E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তাঁতের টাকুর টুকুর শব্দ আর শোনা যায় না

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ০৮ ২০:৪৩:৫৯
তাঁতের টাকুর টুকুর শব্দ আর শোনা যায় না

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ সকাল থেকে সন্ধ্যাবেলা পর্যন্ত টাকুর-টুকুর শব্দে মুখর হয়ে থাকত তাঁত পল্লী। এখন আর তাঁতের টাকুর টুকুর শব্দ আর শোনা যায় না। কালের বিবর্তনে বর্তমানে সেখানে এখন সারাদিন নিঃশব্দ হয়ে রয়েছে। মাঝে মাঝে কয়েকটি তাঁত কল চললেও আগের মতো আর তাদের তাঁতে সুর ওঠেনা। ঠিকমতো সংসার চলে না। পেটের দায়ে পূর্ব পুরুষের এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

বলছিলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়ীয়া ইউনিয়নের আমবাড়ীয়া গ্রামের কারিগর পাড়ার তাঁত পল্লীর কথা। কারিগরদের কাজে মুখরিত থাকা এই কারিগর পাড়ায় চোখে পড়ে না আর আগের মতো কারিগরদের।

কারিগর পাড়ার সবচাইতে পুরাতন তাঁতী আব্দুল আজিজ (৬০) জানান, বর্তমানে তাঁত কাজ করে আর সংসার চলে না। সুতার দাম বেশি হওয়ায় এ কাজ করে আর লাভ হয় না। এছাড়া কারিগররা আর এ কাজ করতে চাই না। এ কাজে পেটের ভাতই জোটেনা ।

তিনি জানান, পূর্ব পুরুষরা এ কাজ করে গেছেন। তাই আমি কোনমতে এ কাজটাকে ধরে রেখেছি। আমার তিনটা মেয়ে আর একটা ছেলে। টাকার অভাবে তাদের ঠিকমত লেখাপড়া করাতে পারিনি। টাকার অভাবে দিতে পারিনি একটা মেয়ের বিয়ে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা পারিনি অন্য কাজ করতে। আর সমাজের চোখেও আমরা ছোট। আমরা কি করবো বলতে পারেন? আমাদের তো দেখোর মতো কেউ নেই। সরকারী কোন সাহায্য সহযোগিতাও তো পাইনি। শুনতে পাই অন্য এলাকার তাঁতীরা বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা পায়, ব্যাংক তাদের ঋণ দেয় তবে আমাদের দেয়না কেন ?”

তিনি আরো জানান, হয় আমাদের সরকার একে বারে উচ্ছেদ করে দিক নয়তো কোন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক। আমরা তো খারাপ কোন কাজ করি না। তবে কেন আমরা আজ ধুঁকে ধুঁকে মরছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বেঁচে থাকতে আমরা কন্ট্রোলে সুতা কিনতে পারতাম। সেটাও আর পারিনা। এই এলাকায় বর্তমানে ৫০ ঘর তাঁতী রয়েছে কিন্তু বেশিরভাগ তাঁতীরই একই অবস্থা। তারা বেশিরভাগই পেশা পরিবর্তন করেছে। কিন্তু আমি তো পারি না।

আরেক তাঁতী নাসিমা খাতুন (৩০) জানান, আমার পরিবারে ভালো উপার্জনের মতো কেউ নেয়। তাই আমার স্বামীর পাশাপাশি আমাকে এই কাজ করতে হয়। এখন যে অবস্থা তাতে তাও আর হবে না বলে মনে হচ্ছে।

এলাকার ৫০ঘর তাঁতী থাকলেও পর্যাপ্ত সুতার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৩০টি। কোন মতে টিকে রয়েছে ২০ঘর তাঁতী। তাঁতীদের এ দূর্দিনে এলাকার তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারি সাহায্য সহযোগিতা কামনা করছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে আমবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী টুটুল জানান, বর্তমানে এই অঞ্চলের তাঁতীদের অতি কষ্টে দিন কাটছে। তাঁতীদের মধ্যে অনেকেই তাদের পেশা পরিবর্তন করেছেন। তাদের এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন।

মিরপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি যে বর্তমানে ঐ অঞ্চলের তাঁতীদের দূর্দিন চলছে। তবে এ ব্যাপারে তাদের উন্নয়নের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোন সহযোগিতা করার সুযোগ নেই।

মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাদ জাহান জানান, বর্তমানে তাঁতীদের জন্য সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা আছে বলে আমার জানা নেয়। তবে তাঁত শিল্প রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ঋণ বা আর্থিক সহযোগিতা করে থাকে। তারা যদি যথাযথ কাগজপত্র সহ ঋণের জন্য আবেদন করে ঋণ না পায় তাহলে এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমার জানামতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কুঠির শিল্প উন্নয়নে সহযোগিতা করে থাকে।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোরশেদ আলম জানান, যে সকল যুবক-যুবতীরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে শুধু মাত্র তাদেরই ঋণ প্রদান করা হয়। তারা যদি এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁত কাজ চালায় তাহলে আমরা তাদের ঋণ দিতে পারি। তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে পারে।

বর্তমানে উপজেলার তাঁতীদের যে অবস্থা আর সাহায্যের জন্য সরকারি এক দপ্তর অন্য দপ্তরের পাল্টাপাল্টি যে বক্তব্য তাতে এই তাঁত পল্লীর ভবিষ্যত কি হবে তা কেউ বলতে পারে না ।



(কেকে/এস/ফেব্রুয়ারি০৮,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test