E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মানুষ কখনই একসঙ্গে ঘুমায় না !

২০১৪ জুন ১৬ ০৮:৪৪:২৫
মানুষ কখনই একসঙ্গে ঘুমায় না !

নিউজ ডেস্ক : স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে ঘুমাবেন, এটিই নিয়ম। আসলেই কী তারা একসঙ্গে ঘুমান? উত্তরটি হবে- না। তারা একসঙ্গে শুয়েছেন, কিন্তু ঘুমাচ্ছেন যার যার মতো। নিউ ইয়র্ক সিটির এক দাম্পত্য বিষয়ক থেরাপিস্ট লি ক্রেসপি বলেন, মানুষ কেন একসঙ্গে ঘুমায় তার জবাব খোঁজার চেষ্টা করা হয় না। কারণ তাকে যৌনতার বিষয়টি চলে আসে। আবার অনেকে বলেন, আলাদাভাবে ঘুমালে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয় যা মোটেও কাম্য নয়। তাই মানুষ একসঙ্গে ঘুমায়। কিন্তু আসল কথাটি হলো, সবচেয়ে আরামের এবং গভীর ঘুম হয় যখন মানুষ একা ঘুমায়, বললেন ক্রেসপি।

ভার্জিনিয়া টেক এর ইতিহাসবিদ এবং ‘অ্যাট ডেস ক্লোজ : নাইট ইন টাইমস পাস্ট’ বইয়ের লেখক রজার একির্চ বলেন, এক ধরনের অর্থনৈতিক প্ররোচনা হলো একসঙ্গে ঘুমানো। সম্প্রতি এবং ১৮০০ শতকেও তাই ছিল। ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের আগে সমাজের নিচু শ্রেণীর মানুষ একসঙ্গে একই ছাদের নিচে বাস করত। এমনও দেখা গেছে, গোটা পরিবারের সবাই একটিমাত্র বিছানা ভাগাভাগি করে নিয়েছে। স্থান সংকুলান না থাকার কারণেও একসঙ্গে ঘুমানোর প্রয়োজন পড়ে। আবার এতে পারস্পরিক সৌহার্দও বাড়ে।

রজারের মতে, দম্পতিরা একসঙ্গে ঘুমায় প্রেম নিবেদনের জন্য। এতে যে তাদের ঘুম খুব ভালো হয় তা তারা বলতে পারবে না। কারণ মানুষের আরামের ঘুম হয় একাকী ঘুমানোর সময়। তাই মাঝেমধ্যে এমন ঘুমের জন্য অনেক দম্পতিই আলাদা শুয়ে থাকে। আবার দম্পতির দুজনের একজন অসুস্থ হয়ে পড়লেও অন্যজন আলাদা শুতে যায়।

অর্থনৈতিক অসুবিধা না থাকলে অনেকে আলাদাভাবে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেন। আর সে ব্যবস্থা যাদের নেই তাদের জন্য একত্রে ঘুমানোটাই স্বাভাবিক। আবার মানুষের মনে অন্ধকার নিয়ে ভয় কাজ করে। তাই একাকী অন্ধকারে ঘুমাতে অস্বস্তি বোধ করে মানুষ। এ ক্ষেত্রে সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে শক্তিশালী সহযোগী হিসেবে অনুভব করে মানুষ। বাস্তবতার নানা সমস্যা ছাড়াও কাল্পনিক ভয় থেকে মুক্তি পেতেই একসঙ্গে ঘুমানোর চর্চা গড়ে উঠেছে।
যারা মাত্র হরর সিনেমা দেখে ঘুমাতে যান, তাদের কাছে মনে হয় অন্য কেউ সঙ্গে থাকলে ভালো হতো। পুরনো আমলে কাল্পনিক ভয়টা বেশি কাজ করলেও, আধুনিককালে বাস্তবিক ভয়টা বেশি আতঙ্কিত করে মানুষকে। তাই নিরাপত্তার চাদরে মুড়ি দিয়ে ঘুমাতেই একত্রে ঘুমানোর নিয়মে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ।

এটা শুধু দম্পতিদের জন্যেই নয়। অনেকে বাড়ির কাজের মানুষকে নিয়ে ঘুমান। বোন অন্য বোনকে নিয়ে ঘুমায়। ভাই অন্য ভাইয়ের সঙ্গে ঘুমায়। নারীরা কাজের মেয়েটিকে নিয়ে ঘুমান। এ সবই জানা ও অজানা আতঙ্ক থেকে তৈরি হয়েছে। এভাবে সামাজিক স্তরে এবং স্বামী-স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা মেটাতে একসঙ্গে ঘুমানোর নিয়মটি বেড়ে উঠেছে।

এদিকে, একসঙ্গে ঘুমালে কখনোই ঘুম শতভাগ শান্তিময় হয় না। কারণ তখন পাশের জনের উপস্থিতির কারণে অবচেতন মনে নড়াচড়ায় সাবধানতা, সৌজন্যবোধ এবং শিষ্টাচার কাজ করে।

আবার টুকিটাকি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা, বাচ্চাদের গল্প শোনাতে শোনাতে ঘুম পাড়ানো, একসঙ্গে বিছানায় শুয়ে টিভি দেখা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় হয়। তাই একাকী ঘুমানোর মধ্যে শতভাগ তৃপ্তি থাকলেও আমরা একসঙ্গে ঘুমিয়ে অভ্যস্ত। কারণ আমরা বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রাণী, জানালেন ক্রেসপি।

(ওএস/অ/জুন ১৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test