E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 সোনার তরী (এ সপ্তাহের ছড়া)

২০১৫ অক্টোবর ১২ ১২:৩৮:১০
 সোনার তরী (এ সপ্তাহের ছড়া)






 

যতীন্দ্রমোহন বাগচী
কাজলা দিদি

বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই-
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;-
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে,
আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে।
ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল!
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই-
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে’
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই
রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই?


আসলাম সানী
কি যে মজা লাগতাছে

কি আনন্দ-কি আনন্দ
খুশী খুশী লাগতাছে
নতুন বছর-নতুন দিনে
খুশীর খোয়াব জাগতাছে
ত্রিশ দিনের চান বি ডাকতাছে—

ছোটো-বড়ো সবতে মিলা
গলাগলি করুম
শান্তিসুখের ভবিষ্যতের
নয়া জীবন গড়ুম
উন্নয়নের নেত্রীর লগে
শুভপথটা ধরুম,

দীল বি খুইলা হাসমু-গামু
কি যে মজা লাগতাছে
চক্ষু দুইটা ফুল-ফসলে
মাটির ছবি আঁকতাছে
সত্য-ন্যায়ে— মিথ্যা-পাপী
দুজনেরা ভাগতা ।




রব্বানী চৌধুরীর ছড়া
১,

বাঘ বলেছে উত্তরে যা
সেথায় আছে বাঘিনী
ছাগ বলেছে দক্ষিণে যা
সেথায় আছে রাগিণী।
সূর্য বলে পূর্বে আসো
পশ্চিমে ত পাবে না
ঊর্ধ্ব দিকে মারলে ঢিল
অধঃর দিকেই যাবে না?
ঈশান বায়ু নৈঋত অগ্নি
ছড়ায় দশদিক ভাই ও ভগ্নি।
২,

নদীর নাম দোলাই
কেম্নে ওটা ভোলাই!
নদীর নাম গঙ্গা
পালের নায়ে রঙ্গা!
নদীর নাম মেঘনা
জলের কত বেগ না!
নদীর নাম পদ্মা
দেখতে হবে বদ্দা !
নদীর নাম যমুনা
কাজ ছাড়া ত কমু না
৩,
রাগ নয় রাগ নয়
রাগে মাথা ভাগ হয়!
রাগ করে দিলে হাঁটা
ফোটে শুধু দিলে কাঁটা!
রাগ হলে পরাজয়
রাগ ছাড়া ধরা জয়

নাসের মাহমুদ
নদী

নদীর ছিল ঝর্ণাবেলা
গোল্লাছুটের দিন,
নুড়ির নূপুর পরে নদী
নেচেছে ধিন ধিন ।

কত পাহাড় বন সবুজে
খেলতে গেছে যে-
কূল ছাপিয়ে দৌড়ে গিয়ে
গাঁও ছুয়েছে সে।

সমুদ্দুরে গা ভাসিয়ে
বিশ্ব ঘোরে যখন,
নদীর মনে ঝর্ণাবেলার
দৃশ্য জাগে তখন।

জলগাড়িতে চড়ে নদী
গড়গড়িয়ে চলে,
সবুজ গাঁয়ের খোকা সে
"এসো এসো" বলে।

স্মৃতিকাতর জলবালিকা
কী করে বার বার,
সাগরে যায় আবার আসে
নোলক নাকে তার।

মেঘবাহনে এসে নদী
পাহাড়ে গান গায়,
স্মৃতির মাটি ছুঁয়ে ছুঁয়ে
ফের সাগরে যায়।

পাহাড় সাগর বন সমতট
জলহরিণীর ঘর-
সূর্যকে সে মান্যি করে
আকাশও নয় পর।

মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক

কবিদের কিছু দিলে

কবিদের কিছু দিলে ঠকেনাতো কেউ
কবিরাই মুছে দেয় বেদনার ঢেউ।
কবি আছে বলে তাই চাঁদে এত আলো
আকাশের ছায়াপথ লাগে এত ভালো।
কবির কবিতা শুনে পাখির পালক
সঁপে দেয় বনে বনে জ্যোতির ঝালক।
কবি আছে বলে তাই আবেগের চুলে
শরত শোভিত হয় সুরভিত ফুলে।
এত কিছু জেনে যদি জাগে ও হৃদয়
কবিকে কখনো দিও কিছুটা সময়।


