E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দপ্তরহীন উপদেষ্টা

২০২০ জুন ০৮ ১৮:১৯:০২
দপ্তরহীন উপদেষ্টা

ইন্দ্রজিৎ কুমার সাহা


উপদেষ্টা মহোদয় খুবই হন্তো দন্ত হয়ে তার কামরায় প্রবেশ করলেন! তাকে কিছুটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তিনি আশা করেছিলেন যে, তার একান্ত সচিব হয়তো আজ প্রধানমন্ত্রীর সাথে মিটিংয়ের সকল বিষয় সমন্ধেই টেলিফোনে অবগত হয়েছেন। তার পরও তিনি কাষ্ঠ হাসি হাসিয়া জিজ্ঞেস করলেন কি ব্যাপার মিস্টার রমজান আজকের মিটিং সম্পর্কে কোন ধারনা আছে আপনার! আজকে দারুন একটা বিষয় ঘটেছে, প্রাইমমিনিস্টারের সাথে আজকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে প্রথমেই তিনি আমাকে অর্ভত্থনা জানান এবং আমরা সোফায় বসে বেশ নিচু স্বরে কথা বলি! তিনি আমার প্রতিটি বিষয়ের সাথেই একমত হয়েছেন! এছারা আমাকে বেশ কয়েকটি বৈদেশিক সফরের সফরসঙ্গী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন! য়ুফ! আজ বেশ গুমোট এসি টা একটু হাই করে দিনতো! উপদেষ্টা মহোদয় নিজের টাই খানি টানিয়া একটু আলগা করে নিলেন!

ব্যাক্তিগত সচিব একটি স্ব-করুন হাসির মুখভঙ্গি করে এসিটা বাড়িয়ে দিতে দিতে বললেন স্যার ম্যাডামের এলাকা থেকে কিছু মেহমান এসেছেন!

--- কি বলছেন! তাদের সবাইকে জলদি নিয়ে আসেন কুটুম বলে কথা ! কিছুক্ষন পর মাননীয উপদেষ্টার সুহ্রদ ও আন্তরিক আশ্বসে সবাই বেশ খুশি মনে উপদেষ্টা মহোদয়ের কামরা থেকে প্রস্থান করলেন।

গরম কফিতে চুমুক দিয়ে হাত পা শূন্যে ছুড়ে দিয়ে বড় করে একটা হাই নিয়ে মাননীয় উপদেষ্টা বললেন আপনি আমার জন্য একটা বিদেশ সফরের ব্যাবস্থা করেনতো রমজান সাহেব ,ভাবছি এবার একটু ভিয়েতনাম যাব! শুনেছি দেশটি নাকি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রভূত উন্নতি করেছে!

জ্বি স্যার আমি বিষয়টি তথ্য ওপ্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ে লিখিত ভাবে পেশ করব স্যার!

আপনার তো স্যার এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কথাবলার কথা প্রধানমন্ত্রীর সাথে! সচিব বললেন

হু মনে আছে মনে আছে! সুযোগবুঝে কথাটা তুলেওছিলাম তার কানে কিন্তু কি বলল জানেন?

কি বললেন স্যার?

এবার উপদেষ্টা মহোদয় একটু কাঁধ ঝাকিয়ে বেশ কয়েকবার আরাম কেদারায় ঝুলন খেয়ে মুখে একটা তৃপ্তির ভাব ফুটিয়ে তুললেন যেন পৃথিবী জয় করা বীর আলেকজান্ডার! আরে ভাই আমি এলাকার কথা বলতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, শুধু নিজের এলাকার কথা ভাবছেন আপনি! সামনে ইলেকশন এখন সারাদেশ নিয়ে ভাবতে হবে সামনের নির্বাচনে আমি নির্বাচন পরিচালনাপর্ষদের অন্যতম মেম্বার হিসাবে দেখতে চাই আপনাকে! আরে মশাই সারা দেশ নিয়ে ভাবুন! মিন্টু রোডের সরকারী বাসভবন ছেরে সারা দেশের খবর নিন!

