E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কেমন আছেন অগ্রজরা!

২০১৬ অক্টোবর ০১ ১২:১০:৩৫
কেমন আছেন অগ্রজরা!

আরিফুন নেছা সুখী :


আজ বিশ্ব প্রবীণ দিবস। বিশ্বের সব প্রবীণের জন্য নির্ধারিত একটি বিশেষ দিন। এই দিন প্রবীণদের নিয়ে বলা হয় হাজারো কথা। কিন্তু যোগফল শূন্য। প্রবীণদের নিয়ে কথার ফুলঝুরি ছুটলেও তাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। বলা যায়, অবস্থার অবনতি হচ্ছে। রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে বয়োবৃদ্ধ ভিখারি, রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা ইত্যাদি।

বাসা থেকে বের হয়েছি হঠাৎ চোখে পড়ল একজন ষাটোর্ধ্ব মহিলা। বয়সের ভারে আর পুষ্টির অভাবে শরীরটা নুইয়ে পড়েছে প্রায়। সেই শরীরে তিনি মাথায় করে সবজি বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন। খুব ইচ্ছা হলো তার সঙ্গে কথা বলি, কিন্তু আমার ও তার কাজের ব্যস্ততার জন্য কথা বলা আর হলো না। অথচ পরে অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি মহিলার দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। ছেলে দুটি যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। মেয়েটা বিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু সংসার টিকেনি, মার কাছেই থাকে।

একটু দূর এগোতেই চোখে পড়ে একজন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে বলে মামা যাইবেননি। হাঁটার দূরত্ব তাই বলি—না, মামা যাব না। তার পরিবার সম্পর্কে খুব জানতে ইচ্ছে হলো— বললাম, মামা আপনার সঙ্গে কে কে থাকে, গামছাটা দিয়ে মুখের ঘাম মুছে জানান, পরিবার আর দুই পুলা। পুলারা কুনো কাজ করে না। দুইবার রিকশা ভাড়া কইরা আইনা দিছি, হারায় ফেলছে, এহন আমার কামায় খায়। দুই পুলায় বিয়া করছে, বউ দুইডারে গার্মেন্টে কামে দিছি।...

রিকশাচালক কিংবা ফেরিওয়ালা মহিলা অথবা রাস্তার পাশে বসে থাকা ভিক্ষুক—এরা সবাই প্রবীণ, কিন্তু প্রবীণ জীবনে এসেও তাদের ধরতে হয় সংসারের হাল। তাদের জীবনটা এভাবেই কেটে যাবে। কোনো দিন এরা পাবে না সরকার ঘোষিত বয়স্কভাতা। কিন্তু কেন? কারা পাচ্ছে বয়স্কভাতা নামক কার্যক্রমের অর্থগুলো। বয়স্ক ব্যক্তি কি শুধু গ্রামে বাস করে। এর উত্তর অবশ্যই না। তাহলে বয়স্কভাতা কেন শুধু গ্রামে চালু থাকবে। কি ভাবছি আমরা আমাদের এসব প্রবীণদের নিয়ে!

মাহবুবুর রহমান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, তার সময় কাটে দৈনিক পত্রিকা পড়ে আর টিভি দেখে। কিন্তু এভাবে কি চব্বিশ ঘণ্টা সময় কাটানো যায়! তাই মাঝে মাঝে নাতি-নাতনীদের সঙ্গে মিশতে খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু ছেলের বউয়ের কড়া আইন, তারা দাদুর সঙ্গে মিশতে পারবে না, তাতে নাকি তারা খ্যাত্ হয়ে যাবে। বাংলা শিখে যাবে। এ নিয়ে প্রায়ই মন খারাপ থাকে তার। ছেলেও বাবাকে সময় দিতে পারে না নানা ব্যস্ততায়। এভাবেই কি প্রবীণরা অবহেলিত হয়ে থাকবে।

ফুদুজান বেওয়া মানুষের বাসায় কাজ করে যে বেতন পান তার পুরোটাই তুলে দেন নাতির হাতে। নাতি পড়াশোনা করে চাকরি পেয়ে তাকে আর মানুষের বাসায় কাজ করতে দেবে না। কিন্তু সেই স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যায়।
নাতি এখন তাকে টাকার লোভে মনে রাখলেও বিয়ে করলে পরের মেয়েটা এই অশিক্ষিত প্রবীণকে আর ঘরে রাখতে দেয় না। কিন্তু কেন?

ছোট্ট ছোট্ট দুটি হাত ধরে একটু একটু করে আমাদের এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন প্রবীণরা, সুঠাম দেহে আগলে রেখেছেন আমাদের। কথায় আছে ‘মাথায় রাখিনি উকুনে খাবে, মাটিতে রাখিনি পিঁপড়ায় খাবে।’ এই ছিল আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের কথা, কিন্তু আমরা কি তাদের একটু ভালোমন্দের খোঁজও নিতে পারি না। তাদের চাহিদা কিন্তু বেশি থাকে না, একটু হেসে কথা বলা, পাশে বসা, ব্যস এতটুকুই। কিন্তু এই টুকুন দিতেই আমাদের কার্পণ্য। এই প্রবীণ দিবসে আসুন, আমরা সবাই প্রবীণদের পাশে দাঁড়াই। তাদের জিজ্ঞেস করি—আপনি কেমন আছেন?

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test