সোহেল মল্লিক
ক্যাট

সস্তা দরে বস্তা ভরে
কমলা-আপেল কিনে
দিল্লী থেকে বিল্লি গেল
রিকশা চড়ে চীনে।

চীন দেশেতে ভিনবেশেতে
বিল্লি দেখে রাতে
লক্ষ চীনার লক্ষ্য শুধু
মাংস ভরা পাতে।

মাংসগুলো হংস কীনা
করতে গিয়ে বাছ
বিল্লি হঠাৎ চিল্লি মেরে
চক্ষু চড়ক গাছ।

মাংসগুলো হংস নহে
নয় যে কোনো ‘র্যাট’
দিল্লী ফিরে বিল্লি জানায়
মাংসগুলো ‘ক্যাট’।

ইউসুফ রেজা
কোরবানি কোরবানি


গাবতলীতে ঢুকেই তিনি
গরু ছাগল ভ্যাড়াকে
চেঁচিয়ে হাঁকান এই খানে কি
সব তোরা যা ব্যারাকে ।

হাটে থাকবে মসলা ও মাছ
পেঁয়াজ এবং সবজি
কারো কাছে দেখলে পশু
ফেলবো কেটে কবজি ।
গরু দেখলেই রেগে ওঠেন
ছাগল কে দেন মার
উট দেখলেই বলেন তোরা
ঢাকার বাজার ছাড়।
২.

মোটা ও চিকন

মোটা গরুর মালিকও হয়
মস্ত বড় ভুঁড়ির
নিন্দুকেরা বলে ওনার
সব টাকাটাই চুরির।
রুগ্ন গরু, ভাগের গরু
সাত ফ্যামেলির কেনা
তাতেও ওদের কুলাচ্ছে না
কত্ত যে ধার দেনা!
৩,
গরু কেন কোরবানি দেয়
গাধা কেন দেয় না।
হাতি, ঘোড়া তারাও পশু
তাদেরও তো নেয় না?
বাজার থেকে ফিরে এসে
অমিত শুধায় মাকেই
আম্মু আমি প্রশ্ন করছি
পাচ্ছি যাকে তাকেই-
গরুর হাটে এত্ত বেশি
ছাগল কেন থাকে?
হাটে গিয়ে দেখলাম অনেক
ভেড়াও ঝাঁকে ঝাঁকে।

সুরাজ চৌধুরী
মহীষাসুর

শরৎ এলো,শরৎ এলো—
কইরে শরৎ?পালিয়ে গেলো?
দেখছি যারে,এ তো প্রাণের শরৎ নয়রে গ্রীষ্ম
এবার বুঝি কেড়েই নেবে মহীষাসুর বিশ্ব!
কোথায় শিউলী,কোথায় শিশির
কোথায় লুকায় জোছনা নিশির
দেখছি যারে এ কোন্ তিথির অলুক্ষুণে দানব
এবার বুঝি হেরেই গেলো দুগ্গা এবং মানব!
কোথায় সকাল,কোথায় সন্ধা
রাত নেমেছে অকাল বন্দ্যা
দেখছি আমার ডানে বাঁয়ে চিক্কুর এবং চামর
দুগ্গা,সতী,উমা’র গায়ে টি এস সিতে কামড়!
কোথায় কাত্তিক কোথায় গনেশ
দেখছো,দেখো কোটি ধনেশ
এরাই খুনী,এরাই চাটু,এরাই অসুর পালক
এই শরতে আগুন জ্বলে!তোমরা নেহাৎ বালক!
সগ্গ মত্ত্য পাতাল কাঁদে
মইশাসুরের পাতা ফাঁদে
কোথায় দুগ্গা মা জননী,কোথায় তোমার ভোলা?
বুঝবে ঠ্যালা পুজো নেবার কোলা বেরি কোলা!

