E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ডুবুরে পাখি পানকৌড়ি

২০১৬ জানুয়ারি ২৬ ১৬:৪০:৫২
ডুবুরে পাখি পানকৌড়ি

দীপংকর গৌতম

ছন্দের যাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন-চুপ চুপ ওই ডুব দেয় পানকৌটি/দেয় ডুব চুপ চুপ ঘোমটার বউটি-এ লেখার মধ্য দিয়ে পানকৌড়ির পরিচয় মেলে। গ্রামীণ জনপদে দুরন্ত শৈশবে কোনো কিশোর জলে বেশি ডুবালেও বলা হতো-ছেলেটি পান কৌড়ির মতো ডুবায়। বাংলাদেশে পানকৌড়ি অতি পরিচিত পাখি, বিশেষ করে বিল অঞ্চলে এদের বাস। পানকৌড়ির বৈজ্ঞানিক নাম: Phalacrocorax fuscicollis। Phalacrocoracidae (ফ্যালাক্রোকোরাসিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Phalacrocorax অন্তর্ভুক্ত এক প্রজাতির পাখি পানকৌড়ি। পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায় লম্বা হয় ৫১ সেন্টিমিটার। সারা গা, বুক কুচকুচে কালো, তাতে সামান্য চকচকে আভা। গলায় সাদা একটি দাগ, পাখার নিচের পালক ধূসর রঙের। লেজের গড়ন নৌকার বৈঠার মতো। ঠোঁট সরু, কিছুটা গোল ধরনের, ঠোঁটের আগা বড়শির মতো বাঁকানো। পা দুটি খাটো এবং মজবুত। হাঁসের পায়ের মতো ওর পায়ের পাতা জোড়া লাগানো। জলের মধ্যে চলার সময় দাঁড়ের মতো পা দিয়ে পানি ঠেলে এগিয়ে যায়। চোখ সবুজাভ বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। বয়স্কদের বাইরের দিকে নাকের ফুটা থাকে না। সারা পৃথিবীতে এক বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ৯ লাখ ৪৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এদের আবাস। এদের গলায় একটি দাগ থাকে। ডিম পাড়ার সময় গলার দাগটি মিলিয়ে যায়। তার পরিবর্তে কয়েকটি সাদা পালক দেখা দেয়; আর গলার দুপাশে গায় কয়েকটি মিহি সাদা কোমল পালক, জুঁইফুলের মালার মতো। বাদামি রঙের ঠোঁট এ সময় লিপস্টিক দিয়ে রাঙানো ঠোঁটের মতো লাল টুকটুকে হয়ে ওঠে। বিবাহ অনুষ্ঠানে সাজসজ্জা ও অলঙ্করণ কেবল মানুষেরই নিজস্ব রীতি নয়, পশুপাখির জগতেও এটি প্রাকৃতিক নিয়ম।

পানকৌড়ি উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের পাখি। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এদের দেখা যায়। এখানকার জলবায়ু, নদী, খালবিল এদের প্রিয় বিচরণক্ষেত্র। সময় সময় সমুদ্রের তীরে দেখা গেলেও পানকৌড়ি মিঠা পানির পাখি। বড় পুকুর ও বিল অঞ্চলই এরা বেশি পছন্দ করে। সুন্দরবন অঞ্চলের জোয়ার-ভাটার নদীগুলো এদের খুবই প্রিয়। হাঁসের মতো জলের সাঁতার কাটে। তবে পানকৌড়ি। সাঁতরানোর সময় তাদের শরীর পানির নিচে ডুবে থাকে, কেবল গলা ও মুখটি থাকে পানির উপর। আবার মাছের সন্ধানে এরা পানির অনেক নিচে চলে যায়। ডুবসাঁতারেও এরা পটু। সময় সময় একসঙ্গে অনেক পানকৌড়ি এক সারিতে একই দিকে ডুব দিয়ে দিয়ে চলতে থাকে।

পানকৌড়ির প্রধান খাদ্য ছোট মাছ, তবে কাঁকড়া, ব্যাঙাচি, ব্যাঙ ইত্যাদিও খায়। পানিতে সাঁতার কাটার সময় কোনো বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিলে শুধু মাথা এবং গলাটুকু পানির উপর জাগিয়ে রেখে ডুবে থাকতে পারে। পানি থেকে ওঠার সময় এদের একটু বেগ পেতে হয়। পানি থেকে উঠে ডাঙাতে কিংবা শক্ত কোনো জিনিসের উপর বসে পাখা শুকায়। জলের ওপর কোনো ডালপালা থাকলে সেখানেও এরা সোজা হয়ে বসে পড়ে। তখন নিশ্চিন্ত মনে রোদে পাখা মেলে বহুক্ষণ ধরে আরাম করে একইভাবে বসে থাকে। পানকৌড়ি একবারে তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটার আগ দিয়ে এগুলো হলদে ও বাদামি রঙের হয়ে পড়ে।



(এসএইচ/এস/জানুয়ারি২৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test