E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মা ও বাবা

২০১৫ জুন ১১ ১৬:৩৪:৪৯
মা ও বাবা

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : ১৯৮৪ সালে পেইচিং সন্ধ্যায়, পেইচিং মিউনিসিপ্যালিতির মহিলা ফেডারেশন ও শিক্ষা ব্যুরো ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান পেইচিং শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য "আমার মা" এবং "আমার বাবা" শিরোনামের এক প্রবন্ধ রচনার প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। এতে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ৩ লাখ ৮০ হাজার প্রবন্ধ পাওয়া গিয়েছিল।

শিশু ও কিশোররা তাদের নিষ্পাপ, ছলনাবিহীন ও অকৃত্রিম শিশুসুলভ মন দিয়ে নিজের জগৎ পর্যবেক্ষণ করতে চেষ্টা করে। তারা নিজের নিজের মা ও বাবাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং হুবহু তাদের নকল করে।

ফিনিক্স সাহিত্যের ব্যানারে 'মা ও বাবা' নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। সেখানে ২৯টি প্রবন্ধ বাছাই করে তা বিদেশী পাঠক-পাঠিকাদের জন্য বিদেশী ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের এর পাঠক-পাঠিকাদের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রবন্ধগুলো প্রকাশ করা হবে। এতে করে বাংলাদেশের পাঠক-পাঠিকারা আধুনিক চীন সমাজের শিশু ও কিশোরদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।

মা-র ছেলেকে বড় করে দেখা ও মেয়েকে ছোট করে দেখার মনোভাব পরিবর্তন
লেখক : উ শুয়াং (ষষ্ঠ শ্রেণি)

দাদার প্রতি আমার মা-র বরাবরই ছিল একচোখেমি, সবতাতে দাদার কথাই তিনি ভাবতেন। আমার জন্য কখনো মাথা ঘামাতেন না।

খেতে বসলে, মা বারবার দাদার বাটিতেই খাবার তুলে দিতেন। কখনো আমার বাটিতে দিতেন না, যেন আমি তাঁর নিজের সন্তান নই। এরকম দেখলেই আমার খুব রাগ হত। আমি ভাবতাম দাদা এমন কি অসাধারণ ব্যক্তি। ব্যাটা ছেলে ছাড়াতো আর কিছুই নয়! সবাই বলেঃ "আকাশটা ধরে আছে অর্ধেক পুরুষ আর অর্ধেক নারী।" আমি সর্বদাই বিশ্বাস করতাম, বড় হলে আমার ক্ষমতাও দাদার চাইতে কোন অংশে কম হবে না। মা-ও একদিন না একদিন একথা বুঝতে পারবেন।

একদিন, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে খবরের কাগজ খুলতেই একটা কার্টুন আমার চোখে পড়লো। তাতে দেখানো হয়েছে, একটা দাড়িপাল্লার বাম দিকে একটি ছেলে হাতে অনেক রকম ফল ও পুষ্টিকর খাবার নিয়ে গ্যাট হয়ে বসে আছে। আর দাড়িপাল্লার ডান দিকে একটি মেয়ে খুব মনমরা হয়ে বসে আছে, তার মা-বাবা তার দিকে গালিবর্ষণ ও মারধরের অঙ্গভঙ্গি করছে। কার্টুনটির নিচে লেখা রয়েছেঃ "কদাপি পুত্রকে অমূল্য মনে করে কন্যাকে অবজ্ঞা করবেন না।" কার্টুনটি দেখেই আমার নিজের অবস্থার কথা মনে এল। মনে হল, আমি যেন দাড়িপাল্লার ডান দিকের ওই মেয়ে। একথ ভেবে আমি খবরের কাগজ থেকে কার্টুনটি কেটে দেয়ালে লাগিয়ে দিলাম যাতে সেটি সহজেই মা-র চোখে পড়ে।

