E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কর্মে এদের আহার জোটে

২০১৬ এপ্রিল ০৫ ২২:২৬:৪১
কর্মে এদের আহার জোটে

দৃষ্টি,শারীরিক,মানসিক সহ দেশের হাজার হাজার প্রতিবন্ধী বসবাস করছে ঢাকা শহরে। পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্রের নানা অবহেলার কারনে কেউ ভিক্ষা করছে দেশের নানা প্রান্তে। তাদের মধ্যে কিছু প্রতিবন্ধী হয়েও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করার উজ্জল দৃষ্টান্ত রাখছেন । কিছু প্রতিবন্ধীর কথা জানাচ্ছেন হাবিবুর রহমান-

কাউকে কষ্ট দিতে চাই না

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাড়া বাক,শারিরীকসহ নামের সাথে প্রায় সব ধরনের প্রতিবন্ধী নামটি যুক্ত করে দেয়া যায় প্রতিবন্ধী দীন ইসলামের সাথে। চলাফেরা করার জন্য তার হাত পা গুলি পুরোপুরি অচল না হলেও অনেকটাই অচল। চলাফেরা করেন অন্যের সাহায্য নিয়ে। চলাফেরা করতে কারো কাছে সাহায্য চাইলেও টাকা কিংবা খাওয়ার জন্য কারো কাছে হাত পাতেন না সে। সেজন্য রাজধানীর ঢাকার ফার্মগেটের ফুটপাতে বিক্রি করছেন বই,খাতা,কলম,পেন্সিল,নোটবুক ইত্যাদি। প্রতিদিন প্রায় সাতশত থেকে নয়শত টাকা বিক্রি করে তার থাকে দুই থেকে তিনশত টাকা। প্রতিবন্ধি হয়েও সে কাজ করে খাচ্ছে দেখে প্রতিদিন প্রায় দশ থেকে বারো জন লোক তাকে সাধুবাদ জানায়। দীনইসলাম বলেন, অনেক ভালো লাগে যখন আমায় দেখে সবায় আমার সুনাম করে। তখন কাজ করার আরো উৎসাহ পাই। তার চলাফেরার অনেক সাহায্য করেন আশে পাশে দোকানদাররা তিনি বলেন, যতটুকু পারি নিজেই করতে চেষ্টা করি কখনও না পারলে অন্য কারো সাহায্য নেই। আমায় জন্য কাউকে কষ্ট দিতে চাই না।
হকারিতে পয়সা কম হলেও ইজ্জত আছে

বাংলা নতুন বছরের মুহাম্মদী পকেট পুঞ্জিকা, বাংলা নতুন বছরের মুহাম্মদী পকেট পুঞ্জিকা বার বার বলছে আর মনের অনুভব করে হাটছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আব্দুর ছাত্তার মোল্লা। জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকারেমের নিচের একপাশ থেকে অপর পাশ হাটছেন ৫৬ বছর বয়সের এই বৃদ্ধ। ১৯৬৫ সালে দশ কিংবা বার বছর বয়সে মে মাস থেকে এখানে সহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় করেছেন হকারি।

লজেন্স,দিয়ে শুরু করে সাপ্তাহিক,মাসিক,দৈনিক পএিকা সহ বিক্রি করছেন পুঞ্জিকা,নামাজ শিক্ষা। পরিবারে আর্থিক অবস্থা সংকটের কারনে নিজের চেষ্টায় ব্রেইলে পরছেন অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত। জাতীয় অন্ধ সংস্থা থেকে পড়–য়া এই বৃদ্ধর পরিচিতিও খুবই ভালো। কর্ম করে জিবিকা নির্বাহ করার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। নিজেও করেছেন হকারী। ছাত্তার মোল্লা বলেন,অনেকেই পরামর্শ দিছি কেউ আমার কথা শুনে কাজ করছে আবার কারো ভালো লাগেনা তাই আবার ভিক্ষা করছে। জীবন ধারনের জন্য কারো কাছে হাত পাততে নারাজ ছাত্তার মোল্লা। তিনি বলেন, হকারিতে টাকা পয়সা কম হলেও ইজ্জত আছে। যারা চোখে দেখে চলতে পারে তারা যদি পাঁচ হাজার সাত হাজার টাকা পায় আমারে তো আল্লায় দুইশত টাকাও দিব। বাচতে হলে,পেটে কিছু দিতে হলে,কারো কাছে হাত পাতবো কেন। কর্মতো আছে নাকি।
ভিক্ষা মান সম্মানের প্রশ্ন

যশোরের কেশবপুর থানার ভোগতি নরেন্দ্রপুরের উনপঞ্চাশ বছর বয়সের গফুর সরদার সেই ১৯৮৮সাল থেকে ঢাকার বিজয় সরনী মোরের প্রায় লোকের পরিচিত। একটি হাত নেই তার। তবে অপর একটি ভালো হাতে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রায় বিশ বছর যাবৎ। পনেরো আগে কোন এক দূর্ঘটনায় হাতটি কাটা পরে। জন্মের পর বাবা মারা যাওয়ায় পড়ালেখাতে চালিয়ে যেতে পারেনি। দুই সন্তানের মধ্যে তার বড় ছেলেটি প্রতিবন্ধী। গফুরের উপর সম্পূর্ন ভাবে নির্ভর তার পরিবার। প্রতিমাসে আঠ থেকে দশ হাজার টাকা থাকে বই বিক্রি করে। ভিক্ষা করাটা নিজের কাছে একেবারে অপছন্দ করেন সে। তিনি বলেন, ভিক্ষা করা দেখতে অনেক খারাপ লাগে। এটা মান সম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাড়ায়। তার বিক্রি করা বইয়ের মধ্যে অধিকাংশই ইংরেজী বই। বারাক ওবামা,মেন্ডেলা সহ খুব ভালো ভালো অনেক ইংরেজী বই রাখেন তিনি। এগুলো মূলত প্রাইবেটকার থেকে হাত বাড়িয়ে ধনি পরিবারের সন্তানরা কিনে নিয়ে যায়।

কর্মজীবী প্রতিবন্ধীদের হকার সংঘ

কাজ করে চলাফেরা করছে। খাবার ধাবার জন্য কারো কাছে হাত পাতেন না এমন পঞ্চম থেকে ষাট জন কে নিয়ে আলমগীর হোসেন,কবীর হোসেন গফুর সরদার গড়ে তুলেছেন কর্মজীবী প্রতিবন্ধি হকার সংঘটন। যেখানে প্রতিবন্ধীদের কাজ খেটে খাবার জন্য নানান উৎসাহ ও পরামর্শ দেওয়া হয় এবং ভিক্ষা করতে নিষেধ করা হয়। সংঘঠনের অথবা এর বাহিরের কোন প্রতিবন্ধি যদি কাজ করতে চান তবে সদস্যদের মধ্যে থেকে চাঁদা তুলে সাহায্য করা হয়।




(ইউডি/এস/এপ্রিল০৫,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test