E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 ঈশপের দু’টি গল্প

২০১৫ আগস্ট ১৬ ১৭:০২:২৬
 ঈশপের দু’টি গল্প

চাষী ও শিয়াল :

এক চাষী তার বাড়িতে মুরগি পালত। ওই বাড়ির পাশেই বাস করত একটি শেয়াল। মুরগি দেখলেই শেয়ালের জিভে পানি এসে যেত। আর তাই ধুর্ত শেয়াল প্রতিদিন মাঝরাতে চুপিসারে খাঁচায় ঢুকে একটি করে মুরগি খেয়ে ফেলত। অবশ্য আরো বেশি খেতে যে ওর লোভ হতো না তা নয়। কিন্তু মনে মনে ভাবত : "যদি বেশি বেশি খেয়ে ফেলি তাহলে চাষী টের পেয়ে যাবে। আর তখনই আমাকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতবে। তার চেয়ে বরং একটি করেই খাই। কথায় বলে না, অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।"

এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন সকালে চাষী গেল খাঁচা থেকে মুরগি ছেড়ে দিতে। কিন্তু আশপাশে তাকিয়ে মাটির ওপর শেয়ালের পায়ের ছাপ দেখতে পেল। তার মনে সন্দেহ হলো শেয়াল নিশ্চয়ই তার মুরগি খেয়ে ফেলেছে। তারপর সে খাঁচার দরজা খুলে দিয়ে এক এক করে মুরগি গুনতে লাগল। কিন্তু একি? অনেক মুরগি কমে গেছে! চাষীর আর বুঝতে বাকি রইল না যে, রাতের অন্ধকারে শেয়াল এসে মুরগি খেয়ে যাচ্ছে।

ওইদিনই চাষী শেয়ালকে উচিত শিক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খাঁচার চারপাশে জালের ফাঁদ বিছিয়ে দিয়ে চাষী একপাশে ওঁৎ পেতে বসে রইল। এদিকে প্রতিরাতের মত আজও শেয়াল এল মুরগি ধরতে। কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা সে খাঁচার দিকে পা বাড়ালো। আর এমনি চাষী ফাঁদ ধরে দিল টান। মুহূর্তেই শেয়াল জালের ভেতর আটকা পড়ে গেল। শেয়ালকে হাতের মুঠোয় পেয়ে রাগে চাষীর গা রি রি করতে লাগল। চরম শিক্ষা দেয়ার জন্য সে শেয়ালের লেজে আগুন ধরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। তেলের পাত্রে একটা ন্যাকড়া ভিজিয়ে শেয়ালের লেজে বেধে তারপর আগুন ধরিয়ে দিল। দেখতে দেখতে লকলক করে জ্বলে উঠল আগুন। শেয়াল সেখান থেকে পালানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল। মুহূর্তের আগুন লেগে গেল ফাঁদ পাতা জালে। জাল পুড়ে যেতেই শেয়াল ছাড়া পেয়ে গেল।

এরপর প্রাণ বাঁচানোর জন্য দিশেহারা শেয়াল দিল ভোঁ দৌড়। লেজের আগুন নেভানোর জন্য সোজা চাষীর ধানক্ষেতের মাঝ বরাবর দৌড়াতে লাগল। পাকা ধানক্ষেতের মধ্যদিয়ে যাওয়ার সময় শেয়ালের লেজের আগুন মুহূর্তেই লেগে গেল ধানগাছে। আর অমনি দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল আগুন। শেয়াল কোন মতে জ্বলন্ত মাঠ থেকে বাইরে গিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর শেয়ালের লেজের আগুন নিভে গেল। পেছনে তাকিয়ে শেয়াল দেখতে পেল পুরো মাঠজুড়ে আগুন আর আগুন।

অসহায় চাষী দূর থেকে তার ধানক্ষেত পুড়ে যেতে দেখে হতাশ হয়ে পড়ল। ধপ করে মাটিতে বসে সে বলতে লাগল : হায় হায়! শেয়ালকে শাস্তি দিতে গিয়ে আমার এতবড় শাস্তি হল! আহা! শেয়ালটাকে এতবড় শাস্তি না দিয়ে যদি দু'চার ঘা লাগিয়ে দিতাম তাহলেই তো চুরি করে আমার মুরগি খেতে আসতো না। লঘু পাপে গুরু দণ্ড দিতে গিয়েই তো আমার এতবড় ক্ষতি হল।

