E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরার ঘানি শিল্প

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ১০ ১৯:০৭:৫৯
বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরার ঘানি শিল্প

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সরিষা , তিল , তিসি আর শুকনো নারকেল মাড়াই করে খাঁটি  তেল পাবার সে দিনগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে। গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা ঘানি শিল্পও মার খেয়েছে। মিলে তেল বীজ মাড়াইয়ের আধুনিক সুযোগ কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা কাঠের ঘানিও।

পারিবারিক এই পেশাকে তবুও টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে মানুষ। কিন্তু একদিকে নানা কারণে তেল বীজ উৎপাদনে ভাটা, অন্যদিকে বাজারে মিলের তেলের প্রভাবের কারণে তাও ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। শক্তিশালী গবাদি পশুর সংকটও ঘানি শিল্পকে পিছিয়ে দিয়েছে । এক সময় সাতক্ষীরার গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে দেখা মিলতো ঘানির। এখন তা আর চোখে পড়ে না। আর নির্ভেজাল টাটকা খাঁটি তেলও মেলে না চাহিদা অনুযায়ী।

সরেজমিনে বুধবার সকালে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাঠি ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামে গেলে গৃহবধু মর্জিনা খাতুন জানান, তার বাপের বাড়ি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার পাজিয়া গ্রামে। ৩০ বছর আগে এ গ্রামের ফজর আলী সরদার (দাই) এর সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে দেখা পান কাঠের ঘানির। বাড়িতে গরু না থাকায় ঘানি টানাতেন শ্বশুর ও স্বামী।। এই ঘানি টেনে তাদের সংসার নির্বাহ হতো। বিয়ের কয়েক বছর পর ঘানি টানার জন্য একটি গরু কেনেন তার স্বামী। মেয়ের বিয়েতে গরিিট বিক্রি করে দেওয়ার পর থেকে স্থানীয় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে প্রয়োজন মত সরিষা ও নারিকেল কিনে নিজেরাই ঘাম ঝরিয়ে ঘানি টানছেন এখনও । ঘানি থেকে পাওয়া খাঁটি সরষের তেল ও নারিকেল তেল বিক্রি করেন মর্জিনার স্বামী ফজর আলী সরদার।

তালার বিস্তীর্ণ অঞ্চল কপোতাক্ষের অভিশাপে জলাবদ্ধ হয়ে আছে। ফলে সরষেসহ অন্যান্য তেল বীজ উৎপাদনের সুযোগও হারিয়ে গেছে । যে তেল বীজ পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই ব্যবহৃত হয় মিলে।এ ভাবেই বিলুপ্ত হচ্ছে এই কুটির শিল্প । আর এর সাথে জড়িতরাও জীবন জীবিকার তাগিদে বেছে নিচ্ছেন নতুন কোনো পেশা।

নারায়নপুর গ্রামের দাই পাড়ায় আগের দিনে কমপক্ষে পাঁচটি ঘানি ছিল । এখন তা ঠেকেছে দু’টিতে । ওই দু’িটও বেঁচে থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে মর্জিনারা। কারণ বয়সের ভারে দেহের বলশক্তি কমে আসছে । গরু কেনার সামর্থও নেই। ঘানি ভাঙ্গা তেলের চাহিদাও নষ্ট করছে মিলের তেল ।

তবে ১৯৯০ সালের দিকে সাতক্ষীরা জেলায় ১০০টি’র মত ঘানি থাকলেও বর্তমানে তা ২০ এ দাঁড়িয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিবম। খাঁটি ও সুস্বাদু সরিষার ও নারিকেল তেল পেতে হলে ঘানির বিকল্প নেই। তাই সরকারি পৃষ্টপোষকতা দিয়ে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে বলে মনে করেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।

তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউপি চেয়ারম্যান রঞ্জন কুমার রায় জানান,তালা থানায় যে ১২টা ইউনিয়ন আছে তা প্লাবিত হয়ে যাওয়ার কারণে সরিষা চাষ কমে গেছে। এরপরও যে সরিষা উৎপাদন হয় তা চলে যাচ্ছে মিলে। মিলে কিলো প্রতি সরিষায় তেল পাওয়া যায় ৩৫০ গ্রাম আর ঘানিতে ২৫০ গ্রাম। এর ফলে মিলে সরিষা ভাঙানোর প্রবণতা বড়ছে। ঘানিতে ভাঙানো সুস্বাদু সরিষার তেল খেতে হলে সরকারি পৃষ্টপোষকতা দরাকার।#


(আরএনকে/এস/ফেব্রুয়ারি১০,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test