E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে শিল-পাটা!

২০১৬ অক্টোবর ২১ ১৫:১৮:৩৫
কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে শিল-পাটা!

নাগরপুর (টাংগাইল) প্রতিনিধি : "এই লাগবে শিল-পাটা ধার" এই ছন্দময় সুরের সাথে এক সময় গ্রামীণ জনপদের প্রায় প্রতিটি মানুষই পরিচিত ছিল।গ্রাম থেকে শহরের সর্বত্রই শিল-পাটা ধার কাটানো ফেরিওয়ালাদের এই হাঁক প্রায় সকলের কানেই আসত। কিন্তু আজ কালের আবর্তে ডিজিটাল যন্ত্রপাতি এসে পড়ায় গৃহস্থালী থেকে এক প্রকার উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এই শিল- পাটা শিল্পের। আর এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।                 

এক সময় শিল পাটায় ধার কাটানো শিল্পীরা পাড়ায় পাড়ায় হেটে হেটে হাঁক দিতেন "এই কাটাবেন না কি শিল- পাটায় ধার "। তাদের এই হাঁক শুনে গ্রামের বধুরা প্রয়োজন হলে ডেকে শিল- পাটায় ধার কাটাতেন।

মুগ্ধ হয়ে দেখার মতন এই ধার কাটনেওয়ালাদের হাতের নিপুণ কাজ।শিল ও পাটাতে বাটাল ও ছেনি দিয়ে একটি হাতুরির সাহায্যে ঠুকে ঠুকে ধার কাটানো দেখতে ঘিরে ধরত ছোট থেকে বৃদ্ধরা।ধার কাটনেওয়ালা তার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে শৈল্পিকভাবে পাটার পাথরটি খোদাই করে চলত। কিছুক্ষণের মধ্যেই সারা পাটার গাঁ মাছের আশেঁর মতো রূপ ধারন করে ফেলতেন তারা। শ্রমের সাথে শিল্পের অপরূপ সমন্বয় ঘটিয়ে খোদাই করা হত পাটা।

পাটা ধার কাটনেওয়ালারা তাদের দক্ষতা আর গৃহস্থের ইচ্ছা অনুযায়ী পাটাতে ধার কেটে কেটে ফুটিয়ে তুলত মাছ, ফুল, লতা ও পাখির ছবি। পাথরে বাটালের টোকা পড়ে খোদাই হতো আর থেকে থেকে বের হতো আগুনের ফুলকি। বাতাসে পড়ত পাথরপোড়া বারুদের গন্ধ।

আজ কালের গতি আমাদের এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে প্রায় জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। মানুষ আজ ভুলে যেতে বসেছে শিল-পাটার ব্যবহার। এখন মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে মেশিনে ভাঙ্গানো গুড়া মসলার প্যাকেট।

কিন্তু ভোজন রসিক বাঙ্গালিদের ঐতিহ্যে আজো আছে হাতে বাটা মসলার তৈরি খাবার। অনুষ্ঠানে ভাল খাবার তৈরি করতে এখনও বাঙ্গালিরা হাতে বাটা মসলার উপর নির্ভর করে বলেই আজো কোনমতে টিকে আছে এই শিল- পাটা শিল্প।

(আরকেআর/এএস/অক্টোবর ২১, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test