E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মঞ্চভীতি কাটিয়ে ওঠার মন্ত্রণা

২০১৬ মে ১০ ১৮:৪৮:৩৫
মঞ্চভীতি কাটিয়ে ওঠার মন্ত্রণা

জোহরা শিউলী : মনের খোরাক গান। কেউ গাই গুনগুন করে। কেউবা জনসমক্ষে। পারিবারিক অনুষ্ঠানে হারমোনিয়াম সঙ্গী করে গান গাওয়া এক বিষয়, আর স্টেজে পারফর্ম করা আরেক। বন্ধুদের নিয়ে না হয় করেই ফেললেন একটি ব্যান্ডের দল।

সবাই যখন প্রস্তুতিতে বিশেষ কোনো স্টেজ শোর, আপনার কি তখন ত্রাহি অবস্থা? গান কিন্তু খারাপ গান না আপনি। অথচ সবার সঙ্গে দলবেঁধে স্টেজে? কেমন যেন বাঁধো বাঁধো অবস্থা। কী করি আমি?... কী করি আমি?... আয়নার সামনে বারবার ঘোরাফেরা। দ্বিধাদ্বন্দ্বে যারা প্রতিনিয়ত এমনই ভুগছেন স্টেজ শোর ব্যাপারে, তারা চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন একটুখানি।

সঙ্গী হোক সঙ্গীরা
স্টেজ শোর বিষয়টা তো আর একার নয়। যেহেতু এটা একটা দলগত বিষয়, সেহেতু গান গাওয়ার সময় কিংবা পারফরম্যান্সের সময় দলের অন্যান্য সঙ্গীর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়েই চলতে হবে আপনাকে। সঙ্গীর গানের সঙ্গে সুর-লয়-তাল যেভাবে মেলাবেন, অভিনয়ের ক্ষেত্রেও মানতে হবে একই রকম। বিষয় পুরোটা একটা দলের বিষয়। তাই সঙ্গী করতে হবে দলের সঙ্গীদেরকেই।

গাইতে গাইতে গায়েন
যারা নিয়মিত স্টেজ শো করে অভ্যস্ত তাদের জন্য তো ঠিকঠাক সবকিছুই। কিন্তু টুপটুপ-ডুবডুব বুকে নতুন যারা স্টেজে উঠছেন সমস্যাটায় ভোগেন তারাই। গান গাইতে হবে মন খুলে। এর মধ্যে যদি সংকোচের বিহ্বলতায় গলা ডুবে থাকে তাহলে সেটা নিজের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়। প্রথম যখন স্টেজে উঠবেন গলা ছেড়ে গান গাইতে প্রস্তুতিটা নিয়ে নিতে হবে বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই। নিজের প্র্যাকটিস রুমে কিংবা দলের সঙ্গে মিলিয়ে ক্রমাগত গান করে যেতে হবে অনুশীলন। কথায় বলে_ গাইতে গাইতে গায়েন। তো আপনি মানবেন না কেন সেটা? নিজেকে শতভাগ প্রস্তুত করে নিতে হবে স্টেজে ওঠার আগ পর্যন্ত।

দেখে-শুনে মেনে চলি
যখন স্টেজে আপনি উঠলেন আপনার পারফরম্যান্সটুকু করতে, হারিয়ে যেতে হবে স্টেজের মধ্যেই। যে গান আপনি পরিবেশন করছেন, নিজের মতো করেই পরিবেশন করুন; এতটুকু নার্ভাস না হয়ে। আমাকে আমার মতো গাইতে দাও। অনুমতি তো দেওয়াই আছে। দরকার শুধু নিজের মতো পরিবেশন। আপনি যা, তা-ই আপনি স্টেজ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে পেঁৗছতে পারেন শ্রোতাদের কাছে কিংবা দর্শকের কাছে। গান গাইতে, উপস্থাপনা করতে, অভিনয় করতে কিংবা নিজের ছোট্ট বক্তৃতাটুকু দেওয়ার জন্য আপনি স্টেজে আরোহণ করলেও এ বিষয়ে এর আগের প্রচারিত বিষয়গুলো দেখে নিতে পারেন একপলক। তাহলে এটি আপনাকে উদ্দীপনা জোগাবে আপনার স্টেজ পারফরম্যান্সে।