কথাটা শোনা মাত্রই সচিব কিছুটা বিচলিত ভঙ্গিতে দ্বারিয়ে রইলেন, ঠিক কেন বোঝা গেলনা! তিনি বললেন,হয়তো আপনাকে বড় কোন দ্বায়িত্ব দেওয়া হবে । মন্ত্রানালয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদ খালি আছে!

হু! এ ব্যাবারে কোন কথা নয় চারদেয়ালের ভেতরেই যেন থাকে সব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেখানেই নিযুক্ত করুন না কেন আমি সেটা মাথা পেতেই নিব!

কয়েকদিন পর দেশে মিঠাপানির কুমির চাষের সম্ভাবনা সর্ম্পকে একটা প্রাইভেট চ্যানেলে প্রচারিত রিপোর্ট উপদেষ্টা মহোদয়ের নজরকারে তিনি এব্যাপারে একান্ত সচিবের কাছে বিশদ জানতে চান আর উৎফুল্ল হয়ে বলেন দেশে তো এখন কুমির আর কুমির !

কিন্তু স্যার সরকারী পরিচালনায় দেশের একমাত্র কুমির প্রজনন ও পালন কেন্দ্রটির অবস্থাতো খুব একটা ভাল নয়।জবাব দেন একান্ত সচিব।

কি বলছেন এটা কেথায় অবস্থিত?

বাগের হাট জেলার মংলার করমজলে স্যার!

ওহো! কিন্তু ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি দেশীকোম্পানীর ব্যাবস্থাপনায় পরিচালিত খামারের সম্ভারবনা তো বেশ উজ্বল! তারা ইতিমধ্যে বেশ কিছু কুমির রপ্তানীও করেছে! আই জাস্ট লাইক ইট!

তাছারা চিটাগংয়েও এরকম আরেকটি খামারের কথাও আমার অজানা নয়! আপনি এক কাজ করেন করমজলের খামারের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য প্রানী ও পশুসম্পদ মন্ত্রালয়ে সচিবের নিকট যান, এ সম্পর্কে একটা প্রাথমিক রিপোর্ট সংগ্রহ করুন! প্রয়োজন হলে একটি হেলিকপ্টারের ব্যাবস্থা করেন আমি স্বয়ং সেখানে যাব! তাছারা দেশের দক্ষিনাঞ্চলে আমার একটা ভ্রমনও হয়ে যাবে!

জ্বি স্যার আমি ব্যাবস্থা করছি। স্যার এই এখানে একটা সই করে দিন।

কিসের রশিদ এটা!

বাড়ীতে ঘি লাগবে সেটার রশিদ!-----

তিন চার ঘন্টা পর একান্ত সচিব কিছু প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে গিয়ে বললেন,স্যার আমি ঢাকাস্থ সেই প্রাইভেট চ্যানেলের সম্পাদকের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছি এবং এ ব্যাপারে আপনার উদবিগ্নতার কথা জানিয়েছি! তিনি এব্যাপারে আরও বিস্তারিত খোজখবর নিতে বললেন! আপনি যদি বলেন তো আমি নিজে গিয়ে বিষয়টি আরও ভাল করে তদন্ত করে আসি!

উপদেষ্টা মহোদয় জবাব দিলেন এ ব্যাপারে আমাকে ভাবতে দিন। কিছুক্ষন পর তিনি বললেন, আমারই ব্যাক্তিগত ভাবে করমজল যাওয়া উচিৎ, স্বচক্ষে খামারটি পরিদর্শন করব তাছারা সম্প্রতি সুন্দর বনের অভ্যন্তরে স্যালা নদীতে যে তেলভর্তি ট্যাংকার ডুবি হল তার কি বিরুপ প্রভাব সুন্দর বনে পড়েছে সে ব্যাপারেও একটা প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রির নিকট পেশ করব! তাছারা রামপাল তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের অগ্রগতিও স্বচক্ষে দেখে আসব। বিষয়টা নিয়েতো বেশ কথা চালাচালি হচ্ছে তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের মাঝে।

অতি উত্তম প্রস্তাব স্যার! এতক্ষনে বোধহয় একান্তসচিবের বোধদয় হল!

