E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বিশ্ব নারী দিবসে নারীদের প্রতি সম্মান

২০১৭ মার্চ ০৮ ১০:৪৪:৪১
বিশ্ব নারী দিবসে নারীদের প্রতি সম্মান

শোভন সাহা


আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

বিশ্বে যা-কিছু এলো পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
নরককুণ্ড বলয়িা কে তোমা’ করে নারী হয়ে-জ্ঞান?
তারে বলো, আদি পাপ নারী নহে, সে যে নর-শয়তান।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এমন সাম্যই দেখেছিলেন নর-নারীর মাঝে। কবিতায় বলেছিলেন ধরণীর উন্নয়নে নারীর বিকল্প নেই। আজকের দিনেও দেশের উন্নয়নে নারীর অবদান অনস্বীর্কায।

আজ আর্ন্তজাতিক নারী দিবস। প্রতি বছর ৮ র্মাচ সারা বিশ্বব্যাপী দিনটি পালিত হয়। এর আদি নাম ছিলো আন্তর্জাতিক র্কমজীবী নারী দিবস।

বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য একেক রকমের হয়ে থাকে। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাও বেশি গুরুত্ব পায়।

যুগে যুগে নারীরা নিজের অধিকার রক্ষার জন্য লড়ে এসেছে।এখনো লড়ছে। অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজেদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে এমন অভিমত বিশিষ্টজনদের। তবে অতীতের তুলনায় নারীরা এখন অনকে বেশি কর্মমূখী ও সচেতন। নারীরা শুধু এখন স্বামীর আয়ের উপর নির্ভর করে না। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে সংসারে বা উপার্যনে তারা পুরুষদের ছাড়িয়ে যায়। ফ্রান্সের প্যারি কমিউন, ফরাসি বিপ্লব, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক আন্দোলনসহ ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে পুরুষের পাশেই নারীকে দেখা গেলেও কাঙ্খিত দাবি নারী সমাজ আজও র্অজন করতে পারেনি। কর্মক্ষেত্রে নারীরা মজুরি পুরুষের চেয়ে কম পায়। আন্তজার্তিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের ২০০৯-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে পুরুষের চেয়ে নারী ১৬ ভাগ পারিশ্রমিক কম পায়। অপর এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে,পৃথিবীতে নারীরা কাজ করছে শতকরা ৬৫ ভাগ। বিপরীতে, তার আয় মাত্র শতকরা দশ ভাগ। পৃথিবীতে নারী-পুরুষের সংখ্যানুপাত প্রায় সমান। অথচ দুনিয়ার মোট সম্পদের একশত ভাগের মাত্র এক অংশের মালিক মেয়েরা। মেয়েদের গৃহস্থালী কাজের আর্থিক স্বীকৃতি এখনও দেওয়া হয়না। র্অথাৎ, তা অর্থ নৈতিক মূল্যে অদৃশ্যই থাকে।অন্যদিকে, দক্ষিন এশিয়া, আফ্রিকা তো বটেই এমনকী উন্নত বিশ্বের চরিত্রটাও অনেকটা একই। কখনও শ্লীলতাহানি, কখনও যৌন নির্যাতন, কখনও মেয়ে হিসাবে জন্মানোর জন্য চূড়ান্ত নিপীড়ন, আবার কখনও ধর্ষণের শিকার নারীরা। বিশ্ব, সমাজ, যুগ যত তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে, ততোই এগিয়ে চলার চেষ্টা চালাচ্ছে মেয়েরা।কিন্তু কিছু মানুষের লোভ-লালসা, আর কিছু অদৃশ্য শক্তি মহিলাদের কেমন ভাবে যেন পিছনে টেনে ধরে রেখেছে। সেই অদৃশ্য শক্তিকে অগ্রাহ্য করে কেউ কেউ অনেকে উপরে উঠতে পারলেও, বেশির ভাগই সেই অদৃশ্য শক্তির কাছে মাথা নত করছে।

ইতিহাসের পাতায় নারী দিবসের উল্লেখযোগ্য দিন--
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা রাস্তায় নামেন।
১৮৬০ সারের ৮ মার্চ নারী শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠনে ব্যর্থ হয়।
১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তজার্তিক নারী সম্মেলনে নেত্রী ক্লারা জেটকিন পুরুষের পাশাপাশি নারীর সম-অধিকারের দাবিটি আরও জোরালো করেন।
১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুটর্গাটে অনুষ্ঠতি হয় প্রথম আন্তজার্তিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলন।
১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে ১৭টি দেশের ১০০ জন প্রতিনিধি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন।
১৯১১ সাল থেকে ৮ মার্চ দিনটিকে `নারীর সম-অধিকার দিবস` হিসেবে পালিত হয় ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে এই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।
১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা করা হয়। এই দিনে সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, অষ্ট্রিয়া ও জার্মানিতে লক্ষাধিক নারী মিছিল ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ দিনটি উদযাপন করেন।
১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।
১৯৪৫ সালে সানফ্রান্সিসকোতে রাষ্ট্রসংঘ স্বাক্ষর করে `জেন্ডার ইকুয়ালিটি` চুক্তিতে নারী অধিকারের যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনায় রেখে।
১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে যায়।
১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে ৮ মার্চ নারী দিবস পালনের জন্য উত্থাপিত বিল অনুমোদন পায়।
১৯৮৪ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করে রাষ্ট্রসংঘ। ঐতিহাসিক সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রসংঘ এই সিদ্ধান্ত নেয়।
২০০৯-এ বিশ্বের ২৯টি দেশে সরকারি ছুটি সহ প্রায় ৬০টি দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়েছে।
২০১০ সালে বিশ্বজুড়ে নারী দিবস পালন করা হয়। অভূতপূর্ব সাড়া মেলে
ইতিহাসকে স্বীকৃতি-- বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় ৮ মার্চ। এরমধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনেগ্রো, রাশিয়া, তাজাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়া। আবার চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, নেপালে শুধুমাত্র মেয়েরাই সরকারি ছুটি পায়।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test