মনের গভীরে দায়িত্ববোধ
যে কাজটি করার জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন নিজ কাঁধে। এবং সেই কাজটিকে ভালোবেসে। পছন্দ করে। আনন্দদায়ক এই কাজটিকে করতে হবে আপনার যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়েই। হেলাফেলায় সারাবেলা নয়। আমি আমার শতটুকু সঠিকভাবে করব_ দৃঢ়প্রতিজ্ঞা হোক এই। তাহলে দেখবেন প্রথম কিংবা নতুন স্টেজ শো কোনো কিছুতেই হবে না কোনো সমস্যা।

ধিনতা তা ধিন
ধিতাং ধিতাং তালে নাচার জন্য মঞ্চে যখন উঠব প্রস্তুতিটাও হবে তেমন-ই। নাচও তো এক রকমের অভিনয়ের মধ্যে পড়ে। মঞ্চে উঠে তাই একজন অভিনেতা-অভিনেত্রীর যেমন কাজ থাকে দর্শকদের সঙ্গে একটু আই কন্টাক্ট করা, নাচের ক্ষেত্রেও করে নিতে পারেন তেমন। দর্শক সারিতে বসা প্রথম জনাকয়েকের সঙ্গে এই প্রথম আই কন্টাক্ট হয়তো পুরো নাচটা আপনাকে দেবে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস। আমার মাঝেই আছি আমি। এবার শক্ত হাতে সেই আমিটাকে আমার মতো করে নিই নাচিয়ে_ ভাবনাটা এমন-ই থাকুক। কে পারে তাহলে আপনাকে আর আটকাতে? আপনার নাচের খুঁটিনাটি ভুল ধরতে?

মুখোশের ভেতর আমি
স্টেজে নিজেকে আলোড়িত করার আরেকটি মাধ্যম হলো মঞ্চাভিনয়। মঞ্চে অভিনয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন যারা তাদের জন্য পরামর্শ হলো হারিয়ে যাওয়া। ভাবছেন, কোথায় আবার যাবেন হারিয়ে? এই হারিয়ে যাওয়াতে নেই মানা। অর্থাৎ চরিত্রের মধ্যে হারিয়ে যেতে হবে। যেহেতু পুরোটাই একটা দলগত বিষয়। তাল মেলাতে হবে দলের প্রত্যেকটি সঙ্গীর সঙ্গে। সহঅভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিজের অভিনয় দিয়ে করতে হবে সাহায্য। চেষ্টা শতভাগ। আর যখন মঞ্চে এই আমি একা? তো এবার হয়ে যাক নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার একটা নতুন পরীক্ষা।

ভয়কে করি জয়
কী হয়... কী হয়... সারাক্ষণ এই চিন্তা ঘুরপাক মাথায়। করে ফেললাম না তো কোনো ভুল? ভুল ছাড়ে না পিছু। বনের বাঘে খায় না। খায় মনের বাঘে। এবার ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে এই মনের বাঘকে। বাই বাই বলে মনের বাঘকে বলুন বিদায়। কাজকে করে নিন আপন। স্টেজ আসুক নিজের হাতের মুঠোয়। নিজের কাজের, চলার পথে থাকতে পারে কিছু ভুলত্রুটি। টুকটাক নিজেকে শোধরানো প্রতিমুহূর্ত। এই শোধরানোর মাধ্যমেই স্টেজভীতি কমে যাবে অনেকখানি।

নিশ্চয়ই আপনি চান, তুখোড় পারফর্ম করে নিজের প্রতিভাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে? বলি, তাহলে স্টেজভীতি থাকলে কি চলবে? মোটেও না! বরং স্টেজকে আত্মপ্রকাশের এক উন্মুক্ত প্রান্তর হিসেবে ধরে নিয়ে গেয়ে ওঠুন গলা ছেড়ে। দেখবেন, চারদিকে জয়ধ্বনি পড়ে গেছে আপনার নামে। আর শিল্পী হিসেবে সফল হওয়ার স্বপ্ন পরিণত হয়েছে বাস্তবে।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test