জোবায়েদ সুমন
প্রথম দেখা

পথের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলে দারুণ একলা একা
আমি ছিলাম দূর যাত্রার ভীষণ ব্যস্ত পথিক
তোমায় দেখে জাগলো প্রাণে সুখের ব্যাথা ঠিক
আগেই কেনো তোমার সাথে হয়নি আমার দেখা
এক দেখাতেই ওলোট পালোট বুকের জমিন
এতো কালের সাজানো মন থমকে দাঁড়ায়
সব ভুলে তাই ধরতে ও হাত হাতটি বাড়ায়
আজকে কেনো ভালো লাগায় হই উদাসীন
এক নিমেষেই বদলে যেতে ইচ্ছে হল খুব
নতুন দিনের ডাক দিয়ে যায় শীতের হাওয়া
কোন নিয়মে যাবে ওগো যাবে তোমায় পাওয়া
দাও না বলে - তোমার জলে কেমনে দেবো ডুব
বেশ তো ছিলে নিজের ভেতর গোপন আড়াল চাঁদ
চোখের তারায় আটকে গেলাম অবাক চোখের ফাঁদ

জুলফিকার আলী
খোকন সোনা

খোকন সোনা,খোকন সোনা
বায়না করে রোজ,
ছাতিম গাছের টুনটুনিটার
নেয়নি সে কাল খোঁজ!
তালগাছের বাবুই পাখিটা
করল কি দিয়ে ভোজ?
নেয়নি কাল খোঁজ-
চড়ুই পাখিটার ফেটেছে নোজ!
দোয়েল-শালিক,বকপাখির
হয়েছি কি কাল?
বুনো কবুতরগুলো ধরেছে
শিকারী পেতে জাল!
এসব কিছুর নেয়নি খোঁজ
খোকন সোনা কাল,
তাই সবাই,খোকার ওপর
রাগ করে,ফুলিয়েছে গাল!

এম আর মনজু
গাঁয়ের ছবি

নদীর তীরে কাশবনেতে
সাদা ফুলের মেলা
বাতাস এসে দোল দিয়ে যায়
লুকোচুরির খেলা।

জোয়ার-ভাটা নদীর পানি
সকাল-বিকেল বেলা
ছলাৎ ছলাৎ, কল-কলানি
চলে ঢেউয়ের খেলা।

নানা রংয়ের পাল তুলে ঐ
মাঝি নৌকা বায়
তা’রি সাথে দূর আকাশে
পাখি উড়ে যায়।

এসব দেখে দিহান সোনা
রংতুলিটা নেয়
বাংলাদেশের গাঁয়ের ছবি
অমনি এঁকে দেয়।


আসলাম প্রধান
মামার গল্প

সবার মামা-ই ঢাকায় থাকেন
নিজের নিজের গাড়ি হাঁকেন !
রুমির মামা মস্ত গায়ক
পরিচিত মডেল নায়ক !
শিমুর মামা- সে ক্রীকেটার
ব্যাটিং যা হোক, বোলিং বেটার!
প্রভার মামা চাকরি করেন-
আবার তিনি ল'তে পড়েন !
কী কী আছে শশির মামার ?
হাঁস-মুরগি গরুর খামার !
রুমার মামা ভাবছো বেকার?
তিনি ভাল ঘড়ির মেকার !
তারও একটা গাড়ি আছে !
দেখলে আরো অবাক হবে-
পুরাণ ঢাকার সূত্রাপুরে
পাঁচতলা যে বাড়ি আছে !



ইমরান পরশ
বাবার মতো

ভাল্লাগে না লেখাপড়া ভাল্লাগে না বই
ইচ্ছে করে বাবার মতো অনেক বড় হই।
সারাটাদিন বাবা-মায়ের একটি কথাই- পড়ো।
টেবিলজুড়ে একগাদা বই করতে থাকি জড়ো।

ঘুমকাতুরে সকালবেলা জল ঢালি হাত-মুখে
ডিম মামলেট করে যে মা খাওয়ান পরম সুখে।
সূর্য ওঠার সঙ্গে আমি ইসকুলে দিই পাড়ি
ইসকুলে ক্লাস, কোচিং সেরে সন্ধে ফিরি বাড়ি।

একটুখানি নেই অবসর ব্যস্ত থাকি রোজ
মন বলে তুই আঁক্ না ছবি- রং করি তাই খোঁজ।
ডাংগুলি আর লাটিম-ঘুড়ি হয় না এসব খেলা
বই কেড়ে নেয় রৌদ্রসকাল রঙিন বিকেলবেলা।

আলমগীর কবির
প্রিয় সমাচার


চোখের প্রিয় বৃষ্টি এবং
বুকের প্রিয় শ্রাবণ,
মনের প্রিয় নদী এবং
সুখের প্রিয় প্লাবন।

ছায়ার মতো পাশেই আছে
দুঃখ মনের মিতা,
দু:খ ব্যথা বুঝতে পারে
বন্ধু প্রিয় কবিতা

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test