E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পিংপং উদ্ধার অভিযান

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ২৫ ১৭:৩৩:৪২
পিংপং উদ্ধার অভিযান

আরিফুন নেছা সুখী : পিঁ পিঁ শব্দ তুলে লাইন ধরে হেঁটে চলেছে এক দল পিঁপড়া। সারি বেঁধে ওরা যাচ্ছে খাবারের সন্ধানে। টার্গেট একাত্তর নম্বর বাসার তিনতলার ডাইনিং টেবিল। শীত প্রায় চলেই এসেছে। তাই খাবার সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এজন্য তারা যাচ্ছে খাবার সংগ্রহ করতে। শীতে পিঠা-পুলি না খেলে কি হয়! তাই চিনি সংগ্রহ করতে হবে। ওদের টার্গেট ওই বাসার ডাইনিং টেবিল। ওই বাসার ডাইনিং টেবিলে কাঁচের কৌটা ভর্তি চিনি দেখে এসেছে ওদের দলের প্রতিনিধি পিং পং।

পিং পংয়ের দেওয়া খবরের ভিত্তিতেই তারা আজ ওই বাসার পথে চলেছে। বাসার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে তারা। সত্যি দেখল ডাইনিং টেবিলে কৌটাভর্তি চিনি। আজকেই চিনিটা ঢেলেছে বলে বয়ামের মুখে একটু-আধটু লেগে আছে। সেগুলো তারা সেখানেই চেটেপুটে খেলো।

এই বাড়ির ছোট্ট মেয়ে সিন্ধু চিনি খেতে খুব পছন্দ করে। তাই প্রায়ই সে চিনির কৌটার মুখ খোলা রেখে চলে যায়। এতে তো পিঁপড়াদের মহানন্দ। পিঁপড়ার সারি কৌটা বেয়ে ওপরে ওঠে চিনি সংগ্রহ করলো। তারপর তারা চিনি নিয়ে বাড়ি ফেরা শুরু করলো। কিন্তু যেতে যেতে হঠাৎ খেয়াল করলো, তাদের দলের প্রতিনিধি পিং পং দলে নেই! তারা এখন কী করবে? তারা মাঝপথে চলে এসেছে। না পারছে বাড়ি ফিরে যেতে, না পারছে পিং পংকে ফিরিয়ে আনতে। অনেক ভেবেচিন্তে তারা সিদ্ধান্ত নিলো, বাড়ি গিয়ে চিনিগুলো রেখে আসবে। তারপর পিং পংকে উদ্ধার করতে যাবে। আবার কখন থেকে তাদের মোবাইলগুলো বাজছে! মাথায় চিনি থাকায় মোবাইল ধরতেও পারছে না। এই ফোনটা যে পিং পং করছে, তা তারা বুঝতে পারছে।

কিছুটা সময় পর তারা বাড়ি পৌঁছে গেলো। বাড়ি ফিরে চিনিগুলো খুব যত্ন করে কৌটায় ভরে রাখলো। পিং পংকে মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে না। সম্ভবত চার্জ চলে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে ওর মোবাইল। তাই তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন পিং পংকে উদ্ধার করতে গেলো। কিন্তু একি অবস্থা! চিনির কৌটার মুখ তো অনেক শক্ত করে লাগানো! কাচের কৌটায় পিং পংকে দেখা যাচ্ছে। তার পেটটা বেশ ফুলে গেছে। ব্যাটা পিং পং ইচ্ছামতো চিনি খেয়ে পেট ফুলিয়ে টুপা হয়ে বসে আছে! এতো বেশি খেয়েছে যে, তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

পিঁপড়াগুলো দেরি না করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এলো। বাড়ি এসে সবাইকে জানাতে সবাই ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলো। কী করা যায়? কী করা যায়? শেষে অনেক ভেবে তারা সিদ্ধান্ত নিলো, গোয়েন্দা ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া কেউ ওকে উদ্ধার করতে পারবে না। যেই ভাবা সেই কাজ। পিটিং গোয়েন্দাকে ফোন দেওয়া হলো। পিটিং গোয়েন্দার কাজের নানা সিডিউল আছে। কিন্তু পিঁপড়া দলের প্রতিনিধি আটকা পড়েছে শুনে অনেক কষ্টে সময় ম্যানেজ করে তাকে উদ্ধার করতে রাজি হলো। কথাবার্তা ঠিক হলে পিটিং তার দলবল নিয়ে ঠিকানা মতো একাত্তর নম্বর বাসায় চলে গেলো। তারপর শুরু হলো পিং পং উদ্ধার অভিযান।

ব্যাটা পিং পং এখনও চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু মুশকিল হলো, কৌটা এতো শক্ত করে আটকানো যে খোলাই মুশকিল। হঠাৎ মনে হলো, বিকেল প্রায় হয়ে এসেছে। এখন চা খাওয়ার সময়। কেউ না কেউ নিশ্চয় চিনির কৌটা খুলবে। এই সুযোগে পিং পিংকে উদ্ধার করতে হবে। সেই মতো রশি আর মই নিয়ে তারা প্রস্তুতি নিলো। এমন সময় সিন্ধুর মা ঘুম থেকে উঠে চুলায় চায়ের পানি চাপালো। পিটিং গোয়েন্দা খুব খুশি। এই তো সময়। কিন্তু একি? সিন্ধুর মা তো চিনি ছাড়া চা খাচ্ছে! এবার কী হবে?

এসব ভাবতে ভাবতে সিন্ধু এসে চিনির কৌটা খুলে এক মুঠো চিনি মুখে দিলো। ওমা, পিং পং তো সিন্ধুর মুখে ঢুকে গেলো! এবার তো আরেক ঝামেলা। কী হবে এখন? সিন্ধু মুখে চিনি দিয়ে হাতটা টেবিলে ঝাড়লো আর অমনি ধুপ করে পিং পং টেবিলে পড়লো। আর পিটিংয়ের দলের সবাই মিলে পিং পংকে ঘাড়ে তুলে দিলো ভোঁ দৌড়!

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test