E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোনার তরী (এ সপ্তাহের ছড়া )

২০১৫ অক্টোবর ১৯ ১৭:১৯:৪১
সোনার তরী (এ সপ্তাহের ছড়া )






 

আবিদ আনোয়ার
তবলা আবিষ্কার

সে বহুদিন আগের কথা, অনেক বছর হবে;
সঠিক কারো নেই তো জানা কোথায় কখন কবে:
সাত-পুরুষের তালুকদারী খুইয়ে রজত বাবু
স্বভাবদোষে হলেন শেষে নিঃস্ব এবং কাবু।
সব গিয়েছে যায়নি তবু ঢোল বাজানোর শখ,
মধ্যরাতে শুরু করে চলতো সকালতক।
রাত-বিরেতে ঘুমের ঘোরে কে আর শোনে ঢোল?
বলতো লোকে পাগল নাকি, মাথায় গ-গোল!

আপনজনও ত্যক্ত হয়ে বকতো না যে তা না,
মাথার পোকা মারলে নাড়া কে শোনে কার মানা?
বসতঘরেই রজত বাবু বাজাচ্ছিলেন ঢোল,
ঝড়ের গতি পেলো যখন ‘টাক-ডুমা-ডুম’ বোল
গিন্নি বলেন: হচ্ছেটা কী? থামাও তাড়াতাড়ি!
নইলে আমি দিব্যি বলি ছাড়বো তোমার বাড়ি।

ভাবের বসে চক্ষু বুঁজে বাদক আত্মহারা,
গিন্নি এলেন কুড়াল হাতে, ঢোলের দশা সাড়া!
একটা কোপেই দু’ভাগ হলো হায়রে সাধের ঢোল,
বাদক দেখেন ছাউনি আছে আগের মতই গোল!
ব্যগ্রহাতে টুকরো দু’টি বসিয়ে পাশাপাশি
হাতের টোকায় বাজছে দেখে ফুটলো মুখে হাসি।
এক টুকরো তবলা হলো, আরেকটা তার বায়া.
ভাঙা তলায় বুদ্ধি করে লাগিয়ে নিলেন পায়া।

নাম কুড়ালে রজত বাবুর তবলা আবিষ্কার
গিন্নি বলেন গর্ব করে: কৃতিত্বটা কার?

আসলাম সানী
ধিক তাহাদের ধিক

পরের ধনে পোদ্দারি
খাস জমিনে জোদ্দারি,

চলা ফেরা আন্ধারে,
উল্টাপাল্টা ধান্ধারে ,
মস্তানী আর ছান্দারে
এমন নাগরিক-

দেশ-কাল-মানুষে বলে
ধিক তাহাদের ধিক-

আইনের হাতে ধরা খাবে
একদিন তারা ঠিক
আহা কি নির্ভীক!

রোকেয়া ইউসুফ
পরিবেম বান্ধব

একটা পাখি বেজায় কালো
চেনে সকল জনা
পেটটি পুরে সাবার করে
যত আবর্জনা
কা-কা রবে মাতায় পাড়া
কর্কশ তার ঢাক
বন্ধু সে য়ে পরিবেশের
নামটি হলো কাক।

নাহার ফরিদ খান
টিয়ার স্বাধীনতা

সবুজ টিয়াপাখি কথাতো কয়
নাম ধরে ডাকে, পিংকির বন্ধু হয়
রোজ ভোরে শেখে তালের সারে গামাপা
পিংকি ভালোবাসে সবুজ টিয়া পাখিটা।

পিন্জর বানিয়েছে দিয়ে খাঁটি সোনা
ভরা থাকে সেথায় দামী খানাদানা

টিয়া বলে স্বাধীনতা সোনার চেয়ে দামী
যেথা খুশি উড়ে যেতে চাই আমি
ভালোলাগে আকাশে মেলতে দু-ডানা
একসাথে আকাশে বেড়াবো কজনা।


সুরাজ চৌধুরী
যুদ্ধ


ঢঙ ঢঙ ছেড়ে দিয়ে ঠন ঠন বেজে ওঠে ঘড়ি
লোকে কয়,ধুর্ বোকা!তুই কালা!কানে খড়খড়ি!

মড় মড় বাদ দিয়ে ঝন ঝন ভাঙে বটগাছটা
লোকে কয়,কান নিয়ে গেলো চিল পাঁচটা!

এই নিয়ে তক্কটা জমেছিলো সেদিনের আড্ডায়
উইপোকা কেটে গেলো এ্যাব্বড়ো খাল সেই বাড্ডায়!