আপনি এক কাজ করুন বিমান বাহিনীর একটি বিমানের খোজ নিন ,দ্রুত যশোর এয়ার পোর্টে ল্যান্ড করে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করমজলের খামারে যাব। এই সুযোগে আমি ওখানে শীতার্ত মানুষের জন্য কি পরিমার রিলিফের প্রয়োজন তা যাচাই করার সুযোগ পাব! উপদেষ্টামহোদয় পরে অবশ্য আফ্রিকার কালাহরি সাফারী পার্কে গিয়ে উন্মুক্ত পরিবেশে কি ভাবে বন্য প্রানী সংরক্ষন করা হয় সেটা পর্যবেক্ষন করার স্বপ্ন দেখছিলেন। একবার এক সুযোগে প্রধান মন্ত্রীর কানে তোলেছিলেন কথাটা কিন্তু জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, উন্মুক্ত পরিবেশে কিভাবে বন্যপ্রানী সংরক্ষন করা যায় সেটি দেখার জন্য আপনার আফ্রিকায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই বাড়ীর কাছেই গাজীপুরের শ্রীপুরে গড়ে তুলেছি বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক সেখানেই অনেক প্রজাতির জীবজন্তু আছে সাথে গাধাও আছে! তাছারা সেখানকার নিরাপত্তা বেষ্টনিও খুবই উন্নতমানের। আপনি ইচ্ছা করলে ঘুরে আসতে পারেন!

পরেরদিন মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় একান্ত সচিব কে ডেকে বললেন, আমার ভিয়েতনাম যাবার কি ব্যাবস্থা হল এ ব্যাপারে আপনি তথ্য ও পযুক্তি বিষয়ক মহাপরিচালকের নিকট খোজ নিয়ে জানুন! আর একটা কাজ আমার উত্তরবঙ্গ ভ্রমনের জন্য বিমান বাহিনীর একটি বিমানের জন্য চাহিদা দিয়ে চিঠি পাঠান। দেশে এত কম্বল কিতরন করার পরেও উত্তর বঙ্গের জনগন কেন শীতে কাপছে এটা দেখার প্রয়োজন! তাছারা আমি এবার টিপাইমুখ বাধঁ ও রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শন করে আসব। বিষয়টা নিয়ে তো তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে বেশ কথা চালাচালি হচ্ছে, লেট নাইট টক -শোতেও বেশ উত্তপ্ত বাক্য বান চলে!

কয়েক দিন পর একান্তসচিব উপদেষ্টা মহোদয়কে জানালেন,আমি সরকারী কর্মকর্তাদের তালিকা দেখেছি। সরকারী দপ্তরসমূহে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মহাপরিচালকের কোন পদ নেই স্যার।

আজব ব্যাপার! জাতীয় স্বার্থে ও জনকল্যানে এমন একটি পদ সৃষ্টি করা আশু করনীয় বিষয়টি মনে রাখবেন। ভবিষ্যতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অভিহীত করতে হবে।মন্ত্রী বললেন।

ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে উপদেষ্টা মহোদয়ের জরুরী তলব এল ,রুদ্ধশ্বাসে ছুটলেন তিনি!
আসুন ,শুনলাম তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন দেখার জন্য আপনি ভিয়েতনাম যেতে চাচ্ছেন, আবার নাকি কুমির চাষ দেখার জন্য করমজল যাচ্ছেন! এজন্য বিমান বাহিনীর বিমানের খোজ নিচ্ছেন!

