E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শারদীয় দুর্গোৎসব, সম্প্রীতির মেলবন্ধন

২০১৬ অক্টোবর ০৬ ১৭:০০:৩৯
শারদীয় দুর্গোৎসব, সম্প্রীতির মেলবন্ধন

মানিক লাল ঘোষ :


শারদীয় দুর্গোৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রেষ্ঠ আনন্দ  উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রাণের জোয়ার আসে। প্রাণ-চাঞ্চল্য ও উদ্দীপনায় খুশীর জোয়ারে ভাসে বাঙালি। এ উৎসবটি মূলত, হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলেও কালক্রমে হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িকতার চেতনায় উজ্জীবিত বাঙালি হিন্দু মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকলের কাছে আজ এ যেন সার্বজনীন উৎসব।

সনাতন হিন্দু ধর্মের দর্শনে দুর্গা দেবীকে পৃথিবীর সৃজনীশক্তি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, দেবী দুর্গা অসুরশক্তি নিধন এবং পৃথিবীতে দেবরাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দানের জন্য। আর এ কারনেই হিন্দু সম্প্রদায়ের সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে দুর্গোৎসব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

দুর্গাপুজায় দেবী দুর্গার মাতৃকাশক্তির আরাধনাই প্রধান। বহুর মধ্যে এক মহাশক্তিরূপিনী, ইষ্টফলদায়িনী, সর্বদুঃখহরা, মাতৃরূপিনী দেবীদুর্গা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে চিরদিনের রাজ-রাজেশ্বরী মহাকাল দর্শিনী। যতদূর জানা যায়, বঙ্গদেশে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দীতে মোগল সম্রাট আকবরের শাসনকাল থেকে। বিশেষ করে, বাংলাভাষী জনগোষ্টীর মধ্যে দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রস্তুতি এবং বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান মালা প্রচলিত হয় যা পরবর্তীকালে ব্যাপকতর পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে থাকে।

প্রকৃতপক্ষে দেবী দুর্গা কাল্যাণময়ী, দুর্গতিনাশিনী, সর্ব দুঃখহরিণী। অন্যদিকে কখনো কখনো তিনি জেগে ওঠেন আসুরিক শক্তি দমনের লক্ষ্যে। তখন তিনি দশভূজা হয়ে সংহারকারিনীর মূর্তিতে আবির্ভূত হন। মানুষকে রক্ষা করেন অসুররূপী দানবের হাত থেকে।

প্রতি বছর শরৎকালে পঞ্জিকার তারিখ অনুযায়ী হিন্দু সম্প্রদায় মা দুর্গার এই পূজার আয়োজন করে। এ উৎসবের কালক্রমে উৎসাহ ও উদ্দীপনা যেনো ক্রমশঃই ভাটা পড়েছে।গত বছরের চেয়ে পূজা মন্ডপের সংখ্যা বাড়লেও কমছে পুজারীর সংখ্যা। যথাযোগ্য মর্যাদা উৎসাহ-উদ্দীপনায় কিংবা কঠোর নিরাপত্তায় শারদীয় দুর্গোউৎসব পালিত বা আয়োজনের কথা প্রতিবছর সরকারি প্রচার যন্ত্রে যতই প্রচার করা হোক না কেন, পূজার সেই স্বতঃস্ফূর্ততা আগের মত নেই।

পূজার উৎসাহ ও আমেজে প্রতিনিয়ত ভাটা পড়ছে, এর কারণ বহুবিদ। এদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভালো নেই। মনে নেই আনন্দ, দুঃশ্চিন্তায় কাটছে তাদের প্রতিটি মূহুর্ত। হত্যা, সন্ত্রাস, নির্যাতন,ভয়ভীত প্রদর্শন, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ অবশেষে প্রিয় জন্মভূমি ত্যাগ এ যেনো হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক কাহিনী। সরকার পরিবর্তনে মাঝে মাঝে এই নির্যাতন ও নিপিড়নের তারতম্য ঘটেমাত্র এর বেশি কিছুনয়। ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘুদের উপর যে,অত্যাচারের ইষ্টিম রোলার নেমে এসেছিল সেই সহিংসতার বিচার আজো হয়নি। আলোর মুখ দেখেনি সাহাবুদ্দিন কমিশনের রিপোর্ট।

বতর্মান সরকার নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ ও সংখ্যালঘু বান্ধব দাবি করলেও তাদের মন্ত্রী সভায় নেই কোনো সংখ্যালঘু পুর্নাঙ্গ মন্ত্রী। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে মুষ্টিমেয় কিছুলোকের উচ্চ পদায়ন হলেও সংখ্যানুপাতে তা খুবই কম। অথচ পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের দৃশ্যপট ভিন্ন। সেখানে রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধান বিচারপতি হতে ধর্মকে নয় যোগ্যতাকেই প্রধান মানদন্ড হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আর একারনেই প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক সামাজিক সবদিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে তারা। তাদের কাছ থেকে আমাদের কি কিছুই শেখার নেই?

এবার শারদীয় উৎসব তাই আমরা শুধু মাননীয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রীর রাষ্ট্রীয় শুভেচ্ছা বাণী ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী নই। আমরা চাই রাষ্ট্রীয় সর্বক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় অসাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্তের সঠিক বাস্তবায়ন আর উচ্চস্বরে বলতে চাই-“এদেশে আমাদেরও আছে অধিকার। আর আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।”

লেখক : বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য,বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। সিনিয়র রিপোর্টার, মাই টিভি।

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test