E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বুড়ি ও ব্যবসায়ীর গল্প

২০১৪ সেপ্টেম্বর ০৭ ১৬:০৪:৩৫
বুড়ি ও ব্যবসায়ীর গল্প

রূপকথা : এক দেশে ছিল এক বুড়ি। তার ছিল দুই ছেলে । এক ছেলে ছিল গ্রামের মাতব্বর বা নেতা গোছের। আরেক ছেলেও ছিল বেশ লেখাপড়া জানা। শিক্ষিত এই ছেলের নাম ছিল বাহলুল। এক রাতে এক ব্যবসায়ী এসে বুড়ির ঘরের দরোজার কড়া নাড়ল। বুড়ি দরোজা খুলে দিল।

ব্যবসায়ী বুড়িকে বলল ‘আমাকে তোমার ঘরে থাকতে দেবে? রাত হয়ে গেছে, থাকার মতো কোনো জায়গাও নেই।’ বুড়ি ব্যবসায়ীর অনুরোধ রাখল, তাকে ঘরে থাকতে অনুমতি দিল। একটু পরে ব্যবসায়ী বুড়িকে বলল: রাতের খাবার তো খাই নাই, খাবার দাবার কিছু আছে নাকি? থাকলে দাও খাবো।

বুড়ি বলল: হ্যাঁ অবশ্যই আছে। অন্তত দশটা মুরগির ডিম আছে ঘরে।’ ব্যবসায়ী বলল: তাই নাকি, এক কাজ করো, তোমার যদি কোনো সমস্যা না হয় তাহলে ডিমগুলো সব আমার জন্যে ভাজি করো।

বুড়ি ব্যবসায়ীর কথামতো দশটা ডিমই ভাজি করে নিয়ে এসে দস্তরখানে খেতে দিল। ব্যবসায়ী ডিমগুলো খেয়ে বলল দাম কতো হলো? বুড়ি জবাব দিলো- দশটা ডিমের দাম এক রিয়াল আর একটা রুটির দাম হলো অর্ধ রিয়াল। সব মিলিয়ে দাম হয়েছে দেড় রিয়াল।’ ব্যবসায়ী বলল ঠিক আছে, যাবার সময় তোমার টাকা হিসেব করে দিয়ে যাবো।’ সকাল বেলা বুড়ি ব্যবসায়ী লোকটির আগেভাগেই ঘুম থেকে জেগে মরু প্রান্তের দিকে গেল। ব্যবসায়ী লোকটার যখন ঘুম ভাঙলো, দেখলো বুড়ি ঘরে নেই। মনে মনে বলল পরের বছর যখন এখানে আবার আসবো তখন বুড়ির টাকা মুনাফাসহ একসাথে দিয়ে দেবো-এই বলে ব্যবসায়ী রওনা হয়ে গেল।

সত্যি সত্যিই পরের বছর ব্যবসায়ী বুড়ির ঘরে ফিরে এল এবং বলল হে বুড়ি! গত বছর তুমি ঘরে ছিলে না, সেজন্যে আমি তোমার ডিম-রুটির দাম পরিশোধ করতে পারি নি। এখন তোমাকে আমি দেড় রিয়ালের পরিবর্তে দশ রিয়াল দেবো। বুড়ি দশ রিয়াল নিয়ে খুশিতে প্রতিবেশির কাছে গেল এবং সকল ঘটনা খুলে বলল। প্রতিবেশী বুড়ির সব কথা শুনে বলল ওমা! ব্যবসায়ী লোকটা তো তোমাকে অনেক ঠকিয়েছে। ঐ দশটা ডিম যদি তুমি মুরগির পাখার নীচে তা দেওয়াতে তাহলে দশটি বাচ্চা ফুটতো। এক বছরে ঐ বাচ্চাগুলো বড়ো হতো। সেগুলো আবার ডিম দিতো। ভাবতে পারো তোমার কী পরিমাণ লাভ হতো। আর এখন তুমি মাত্র দশ রিয়াল পেলে! এটা কোনো টাকা হলো! তুমি এক কাজ করো! এখানে সময় নষ্ট না করে তোমার মাতবর ছেলের কাছে গিয়ে ঘটনা খুলে বলো।

