাম না জানা রঙিন এক ঝুটি ওয়ালা পাখি৷ না ক্যামেরায় ধরা গেল না৷জঙ্গলের ভিতর দিয়ে রাস্তা পাকা থেকে কখন যে কাঁচা হয়েছে খেয়ালই করিনি৷প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুদীপা ঝপাৎ করে কাদায় পা দেওয়াতেই সম্বিত হল সবার৷ আরে চলে এসেছি অনেকটা গভীরে৷অনেক নিচে দেখা যাচ্ছে ফেলে আসা রাস্তা৷মাঝে মাঝে এক-দুটো গাড়ির আনা-গোনা৷গাছের পাতা থেকে হাওয়ার দাপটে খসে পরছে জলের ফোটা৷ এমনিতেই মেঘলা আকাশ তার উপর ঘন জঙ্গল কখন যে সন্ধ্যের অন্ধকার নেমেছে খেয়ালই হয়নি৷ এই অঞ্চলে ট্যুরিস্ট বলতে তখন আমরা ছ’জনই৷ অফ সিজিনে ঘোরার মজাই এটা৷ সন্ধ্যের আকাশে আবার বজ্র বিদ্যুতের আভাস পেতেই ফেরার পথ ধরলাম৷ ফিরতে ফিরতেই বৃষ্টি এল৷তানিয়ারও ভেজা হল শেষ পর্যন্ত৷ সবাই ভিজলাম৷জাকিয়ে ধরল ঠান্ডা৷ জামা-কাপড় বদলে গরম চাদর মুড়ি দিয়ে গরম গরম চা আর পাকোরা খেতে খেতে অন্ধকারে বৃষ্টি উপভোগ করলাম যতক্ষণ না রাতের খাওয়ার ডাক এল৷ সোলারের আলো তখন নিভু নিভু৷ কতদিন তো সূর্য ওঠেনি৷ তাই খাওয়ার টেবলে তখন মোমবাতি৷পাহাড়ের মাথায় ঝমে ঝমে বৃষ্টিতে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার সেরে লেপের তলায় বসে অনেকক্ষণ আড্ডা তার পর ঘুমের দেশে পাড়ি দেওয়া৷ তার আগেই খোঁজ পেয়ে গিয়েছি নতুন এক জায়গার৷নাম কোলাখাম৷ পরের দিন সকালে বৃষ্টি থামতেই গাড়ি ছুটল ন্যাওরাভ্যালি ফরেস্টের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক ছোট্ট গ্রাম কোলাখামের উদ্দেশে৷ সেই গল্প পরের দিন বলব৷

সৌজন্যে : ভারতীয় গণমাধ্যম।

 

 

 

 

 

সুনসান রিকিসুম : ঝমাঝম বৃষ্টি!

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test