তক্কের মাঝখানে বেঁধে গেলো ভীষণ এক যুদ্ধ
লোকে কয়,বাহ্ বাহ্ এই তবে রামপুরা শুদ্ধ!

রব্বানী চৌধুরী
দুর্গার দশ হাতে

ভগবতি ভবানি
অম্বিকা ললিতা সে
নাম করি জবানি।

দুর্গার দশ হাতে
দশদিক সাফ ত
ত্রিশূলের আঘাতে
সরে যায় পাপ ত!

তিন চোখ দুর্গার
তিনরূপ কাজ ত
চাঁদ আর সূর্য
আগুনের সাজ ত।

সিংহের পিঠে চড়ে
দুর্গতি নাশলো
ছেলেবুড়ো সকলেই
মাকে ভালোবাসলো ।

মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক
জেগে ওঠো আয়লান


সময়কে প্রশ্ন সঁপে সমুদ্রের নির্জন শয্যায়
ঘুমিয়ে পড়েছে আয়লান, শত ক্যামেরার ক্লিকে
এখন ভাঙেনা তার ঘুম। অবাক দুচোখ মেলে
উড়ন্ত গাঙচিল ওড়ে শীতল শিশুর চারপাশে।

আনমনা ঢেউয়ের দল সব কোলাহল ভুলে
লজ্জার কাফন পরে ফিরে যায় ঘরে চুপিসারে
পৃথিবীর কীর্তি দেখে তারাও কবিতা লিখে আজ,
শ্বেত প্রাসাদের নিচে নৃত্য করে লাল নীল জল।

ভেঙে পড়ে পিরামিড ইতিহাস-ইতিকথা ভেঙে
লিখা হয় শান্তির সনদ পথে পথে পথ খোঁজে
পথ হারা পর্যটক মাতৃস্তনে ওড়ে উঁইপোকা
থোকা থোকা মৃত্যুর উত্তাপে ভেঙে পড়ে মরূদ্যান।

আয়লান- তুমি কি এখনো ঘুমিয়ে থাকবে? ওঠো-
এক ন্যায্য পৃথিবীর জন্য জেগে ওঠো আয়লান।


সোহেল মল্লিক
টম অ্যান্ড জেরি

টম বলে, ' জেরি রে
আর নয় দেরি রে
আয় কাছে যাদু রে
আমি তোর দাদু রে।'
জেরি বলে, ' দাদু রে
তুমি খুব আদুরে
ভালোবেসে দিলে ভাই
শুতে আজ মাদুরে।'
টম বলে, ' জেরি রে
চল কিছু খাই রে
পাকঘরে ঢুকে দেখি
যদি কিছু পাই রে।'
হায় হায় ভাই রে
খানাদানা নাই রে!
টম বলে, ' জেরি রে
কোথা বল যাই রে?
মনে কিছু নিস নে
তোকে খেতে চাই রে।'
জেরি বলে, ' টম রে
তুমি দেখি যম রে
আমি ভাই পায়ে পড়ি
নাও চমচম রে।'

আসলাম প্রধান
হরেক রকম কাণ্ড

মায়ের কোলে বাচ্চা হাসে
টগ্বগিয়ে
নানার সাথে নানী চলেন
বক্বকিয়ে!
পটকা ফাটে- পান্থ দাঁড়ায়
হক্চকিয়ে
মেঘের ফাঁকে বিজলী নাচে
ঝক্মকিয়ে!
কুমড়ো ডগা সাঁতার কাটে
লক্লকিয়ে
মিস্ত্রি মশাই কাজ করে যায়
ঠক্ঠকিয়ে!
ময়লা-ধুলোয় কেউ বা কাশে
খক্খকিয়ে
ডিম পেড়ে সব মুরগি ওঠে
কক্ককিয়ে!

বাঁশ বাগানে বইছে হাওয়া
শন্শনাশন্
কর্মশালায় আগুন জ্বলে
গন্গনাগন্!
মাঘের ঠা-া বাঘের গায়ে
কন্কনাকন্
তরুণ-যুবক রাস্তা হাঁটে-
হন্হনাহন্!
রান্না ঘরে বাসন কোসন
ঝন্ঝনাঝন্
গরম তেলে লবণ-মরিচ
ছন্ছনাছন্!
সুর মিলিয়ে বলছে কবি,
ফন্ফনাফন্-
টন্টনাটন্-টন্টনাটন্,
ঠন্ঠনাঠন্!