বুড়ি তাই করল। তাড়াতাড়ি ছেলের কাছে গিয়ে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। মায়ের কথা শুনে ছেলে রেগেমেগে ব্যবসায়ীকে আটক করে কারাগারে বন্দী করে রাখলো। বুড়ির অপর ছেলে শিক্ষিত ও ন্যায়বিচারক বাহলুল কোনো এক কাজে তার ভাইয়ের ঐ কারাগার পরিদর্শনে গেল। সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীকে আটক দেখে জিজ্ঞেস করল তুমি আবার কী অন্যায় করেছো যে এই কারাগারে তোমাকে আটকে রাখা হলো? ব্যবসায়ী লোকটা পুরো ঘটনা বহলুলকে খুলে বলল। ব্যবসায়ী লোকটা যখন বুড়ির নাম ঠিকানা বলল, তখনই বাহলুল বুঝতে পেরেছিলো ঐ মহিলা তাদেরই মা। তাই বহলুল ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসা করল: উনি যে দশটা ডিম তোমাকে দিয়েছিলো সেই ডিমগুলো কি রান্না করা ছিল নাকি কাঁচা অর্থাৎ রান্না না করা ছিল?

ব্যবসায়ী লোকটা বলল: ডিমগুলো সব রান্না করা ছিল। আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম। তাই রান্না করা সেই ডিমগুলো রুটিসহ আমাকে খেতে দেওয়া হয়েছিল। বহলুল ব্যবসায়ীকে বলল: ‘তোমার কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে তুমি এই মর্মে নিশ্চিন্ত থাকতে পারো যে তুমি অবশ্যই মুক্তি পাবে।’ এই বলে বাহলুল সোজা চলে গেল তার মাতবর ভাইয়ের কাছে। গিয়ে, ভাইকে বলল আমাকে এক বস্তা গম দাও তো, গমের চাষ করব। মাতবর ভাই খুশি হয়ে বলল তুমি গমের চাষ করতে চাও, খুব ভালো। তোমাকে এক বস্তা না, দুই বস্তা গম দিচ্ছি, যাও চাষ কর।’ বহলুল দুই বস্তা গম নিয়ে রওনা হলো বাড়ির দিকে। বাড়িতে গিয়ে মাকে বলল আমাকে বড়ো বড়ো দুইটা পাতিল দাও তো! মা জিজ্ঞেস করল: বড়ো পাতিল দিয়ে কী করবে? বাহলুল বলল কাজ আছে! দুই বস্তা গম এনেছি। গমের চাষ করবো। সেজন্যে ভাবছি এগুলো ভালো করে সিদ্ধ করে জমিতে লাগাব। সিদ্ধ করা গমের চারা অনেক বেশি সবুজ হবে।

এই বলে বাহলুল বড়ো বড়ো দুইটা পাতিল চুলার ওপরে বসিয়ে দিল। পাতিলে পানি দিল, গমও ঢাললো। গণগণে আগুনে সিদ্ধ হতে লাগলো গম। মা এই দৃশ্য দেখে তাড়াতাড়ি মাতবর ছেলের কাছে চলে গেল। ছেলেকে বলল তোমার ভাই তো সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেছে। দুই বস্তা গম সিদ্ধ করছে চাষ করার জন্যে, বলছে ওগুলো জমিতে লাগালে নাকি অনেক বেশি সবুজ হবে। আজগুবি সব কথা শুনে বুড়ির মাতবর ছেলে ভাইয়ের কাছে গেল। ভাইকে বলল কী করছো তুমি এসব? সিদ্ধ গমের আবার চারা হয় নাকি! বাহলুল জবাবে বলল কেন হবে না? রান্না করা দশটা ডিম থেকে যদি মুরগির বাচ্চা হতে পারে তাহলে সিদ্ধ গম থেকে সবুজ চারা গজাবে না কেন? আমি চাচ্ছি জমিতে সিদ্ধ গম লাগাব। সবুজ গমের চারায় চারায় ভরে যাবে আমার ক্ষেত-খামার।

এসব কথা শুনে বুড়ির মাতবর ছেলের মুখে একেবারে কুলুপ লেগে গেল। সে আর দেরি না করে ব্যবসায়ী লোকটাকে মুক্তি দিয়ে দিল। এবার বাহলুল তার মায়ের কাছ থেকে ব্যবসায়ীর দেওয়া দশ রিয়াল নিয়ে সদ্য কারামুক্ত ব্যবসায়ীকে ফেরত দিয়ে দিয়ে বলল এই নাও! এটা তোমাকে যে অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করা হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ।

ব্যবসায়ী লোকটি বাহলুলকে মনেপ্রাণে দোয়া করল। তারপর পাড়ি জমালো তার নিজ গন্তব্যের দিকে।

(এএস/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test