E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ড্রয়ারে পড়ে ছিল তিরিশ বছর

২০১৬ মার্চ ১৯ ১৭:০১:১০
ড্রয়ারে পড়ে ছিল তিরিশ বছর

ফিচার ডেস্ক :কালের কণ্ঠের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি সাব্বিরুল ইসলাম সাবু ছবিটি খুঁজে পেয়েছেন অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ নান্নুর ড্রয়ারে। নিচে বলা হয়েছে বিস্তারিত

তিরিশ বছর ধরে ছবিটি পড়ে ছিল অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ নান্নুর ড্রয়ারে আরো কিছু ছবির সঙ্গে। আমি যুদ্ধদিনের ছবি খুঁজছি জানতে পেরে বলেন, আমার কাছে একটি আছে। তবে ছবিটি কার কাছ থেকে পেয়েছেন, এখন আর মনে নেই। সাদাকালো ছবিটি অনেকটাই ঝাপসা হয়ে গেছে। তিনি জানান, ছবির সামনের ব্যক্তিটি হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর। বাকি আর কারুর পরিচয় জানেন না তিনি।

জানতে চাইলাম, ছবিটি কোথায় তোলা হয়েছিল? তিনি বোঝার চেষ্টা করলেন। কিন্তু শেষে জায়গাটি চিহ্নিত করতে পারলেন না। তবে বললেন, সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে তোলা। কেননা ছবির প্রায় সবারই গায়ে দেখা যাচ্ছে সোয়েটার-জাতীয় কিছু একটা। অর্থাৎ ছবিটি নভেম্বর মাসের শেষের দিকে কিংবা ডিসেম্বরের প্রথম দিকে তোলা।

ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমে বেশি দূর এগোতে পারিনি। তবে সামনের ব্যক্তিটি যে ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী তা নিশ্চিত করেছেন আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধকালীন মানিকগঞ্জে মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন মফিজুল ইসলাম খান কামাল। তত্কালীন আওয়ামী লীগের এই নেতা ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বিয়ে করেন ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর ছোট মেয়ে সুলতানা চৌধুরীকে। তিনি নিশ্চিত করেছেন ছবির প্রথম ব্যক্তিটি হচ্ছেন তাঁর শ্বশুর ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী। তাঁর ধারণা ছবিটি হরিরামপুর উপজেলার কোনো এক স্থানে তোলা হয়েছে। কেননা সে সময় হরিরামপুর উপজেলাতেই ছিল মুক্তিবাহিনীর মূল ক্যাম্প।

মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহিউদ্দিনও নিশ্চিত করেছেন ছবির সামনের ব্যক্তি ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী। নিশ্চিত না হলেও দ্বিতীয় ব্যক্তিটি মীর মোশারফ হোসেন মোতাহার বলে মনে করেন তিনি। তিনি জানান, সে সময় ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী সব সময় ছদ্মবেশ নিয়ে থাকতেন। পরনে থাকত লুঙ্গি আর সাদা পাঞ্জাবি। মুখে ছোট দাড়ি। নিজেকে পরিচয় দিতেন পীর সাহেব বলে। গ্রামের লোকজনকে সে সময় ঝাড়-ফুঁক দিয়ে চিকিৎসা করাত। তবে তাঁর কোমরে থাকত একটি পিস্তল। গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘ক্যাপ্টেনের সঙ্গে তাঁর কয়েক দিন পরপরই দেখা হতো। ছবির জায়গাটি সম্ভবত হরিরামপুরের কোনো স্থান।’

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার রেজাউর রহমান জানুর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর যোগাযোগ ছিল। জানুর পাঁচ ভাইবোনই মুক্তিযোদ্ধা। সে সময় শিবালয় উপজেলার আরোয়া ইউনিয়নের ঘুনাপাড়া গ্রামে তাঁদের বাড়িতে বেশ কয়েকবারই এসেছেন ক্যাপ্টেন। জনাব জানুও ছবির প্রথম ব্যক্তিটিকে ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী বলে নিশ্চিত করেন। বাকিদের তিনি চিনতে পারেননি। তবে ধারণা করেন, ছবিটি তাঁদের বাড়িরই সামনে থেকে কেউ একজন তুলেছিলেন। ছবির পেছনের দিকের দালানটি তাঁদের বাড়ির মতো দেখতে বলে তিনি জানান। তবে তিনি শত ভাগ নিশ্চিত হতে পারেননি।

ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর মেজ ছেলে তারেক হালিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছবিটি সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারেননি। তাঁদের কাছে এ রকম আর কোনো ছবি নেই।


(ওএস/এস/মার্চ১৯,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test