E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চেনা চড়ুই

২০১৪ এপ্রিল ০২ ১৫:০৯:৩২
চেনা চড়ুই

আরিফুন নেছা সুখী : হঠাৎ করেই মেধার মনটা খুব ভালো হয়ে গেলো। মেধা নিজেও বুঝতে পারে, তার মনটা ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু কারণটা সে কিছুতেই বের করতে পারলো না।

এই তো ক'দিন আগেও এই বাসাটাতে আসা নিয়ে বাবা মা'র সঙ্গে সে এক তুলকালাম কাণ্ড। সে পুরনো বাসা ছেড়ে নতুন বাসাতে আসবে না। কিন্তু কি আর করা, বাসা তো বদলাতেই হবে। বাসা ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়ে গেছে। বাসা ছাড়ার দিন মেধার সে কি কান্না!

তবে অবাক বিষয় হলো, সে বারান্দায় গিয়ে কান্নাকাটি করছে। এটা দেখে ওর মা ভাবলো, বারান্দার সামনের বাসায় অন্তু নামের একটা মেয়ে থাকে, তার জন্য মনে হয় মন খারাপ করছে। কিন্তু অন্তু তো বাসাতেই এসেছে ওকে বিদায় জানাতে। তাহলে বারান্দায় গিয়ে কান্নার কারণ কী?

অনেক বুঝিয়েও লাভ হয় না। সে বারান্দার গ্রিল ধরে কান্না করেই চলেছে। মা বারান্দা থেকে চলে এলে অন্তু বারান্দাতে যায়। গিয়ে মেধার হাতের ওপর হাত রাখে। মেধা এবার অন্তুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। অন্তুর চোখ দিয়েও পানি গড়াচ্ছে। এতো দেখা যায় আরেক বিপদ! দুই বন্ধুর কান্না দেখে সবাই তো রীতিমতো হতভম্ব। ওদিকে বাবা বারবার তাড়া দিচ্ছে, তাড়াতাড়ি বের হওয়ার জন্য। কিন্তু কিসের কি! কান্না পর্ব থামতেই চাচ্ছে না। মা বারবার এসে বোঝাচ্ছে।

অগত্যা অন্তু মুখ খুললো। সে জানালো, বারান্দায় পানির পাইপের গোড়ায় চড়ুই পাখি বাসা করেছে। মেধা একা থাকলে ঐ পাখিদের সঙ্গে গল্প করে। ওদের ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে বলে মেধার খুব কষ্ট হচ্ছে। আবার ওরা ডিম দিয়েছে। ক'দিন পরেই বাচ্চা তুলবে। কিন্তু ওরা চলে গেলেই নাকি বাসাটা ভেঙে দেওয়া হবে। তাই ওর আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে।

মা বললো, কে বলেছে বাসা ভেঙে দেবে? কেউ বাসা ভাঙবে না। আমরা যাওয়ার সময় বাড়িওয়ালাকে বলে যাবো যেন পাখির বাসাটা ভেঙে না দেয়।

মেধা বলে, বাড়িওয়ালা ভাঙবে কেন?

ঐ দারোয়ান মনির আর মিস্ত্রী আলমগীর ভেঙে দেবে।

আচ্ছা ঠিক আছে, ওদেরকেও নিষেধ করে দেবো। নাও এবার চলো। বাবা কিন্তু অনেক রেগে যাবেন।

অন্তু মেধাকে কথা দিলো, সে পাখির বাসাটা দেখে রাখবে। কেউ ভাঙতে গেলে অন্তত বাচ্চা উঠানো পর্যন্ত সময় দিতে বলবে।

এভাবে বাসা বদলিয়ে মেধারা নতুন বাসায় এলো। নতুন বাসায় এসে ও কয়েকদিন মন খারাপ করে থাকলো। কিন্তু আজ হঠাৎ মনটা এতো ভালো, মানে এতো বেশি ভালো হয়ে গেল যে তা সে নিজেও ভাবতে পারলো না। এই মন ভালো হয়ে যাওয়ার কারণ হলো, এই নতুন বাসার বারান্দাতে দুটে চড়ুই পাখি বাসা বানানোর আয়োজন করছে। চড়ূই পাখি দুটো এমনভাবে মেধার দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে, তারা একে অপরের পরিচিত।

মা বাবা বাসায় নেই। তাই মেধা জানতে পারলো না। এই চড়ুইটা ওদের ঐ বাসার চড়ূইটা নাকি। বিকেলে ওরা বাসায় এলে, অন্তু ফোন করে। অন্তুকেচড়ুই পাখির কথা জিজ্ঞেস করে কে। অন্তু চুপ করে থাকে। ওকে কিছু বলতে পারে না। বারবার জিজ্ঞেস করার পর অন্তু বলে, তোরা যাওয়ার পরপরই মনির আর আলমগীর এসে পাখির বাসাটা ভেঙে দেয়, নতুন ভাড়াটিয়ারা বলেছে, ওরা বারান্দায় নোংরা রাখবে না। পাখিতে ময়লা ফেলে বারান্দা নোংরা করে ফেলে। আবার পাখির বাসাটার জন্য পাইপ দিয়ে পানিও নাকি পড়ে। তাই ওরা বাসাটা ভেঙে দিয়েছে মেধা।

মেধা একটুও মন খারাপ করে না। বরং অন্তুকে অবাক করে দিয়ে বলে, ওদের বাসায় পাখির বাসা থাকবে কি, না থাকবে ওদের ব্যাপার। তুমি মন খারাপ করো না। জানো বন্ধু, আমারচড়ুই আমার বাসায় ফিরে এসেছে। ওরা আমার বারান্দাতে নতুন করে বাসা বানাচ্ছে। এই খবরে অন্তুও খুব খুশী হয়।

পাশে দাঁড়িয়ে মা বাবা মেধার কথা শুনছিলেন। এবার এসে মেয়ের পাশে বসলেন। মেধা ফোন রেখে দিলো। মাকে সব কথা বললো। মেয়ের খুশী দেখে মা বাবাও খুশী হলেন। মেধা ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে গেলে মা বাবাকে বললো, সবচড়ুই তো দেখতে একই রকম। কি জানি এই চড়ুইটা ওর চেনাচড়ুই নাকি!

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test