জি স্যার বিষয়গুলি জনকল্যানের জন্য খুবই দরকারী! বললেন উপদেষ্টা মহোদয়।

--ঠিক আছে যেতে চান যাবেন কিন্তু এখন কেন? এ বিষয় গুলি দেখার জন্য তো দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রনালয় আছে, উপদেষ্টা আছে। আপনাকে যে দ্বায়িত্ব দিয়েছি সেটা ঠিকঠাক মত পালন করেন, পরে অন্যসব।

জ্বী স্যার! আমি আসলে---- আমি আসলে---- এভাবে তুতলাতে থাকেন উপদেষ্টা মহোদয় আর মনে মনে ভাবেন আমার যে কি কাজ! কি দ্বায়িত্ব !সেটাই তো বুঝতে পারতেছিনা!

দুদিন পর উপদেষ্টামহোদয় তার একান্ত সচিবকে ডেকে বললেন, ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে আপনার কি অভিমত, এদের কি শাস্তি দেওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন? ভাবতেও অবাক লাগে বিদেশী অতিথীদের প্রদানকৃত ক্রেস্ট হতেও সোনা গায়েব আর স্বয়ং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব ভূয়া! কোটরগত চোখদুটি বড় বড় করে হতাশ হওয়ার ভঙ্গিমায় শূণ্যে হাত উচিয়ে চেচিয়ে উঠেন আই জাস্ট কান্ট ইমাজিন ইট!

কাচু মাচু হয়ে আমি কি বলব স্যার এ ব্যাপারে আমার কি কথাবলা সাজে, বলেন একান্ত সচিব।

উত্তরবঙ্গ ভ্রমনের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চান উপদেষ্টা মহোদয়।

এই ধরনের চাহিদা পত্র প্রধানমন্ত্রির মাধ্যমে বিমানবাহিনি কতৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হয়। একান্ত সচিব জবাব দিলেন।
মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় আর্তনাদ করে উঠেন, হা ইশ্বর আবার প্রধান মন্ত্রি! এ সময় একান্ত সচিব অন্যদিকে তাকিয়ে কিছু না শোনার ভান করেন।

উপদেষ্টা মহোদয়ের সফরসূচি যখন প্রায় চূরান্ত তাকে জানানো হল, বাংলাদেশেী বিমানবাহিনির বিমান বর্তমানে শীতকালীন মহড়ায় অংশ নিতে ব্যাস্ত আছে তাছারা প্রস্তাবে দপ্তরহীন উপদেষ্টা মহোদয়ের সফরের কারনও সুস্পষ্ট নয়। তিনি যদি শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরন কৃত রিলিফ কার্যক্রম পরিদর্শন করতে চান তাহলে তিনি নিশ্চই অবগত আছেন য়ে এব্যাপারে দূর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রনালয় থেকে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে তাছারা উত্তরের হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা শৈতপ্রবাহও বর্তমানে অনেক কমে এসেছে ফলে পরিস্থিতির প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। একমাত্র হেলিকপ্টার যেটি আছে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রির জন্য রিজার্ভ করা।

আর সেটির এখন মেরামতের কাজ চলছে পাখা ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ খুলে ফেলা হয়েছে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীও শৈতপ্রবাহ কবলিত এলাকা পরিদর্শনের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন হেলিকপ্টারের অভাবে! আর টিপাই বাধের বিষয়টিও নিয়েও ভারতের উর্ধতন কর্তাব্যাক্তিদের সাথে আলোচনা হয়েছে, দ্বিপক্ষিয় বৈঠকে তারা আশ্বাস দিয়েছেন যে বাংলাদেশের পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় এরুপ কাজ থেকে ভারত বিরত থাকবে। তাছারা ভারত নিজেও বম্মপূত্র নদের উতপত্তি স্থলে নির্মিত চায়না বাধঁ তথা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় এ বিষযে কি সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন -----

কথা শেষ হওয়ার আগেই একান্ত সচিবকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে আরাম কেদারায় হেলে গিয়ে বেদনাতুর মুখ শূন্যে টেনে হিসাব মেলাবার কসরতে ব্যাস্ত হয়ে পরলেন মাননীয় দপ্তরহীন উপদেষ্টা-----------------।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test