E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 

 

আমার বাবা কতো ভাল

২০১৫ জুন ১২ ১০:২৭:৪৮
আমার বাবা কতো ভাল

লেখক : ফাং ছেন (ষষ্ঠ শ্রেণি) : শনিবারের সন্ধ্যায়, আমি ও আমার পিসতুতো দিদি খুব আগ্রহের সঙ্গে টেলিভিশনের "জন্তু জগৎ" প্রোগ্রামটি দেখছিলাম। এমন সময় পিসি ঘরে ঢুকেই দিদির দিকে তাকিয়ে তিরস্কারের সুরে বললেনঃ "বিশেষ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হবার পরীক্ষায় পাশ করতে পারোনি, এখন টেলিভিশন দেখতে লজ্জা করছে না!" তখন দিদি মনে মনে আহত হয়ে নিজের ছোট্ট ঘরে পড়াশুনা করতে চলে গেল। তারপর পিসি রেগে বাবাকে বললেনঃ "ছেন এখন ক্লাস সিক্সের ছাত্র, তুমি তার লেখাপড়ার দিকে কোনো নজর দিচ্ছ না।" বাবা একটু হেসে বললেনঃ "এ ধরনের টেলিভিশন ফিল্ম দেখলে অনেক কিছু জানা যায়, জ্ঞান বাড়ে। এও একধরনের শিক্ষা নয় কি?" পিসি রেগে মুখ ফিরিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

 

মনে পড়ে, আমি যখন সবে কথা বলতে শিখেছি, তখন বাবা তাঁর ষ্ট্যাম্প অ্যালবামটি নিয়ে আমাকে পড়াতে বসতেন। তিনি একটি ষ্ট্যাম্পে আঙ্গুল দেখিয়ে বলতেনঃ "দ্যাখো এটা হলো কৃষ্ণসার মৃগ, এটা ছোট কৃষ্ণসার মৃগ, এটা হলো জিরাফ......।" আর আমি তখন তাঁর সুর নকল করে উচ্চারণ করতাম। আমি খুব ভালো করে এই সব সুন্দর জন্তুর নাম মনে রেখেছিলাম।

প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হবার পর যখন দেখলাম, আমার ক্লাসের কোনো কোনো সহপাঠী ষ্ট্যাম্প সংগ্রহ করছে, তখন আমারও ষ্ট্যাম্প সংগ্রহ করার ইচ্ছা হল। বাবা সানন্দে জন্তুর চিত্রযুক্ত তাঁর সব ষ্ট্যাম্প আমাকে দিলেন। আমি বাবাকে ধন্যবাদ দেয়ার কথা মুখে আনতেই তিনি বললেনঃ "ধন্যবাদ এখন থাক। তোমাকে ষ্ট্যাম্প দেয়ার পিছনে একটা শর্ত আছে। তোমাকে এক একটি লেবেলে জন্তুগুলোর নাম এবং তাদের শ্রেণি, বর্গ, কুল ও প্রজাতিতে ভাগ করে বর্ণনানুক্রমে লিখতে হবে। পারবে?" আমি খুশি হয়ে রাজী হলাম। আমি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমার জ্ঞান অনুযায়ী জন্তুগুলোর নাম লেবেলে লিখে ফেললাম। কিন্তু তার মধ্যে অধিকাংশের নাম আমার জানা ছিলো না। আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম। তখনই আমি বুঝতে পারলাম এমন অনেক জিনিষ আছে যা বাবাও জানেন না। তারপর তিনি পেইচিং-এর ওয়াং ফুচিং- এর বাজারে গিয়ে আমার জন্য জীবজন্তু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের একগাদা বই কিনে আনলেন। আমার হাতে বইগুলো দিয়ে তিনি গম্ভীর সুরে বললেনঃ "বই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো শিক্ষক। বই থেকেই সব অজানা জিনিষ জানতে পারবে। মন দিয়ে এসব বই পড়বে।" এ ভাবে আমি বাবার দেয়া দায়িত্ব পালন করি। তাতে শুধু আমার জ্ঞানেই বাড়লো তা নয়, বই পড়া অভ্যাস আমার গড়ে উঠল।

পরে, ছোট জন্তু পোষার জন্য আমার উৎসাহ জাগল। আমি এক এক করে কচ্ছপ, কাঁকড়া, কাঠবিড়াল, কাঁটাচুয়া, টিকটিকি ও খরগোশ ইত্যাদি পুষতে লাগলাম। রোজ বাবার কথামতো এসব জন্তুর জীবন প্রণালী পর্যবেক্ষণ করতাম আর তা ডাইরিতে লিখে নিতাম। মনে আছে, একদিন আমাদের এক প্রতিবেশী আমাকে একটি তিতির পাখি উপহার দিলেন। তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়তাম। মা পাখিটি নোংরা বলে আমাকে তা পুষতে বারণ করলেন। বাবা মাকে মিথ্যা করে বললেনঃ "এই পাখিটি এখুনি ডিম পাড়তে যাচ্ছে।" কিছুদিনের মধ্যে পাখিটি আমার পোষ মেনে গেল। আমি "এসো" বলে ডাক দিলেই সে সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে দৌড়ে এসে খাবার চাইত। আমি জানতাম, এ ছিলো এক ধরনের অভ্যাসগত প্রতিক্রিয়া। কেননা শুরু থেকেই বাবা আমাকে পাখিটিকে একদিকে খাবার দিয়ে অন্যদিকে "এসো" বলে ডাক দিতে শিখিয়েছিলেন।

পিসি মাঝে মাঝে বাবাকে মনে করিয়ে দিতেন, আমি যেন ছোটবেলা থেকে জন্তু নিয়ে খেলায় মত্ত হয়ে পড়াশুনায় উৎসাহ না হারাই। কিন্তু বাবা উত্তরে বলতেনঃ "জন্তু নিয়ে খেললে উৎসাহ কমে না।" আসলেই তাই, জন্তুর প্রতি ভালোবাসাই আমাকে অনেক বই পড়ার উৎসাহ দেয়, আর বুঝতে পারি যে, প্রাকৃতিক জগতে আছে অন্তহীন রহস্য। তাই আমি ঠিক করলাম, বড় হয়ে এই রহস্যগুলো নিয়ে আমাকে গবেষণা চালাতে হবে ......।

দিদির এক একটি নতুন শব্দ উচ্চারণ করে মুখস্ত করার আওয়াজ আমার চিন্তাজাল ছিন্ন করে দিল, সেই সঙ্গে পিসির কন্ঠস্বর কানে এলোঃ "কাল কোথাও যেতে পারবে না। বাড়িতে বসে সারাদিন পড়া মুখস্থ করতে হবে।" আমি সঙ্গে সঙ্গে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম আগামীকাল রবিবার আমরা কি করব? বাবা আমার কাছে এসে কানে কানে বললেনঃ "ষ্ট্যাম্প অ্যালবামে যে সব জন্তুর ছবি নেই, তাদের ছবি তুলতে আগামীকাল চিড়িয়াখানায় যাব।" আমার বাবা সত্যিই কতো ভাল।

(প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test