এ. কে. আজাদ ফাহিম
আপন ভাবে না কেউ

.পথে পথে ঘুরি আমি
পথ যে আমার ঘর
আপন ভাবে না কেউ
সবাই ভাবে পর।
.
পথেই আমার কর্মক্ষেত্র
পথেই করি আহার
পথেই আমার জন্ম হলো
পথেই হবে জীবনপার ।
.
ভালোবাসা পেলাম নাতো
শুধুই পেলাম অবহেলা
দিল না কেউ কলম হাতে
অন্ধকারে কাটলো বেলা।

আদিত্য আনাম
একটি দিনের আশায়

আশায় থাকি আশায় আছি একটি দিনের আশায়
যেদিন থেকে মানুষগুলো শালীন হবে ভাষায়।
মানুষগুলো থাকবে বেঁচে স্বপ্ন দেখে সুখের
একে অন্যের বন্ধু হবে একে অন্যেরদুুখের।
মানুষগুলো ভুলে যাবে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
গরীব-দুখী পাবেনা আর তুমুল অবহেলা।
বৃদ্ধাশ্রমে কেউ যাবেনা বৃদ্ধ হলেপরে
সারা জীবন থাকবে সুখে আপন আপনঘরে।
মানুষগুলো আর হবেনা চোর,ডাকাত আর খুনী
বিদ্যা-শিক্ষা শিখে শিখে সবাই হবে গুণী।
কেউ রবে না অনাহারী কেউ রবে না দুখী
সবাই রবে মিলেমিশে সবাই হবে সুখী।
আশায় থাকি আশায় আছি সেই দিনটার আশায়
সেই দিনটার স্বপ্নগুলো আমায় সুখে ভাসায়।

ইমরান পরশ
আয় ফিরে আয় রাসেল সোনা
(শেখ রাসেলের জন্মদিনে)

আয় রে রাসেল আরেকটিবার মায়ের বুকে আয়
ভালোবাসার চাদর গায়ে মনের বিছানায়।
সেই যে গেলি ঘর পালিয়ে আর এলি না ফিরে
মায়ের বুকে স্বপ্ন কত জানিস তোকে ঘিরে!
মোস্তাকটা বেয়াড়া খুব হায়েনা রশিদ-ডালিম
কেমন করে দিলো তোকে ওপার যাবার তালিম।
কী মায়াবি চোখের ভাষা নিষ্পাপ তোর মুখ
তবু বুঝি হয়নি মায়া তাদের এতটুক।
তোর কান্নার আওয়াজ বুঝি কাঁপায় আকাশ-জমিন
কাঁপল না বুক মোস্তাকদের বেহায়া সে কমিন।
কাঁদল আকাশ, কাঁদল বাতাস, কাঁদল বনের পাখি
নদীর জলও ঢেউ তোলেনি খুলল বোনের রাখি।
হাসু এবং রেহানা বু’র ছিন্ন করে মায়া
কই গেলি রে রাসেল রে তুই রাখলি শুধু কায়া।
আয় ফিরে আয় রাসেল সোনা আয় রে মায়ের বুকে
তোর মায়াবি মুখ লুকোবি আহা পরম সুখে।

রফিকুজ্জামান রণি
ছিন্নমূলের ঈদপ্রলাপ

আমার কোনো মামা নাই
নতুন কাপ জামা নাই
ঈদ কাটালাম এমনি
চুলার পাড়ে বিলাই ঘুমায় যেমনি
আমার কোনো পকেট নাই
টাকা পয়সার রকেট নাই
ঈদ কাটালাম পাটিতে
খুশির পুকুর ভইরা গেছে মাটিতে

আবদুল্লাহ আল মামুন
পুজোর ছড়া

বারো মাসে বাঙ্গালীর
অগণিত পর্ব,
শরতেই আছে যেন
বাঙ্গালীর গর্ব ।
যোগমায়া একা নয়-
ছেলেমেয়ে সঙ্গে,
সাড়া ফেলে চারিদিকে
আমাদেরই বঙ্গে ।
বাংলার নর নারী
শারদীয় নন্দে,
মাতোয়ারা কয়দিন
পুজো পুজো গন্ধে ।


জুলফিকার আলী
হরিণ ছানার সাজা

হরিণ ছানা মনের সুখে
নেচে বেড়ায় বনে,
সারা বন লাফিয়ে বেড়ায়
মার নিষেধ না শোনে!

যেতে বললে ডানের দিকে
যায় সে বামে-
দৌড়াতে নিষেধ করলেও দৌড়ায়,
নাহি সে থামে!

মার কথা অমান্য করার
পেল সাজা একদিন,
বাঘ মশাই খেল গিলে
ছানাটাকে দেখ্ ধিন!

তাই ছোটরা মায়ের কথা
মান্য করে চলও;
গুরুজনের কথা অমান্য করলে
পাবে এমন ফলও!

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test