শেয়াল ও সারস :

একদিন এক শেয়াল নিমন্ত্রণ করল এক সারস পাখিকে। নিমন্ত্রণের দিন শেয়াল খুব যত্ন করে পায়েস রান্না করল। রান্নাবান্না শেষে টেবিলের দু'পাশে রাখল দুটি প্লেট আর মাঝখানে রাখল পায়েসের বাটি। এরপর মনে মনে বলল : সারস ভায়া জীবনেও এই ভোজের কথা ভুলবে না। উঃ আমার আর তর্‌ সইছে না, কখন যে দেখব মজাটা!

ঠিক এই সময় দরজা টোকা পড়ল। শেয়াল মুচকি হেসে দরজা খুলে দিতেই দেখতে পেল সারস তার লম্বা ঠোঁটে হাসি মেখে হাজির। শেয়াল স্বাগত জানিয়ে বলল : আরে সারস ভায়া, এসো এসো, রান্নাবান্না সব তৈরি। আগে খাওয়া-দাওয়াটা সেরে নেই তারপর বসে গল্পসল্প করা যাবে।

শেয়াল আর সারস পাশাপাশি খেতে বসল। শেয়াল তার লম্বা জিভ দিয়ে সুড়ুৎ সুড়ুৎ করে চেটে চেটে প্লেটের সব পায়েস শেষ করে ফেলল। কিন্তু সারস বেচারা তার ছুঁচালো লম্বা ঠোঁটটা কয়েকবার প্লেটে ডোবানোর চেষ্টা করল কিন্তু মুখে পায়েস উঠল না। এ দৃশ্য দেখে শেয়ালের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। সারসকে জব্দ করতে পেরে তার খুশির যেন শেষ নেই।

শেয়ালের চালাকি বুঝতে পেরে সারসও খানিকটা ভনিতা করে বলল : "এই যাঃ শেয়ালভায়া! একটা কথা তো তোমাকে বলতেই ভুলে গেছি। আজ যে আমি উপোস। এইমাত্র কথাটা মনে পড়ল। তোমার পায়েস খেতে পারছি না বলে মনে কিছু কর না ভাই।"

এরপর সারস শেয়ালকে তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিল এবং কিছুক্ষণ পর চলে গেল। পরদিন শেয়াল গেল সারসের বাড়ি। কিছু গল্প-আলাপ করার জন্য শেয়াল আর সারস আরাম করে চেয়ারে বসল। টেবিলের দিকে তাকিয়ে শেয়ালের তো চক্ষুস্থির! টেবিলে সাজানো আছে দুটো সরু কলসি । তাতে কানায় কানায় ভর্তি করে ঢালা হয়েছে রসালো পায়েস। সারস শেয়ালকে উদ্দেশ্য করে বলল, "জানি-তুমি পায়েস খেতে ভালবাস তাই আজ খুব যত্ন করে পায়েসই রাঁধলাম।"-এই বলে সারস কলসিতে লম্বা ঠোঁট ডুবিয়ে পায়েস খেতে মন দিল। কিন্তু শেয়াল বেচারা গোমড়ামুখে বসে রইল। তার তো আর সারসের মত লম্বা ঠোঁট নেই যে, কলসতে তা ডুবিয়ে পায়েস খাবে? কিছুক্ষণের মধ্যে সারস সব পায়েস খেয়ে সাবাড় করে ফেলল। এরপর ঢেকুর তুলে বলল : আরে একি শেয়ালভায়া! তুমিতো কিছুই খেলে না। সব পায়েসই তো পড়ে রইল।

সারসের কথাগুলো শেয়াল কি জবাব দেবে ভেবে পেল না। সারসের সঙ্গে সে যে প্রতারণা করেছে তার জবাব পেয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে রইল।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test