E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প

২০১৪ জুলাই ১২ ১১:০৮:৫৯
নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প

বেড়াল ও মোল্লা


মোল্লার মাংস খাওয়ার ইচ্ছা হওয়ায় বাজার থেকে এক সের খাসির মাংস কিনে বাড়িতে এনে বললেন," বেশ ভাল করে রাঁধো অনেকদিন মাংস খাইনি।'
মোল্লাহর বিবিও অনেকদিন মাংস খাননি। রাঁধার পর একটু একটু করে খেতে খেতে সবটা মাংসই খেয়ে ফেললেন তিনি।

মোল্লা খেতে বসলে তাঁর বিবি মুখ কাঁচুমাচু করে বললেন, "আজ আর তোমার বরাতে মাংস নেই, সব মাংস বেড়ালে খেয়ে ফেলেছে।"
'পুরো এক সের মাংসই বেড়াল খেয়ে ফেললো?'
'হ্যাঁ'
মোল্লার সঙ্গে চালাকি? তখনই বেড়ালটাকে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেখলেন বেড়ালটার ওজন ঠিক এক সের।
মোল্লা বললেন,"এটাই যদি সেই বেড়াল হয়, সেই মাংস হয়, তাহলে বেড়ালটা গেল কোথায়?'
বিবি বুঝলেন আর যাই হোক মোল্লার সাথে চালাকি করে পার পাওয়া যাবে না।

হেকিম সাহেব


নাসিরুদ্দিন জীবনে অনেক কিছু করেছেন তাই তাঁর অভিজ্ঞতার জুলি অনেক বড়। একবার এক বৃদ্ধের বাড়িতে চাকরের কাজ নিয়েছেন। বৃদ্ধের যা কিছু কাজ তাঁকেই করতে হয়।
সেই বৃদ্ধ একদিন নাসিরুদ্দিনকে ডেকে বললেন, 'তুমি কাজে এত ঢিলে কেন? একবারে যেখানে কয়েকটা কাজ করা যায় তুমি সেখানে বারেবারে করো। এবার থেকে সব কাজ একসঙ্গে করে আসবে, এভাবে সময় নষ্ট করবে না।"
একদিন বৃদ্ধ শয্যা নিলেন। অবস্থা খুবই খারাপ।
তিনি নাসিরুদ্দিনকে বললেন, হেকিমকে ডেকে আনতে।
বৃদ্ধের কথামতো নাসিরুদ্দিন হেকিম ডাকতে বেরোলেন।
বেরিয়েছেন তো বেরিয়েছেন, ফেরার নাম নেই। অনেক সময় কাটিয়ে নাসিরুদ্দিন ফিরলেন সঙ্গে অনেক লোকজন নিয়ে।
'কী ব্যাপার? হেকিম কোথায়? এত লোক দিয়ে কি হবে?'
'আজ্ঞে, হেকিম যা চাইবেন তার জন্য লোকের দরকার হবে। আপনার শেষ সময় উপস্থিত হলে কোরআন পড়ার জন্য লোক দরকার হবে। আর আপনার মৃত্যু হলে কবরখানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য লোকের দরকার হবে।'

সুখের সন্ধানে


এক লোকের বউয়ের সাথে খুব ঝগড়াঝাটি হতো। বঊটি ছিলো ভীষণ ঝগড়াটে।কোনদিন সে তার স্বামীকে সুখে থাকতে দিতো না।
একদিন সেই ভদ্রলোক কোন উপায় না দেখে কিছু পয়সা ও জামাকাপড় পোঁটলায় বেঁধে কোথাও চলে যাওয়ার জন্য মনস্থ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো।
নাসিরুদ্দিন সেই লোকটিকে মুখ ভার করে রাস্তার ধারে এমনভাবে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলেন, ' তোমার কী হয়েছে? কেন তুমি এমনভাবে রাস্তার ধারে বসে আছো?'
লোকটি বললো, 'জীবন একেবারে বিষের মত হয়ে গেছে আমার স্ত্রীর জন্য মোল্লা সাহেব! হাতে কিছু পয়সা আছে বটে কিন্তু মনে সুখ নেই। তাই দেশে দেশে ঘুরতে বেরিয়েছি। যেখানে কোন সুখের সন্ধান পাব, সেখানেই থেকে যাবো।'
লোকটির পাশে তার পোঁটলায় টাকাকড়ি জিনিসপত্র সব রাখা ছিলো। তার কথা শেষ হতে না হতেই নাসিরুদ্দিন সেই বোঁচকাটা নিয়ে দৈড়ে পালাতে লাগলেন। মোল্লাকে পোঁটলাটা নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখে লোকটিও তার পেছনে প্রাণপণ দৌড়াতে লাগলো। কিন্তু মোল্লা খুব দৌড়াতে পারতেন এবং বুদ্ধিও আছে- এমন অবস্থায় নাসিরুদ্দিনকে ধরে কার সাধ্য! দেখতে দেখতে তিনি রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকে হাওয়া হয়ে গেলেন।
এভাবে লোকটিকে ধোঁকা দিয়ে তিনি আবার সেই রাস্তায় ফিরে পোঁটলাটা রাস্তার মাঝখানে রেখে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলেন।
এদিকে লোকটিও কিছুক্ষণ পরে সেখানে এসে হাজির। তাকে এখন আগের চেয়েও বেশি দুঃখিত দেখাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় তার পোঁটলাটি পড়ে আছে দেখে মহা আনন্দে চিৎকার করে পোঁটলার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। এতক্ষণে সে যেন প্রাণ ফিরে পেলো।
গাছের আড়াঁল থেকে নাসিরুদ্দিন বেরিয়ে এসে বললেন, "দুঃখীকে সুখের সন্ধান দেয়ার এও একটা উপায় দেখতে পেলাম, কী বলো ভাইয়া।"
এই বলে মোল্লা সাহেব লোকটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test