সেদিন লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আমি অনেক্ষণ কার্টুনটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। রাত গভীর হয়ে এলো তবু চোখে ঘুম নেই। হঠাৎ দরজা খুলে গেলো, মা সন্ধ্যার শিফটের কাজ সেরে কারখানা থেকে বাড়ি ফিরলেন। তিনি খেতে বসবেন এমন সময় দেয়ালে লাগানো কার্টুনটি তাঁর নজরে পড়ল। অমনি তিনি রেগে গিয়ে একটানে কার্টুনটি খুলে নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেললেন। আমি ভয়ে আমার মাথাটা লেপের তলায় টেনে নিলাম। ঘরে আর টুঁ শব্দটি নেই, চারদিকে নিস্তব্ধ।

কিছুক্ষণ পর আমি লেপটা একটু ফাঁক করে তাকালাম। মা যে কখন মাটি থেকে কার্টুনটি কুড়িয়ে নিয়েছেন তা টের পাইনি, দেখলাম তিনি তা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। আমার ভয় হলো এবার মা নিশ্চয় আমাকে দারুণ পিটুনি দেবেন। কার্টুনটি দেয়ালে না লাগালেই বোধ ভালো হত। আমার আফসোস হতে লাগল। আমি একদৃষ্টিতে মা-র দিকে তাকিয়ে রইলাম। দেখলাম, মা-র মুখে হাসি ফুটেছে আর তাঁর কুচকে থাকা ভ্রুটিও আবার টানটান হয়েছে। একটু পর তিনি কার্টুনটি টেবিলের উপরে রেখে হাতের চাপ দিয়ে তার ভাঁজগুলো সমান করে দিলেন এবং তাতে আঠা লাগিয়ে আবার দেয়ালে আটকে দিলেন। তখন আমি এক দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লাম, যেন আমার বুক থেকে একটা বিড়াট পাঠর নেমে গেল।

আমি যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই হল। সত্যি মা-র মনে ভাবের পরিবর্তন দেখা দিল। পরের দিন, আমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে ঘরে ঢুকতেই দেখলাম, টেবিলের উপরে বড় এক বাটি গরম ভাত আর তার ওপর ছড়ানো রয়েছে অনেকটা তরকারি। মা হাসিমুখে আমাকে বললেনঃ "উ সুয়াং, এখনি খেতে বস, নইলে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।" খাওয়া শেষ হলে আমি বাটি ধুতে গেলে মা আমাকে স্নেহের সঙ্গে বললেনঃ "তোমাকে বাটি ধুতে হবে না। তাড়াতাড়ি হোমওয়ার্ক শেষ কর। পরে ঘরের সব কাজ তুমি আর দাদা মিলে ভাগাভাগি করে নিও।" মা-র কথা শুনে আমার প্রাণ জুড়িয়ে গেল।

আমি হাতে কলমটা নিয়ে লিখতে বসতেই দাদাও হোমওয়ার্ক করতে এলো আর একলাই টেবিলের অর্ধেকটার বেশি জায়গা দখল করে নিল। ঠেলাঠেলিতে আমার আর বই খাতা রাখার জায়গা রইলো না। রেগে আর অধৈর্য হয়ে আমি দাদার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে দিলাম। ঝগড়া যখন বেশ তুঙ্গে, তখন মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। ঝগড়ার কারণটা শুনে তিনি বেশ কড়াভাবে দাদাকে বললেনঃ "তুমি হলে ওর দাদা, বোনের কথা তোমার শোনা উচিত।" তিনি আরো বললেন আমার হোমওয়ার্ক শেষ করার জন্য দাদা যেন আমাকে জায়গা ছেড়ে দেয়।

এই প্রথমবার মা ন্যায্য কথা বললেন। খুশিতে আমার মুখ থেকে কোন কথা বেরুলো না। আমি ভালোভাবেই বুঝলাম মা-র মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। এর পরে অনেক ব্যাপারে আমি দেখেছি মা-র আর আগের মতো সেই একচোখেমি মনোভাব নেই। (প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত)
সম্পাদনা : পরিতোষ বড়ুয়া

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test