E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশ্বের বিস্ময় ‘চাঁদ সুলতানা’

২০১৭ মার্চ ১৪ ১৫:২৭:৪৮
বিশ্বের বিস্ময় ‘চাঁদ সুলতানা’

ফিচার ডেস্ক : ৪২১ বছর আগে খ্রিস্টিয় ১৫৯৬ সনের ১১ মার্চ  দক্ষিণ ভারতের নিজাম-শাহী রাজবংশের পরিচালিত রাষ্ট্র আহমাদনগরে হামলা চালায় মুঘল সম্রাট আকবরের সেনারা। কিন্তু এই হামলা বীরত্বের সঙ্গে প্রতিহত করেন রাজকন্যা চাঁদ সুলতানা।

বিজাপুর রাাষ্ট্রের সুলতান আলী আদেল শাহের বিধবা স্ত্রী চাঁদ সুলতানা (চাঁদ বিবি) এ সময় আহমদনগরের নাবালক সুলতান বাহাদুর নিজাম শাহের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। এই সুলতান ছিলেন তারই ভাই বা বোনের নাতি। [চাঁদ সুলতানা ছিলেন আহমদনগরের সাবেক বাদশাহ হুসাইন নিজাম শাহ (প্রথম)-এর কন্যা।

চাঁদ সুলতানা বিজাপুর রাষ্ট্রেরও একই ধরনের অভিভাবক ছিলেন। এ রাষ্ট্রের সুলতান ছিলেন তারই নাবালক সৎ পুত্র ইব্রাহিম।

মোঘল সম্রাট আকবরের ছেলে মুরাদ তীব্র প্রতিরোধের মুখে চাঁদ সুলতানার নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে ও সন্ধি করতে বাধ্য হন। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী মোঘল সরকার সেনা সরিয়ে নেয় এবং আহমাদনগরের কাছে বেরার অঞ্চল ছেড়ে দেয়।

চাঁদ সুলতানা ভারতের দাক্ষিণাত্যে মোঘল সাম্রাজ্য বিস্তারের বিরুদ্ধে আহমাদনগর, বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা-হায়দারাবাদের শাসকদের সংঘবদ্ধ করেছিলেন। দাক্ষিণাত্যের এই রাষ্ট্রগুলো শত শত বছর ধরে স্বাধীন ছিল। স্বাধীন শিয়া-মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে এই রাষ্ট্রগুলোর ভাষা ও সংস্কৃতিতে ইরানের গভীর প্রভাব ছিল। এই রাষ্ট্রগুলোর সরকারি ভাষাও ছিল ফার্সি। বহু ইরানি মনীষী এ অঞ্চলে অভিবাসন করেছেন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে।

এ অঞ্চলের হায়দারাবাদ রাষ্ট্র ব্রিটিশ শাসনামলেও ছিল ভারতের শেষ স্বাধীন মুসলিম সুলতানাত। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ উপনিবেশের অবসান ঘটার পর হায়দারাবাদ স্বাদীনতা বজায় রাখতে চাইলেও ভারত সরকার ১৯৪৮ সালে তা দখল করে নেয় সামরিক শক্তির জোরে এবং সেখানে ব্যাপক গণহত্যা চালায়।

চাঁদ সুলতানা আরবি, ফার্সি, মারাঠি ও কানাড়ি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। চাঁদ সুলতানা ইরানের সাফাভি সম্রাটদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছিলেন। কথিত আছে আততায়ীর হাতে নিহত চাঁদ সুলতানার লাশ তার ওসিয়ত অনুযায়ী দাফন করা হয় ইরানের মাশহাদে বিশ্বনবী (সা)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম রেজা (আ)’র মাজার প্রাঙ্গনেরকাছে।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম চাঁদ সুলতানার স্মরণে একটি সঙ্গীত রচনা করেছেন। ওই সঙ্গীতে তিনি লিখেছেন:

চাঁদের কন্যা চাঁদ সুলতানা,

চাঁদের চেয়েও জ্যোতি

তুমি দেখাইলে মহিমান্বিতা নারী কি শক্তিমতী

শিখালে কাঁকন চুড়ি পরিয়াও নারী,

ধরিতে পারে যে উদ্ধত তরবারি,

না রহিত অবরোধের দুর্গ, হতো না এ দুর্গতি

তুমি দেখালে নারীর শক্তি স্বরূপ-চিন্ময়ী কল্যাণী,

ভারত জয়ীর দর্প নাশিয়া মুছালে নারীর গ্লানি

তুমি গোলকুণ্ডার কোহিনূর হীরা সম,

আজো ইতিহাসে জ্বলিতেছ নিরুপম ;

এ ছাড়াও ‘আমাদের নারী’ শীর্ষক কবিতায় কবি নজরুল লিখেছেন:

রাজ্য শাসনে রিজিয়ার নাম ইতিহাসে অক্ষয়,

শৌর্যে সাহসে চাঁদ সুলতানা বিশ্বের বিস্ময়।

(ওএস/এসপি/মার্চ ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test