E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোনার তরী(এ সপ্তাহের ছড়া)

২০১৫ অক্টোবর ২৫ ১৩:২৭:২৮
সোনার তরী(এ সপ্তাহের ছড়া)






 


জসীমউদদীন
নিমন্ত্রণ


তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমদের ছোট গাঁয়
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভায়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।
ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,
কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া।
ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী,
পারের খবর টানাটানি করি-
বিনাসূতি মালা গাঁথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;
বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তীরের হিয়া।
তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে- নরম ঘাসের পাতে,
চুম্বন রাখি অম্বরখানিরে মেজে লয়ো নিরালাতে।
তেলাকুচ-লতা গলায় পরিয়া
মেঠো ফুলে নিও আঁচল ভরিয়া,
হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে,
তোমার পায়ের রঙখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।
তুমি যদি যাও আমাদের গাঁয়ে, তোমারে সঙ্গ করি
নদীর ওপারে চলে যাই তবে লইয়া ঘাটের তরী
মাঠের যত না রাখাল ডাকিয়া,
তব সনে দেই মিতালি করিয়া,
ঢেলা কুড়াইয়া গড়ি ইমারত সারা দিনমান ধরি
সত্যিকারের নগর ভুলিয়া নকল নগর গড়ি।
তুমি যদি যাও – দেখিবে সেখানে মটর-লতার সনে,
সীম-আর-সীম হাত বাড়ালেই মুঠি ভরে সেইখানে।
তুমি যদি যাও সে-সব কুড়ায়ে,
নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,
খাব আর যত গেঁয়ো চাষিদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,
হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব জনে জনে।
তুমি যদি যাও- শামুক কুড়ায়ে, খুব-খুব বড় করে
এমন একটি গাঁথিব মালা যা দেখনি কাহারো করে;
কারেও দেব না, তুমি যদি চাও
মনের খুশিতে দিয়ে দেব তাও,
গলায় পরিবে ঝুমঝুম রবে পথেরে মুখর করে,
হাসিব খেলিব গাহিব নাচিব সারাটি গেরাম ভরে।
খুব ভোর করে উঠিতে হইবে, সুয্যি উঠারও আগে,
কারেও কবি না দেখিস পায়ের শব্দে কেহ না জাগে।
রেল সড়কের ছোট খাদ ভরে
ডানকিনে মাছ কিলবিল করে;
কাদার বাঁধাল গাঁথি মাঝামাঝি জল সেঁচে আগেভাগে,
সব মাছগুলো কুড়ায়ে আনিব কাহারো জানার আগে।
ভর দুপুরেতে একরাশ কাদা আর একরাশ মাছ,
কাপড়ে জাড়ায়ে ফিরিয়া আসিব আপন বাড়ির কাছ;
'ওরে মুখ-পোড়া ওরে রে বাঁদর।'
গালি-ভরা মার অমনি আদর,
কতদিন আমি শুনি নারে ভাই, আমার মায়ের পাছ;
যাবি তুই ভাই, আমাদের গাঁয়ে যেথা ঘন কালো গাছ।
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়,
ঘন কালো বন-মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।
গাছের ছায়ায় বনের লতায়,
মোর শিশুকাল, লুকায়েছে হায়!
আজিকে সে-সব সরায়ে সরায়ে খুঁজিয়া লইব তায়,
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।


আসলাম সানী
গ্রামের ইশকুল

ইশকুলেরই ফুলবাগানে
ফুল পরীদের মেলা
ক্লাসের লেখা-পড়ার মাঝে
টিফিনে হয় খেলা,

পাখির কিচির মিচির স্বরে
খোকা-খুকু সবাই পড়ে,

সবুজ গাছের পাতা নাচে
প্রজাপতির ওড়া
মুক্ত আলো-বাতাসে রয়
ইশকুলটা ভরা
আসলাম সানী
গ্রামের ইশকুল

ইশকুলেরই ফুলবাগানে
ফুল পরীদের মেলা
ক্লাসের লেখা-পড়ার মাঝে
টিফিনে হয় খেলা,

পাখির কিচির মিচির স্বরে
খোকা-খুকু সবাই পড়ে,

সবুজ গাছের পাতা নাচে
প্রজাপতির ওড়া
মুক্ত আলো-বাতাসে রয়
ইশকুলটা ভরা

নাসের মাহমুদ
প্লাস্টিকের পৃথিবী

প্লাস্টিকের চাল বেরোবে
মেলামাইন ডাল,
একবার তা কিনলে তবে
খাবেন চিরকাল ।

প্লাস্টিকের মাছ মাংস
প্লাস্টিকের ডিমও,
প্লাস্টিকের ফল-ফলাদি
আলু বেগুন শিমও ।

কতো রকম খাবার পাবেন
প্লাস্টিকের ঠেলায়,
সামনে শীতে দেখতে পাবেন
প্লাস্টিকের মেলায়।
প্লাস্টিকে জীবন ঠেকায়
প্লাস্টিকে বাঁচায়,
লৌহমানব বন্দি হবে-
প্লাস্টিকের খাঁচায়।

মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক
কথা

কথায় কথায় শুধু বয়ে যায় বেলা
কথা দিয়ে শুরু আর শেষ হয় বেলা
কথা খেয়ে প্রতিদিন ভরে যায় পেট
কথার গাড়িটা ভুলে হয় নাতো ‘লেট’
কথা শুনে মেঘমালা উড়ে যায় দূরে
কথাগুলো গান হয়ে গায় সুরে সুরে
কথা শুনে কাশবনে ছুটে আসে মেঘ
কথাতে অনেক কিছু থাকে উল্লেখ
কথায় কথায় কারো হয়ে যায় ফাঁসি
সেরে যায় যক্ষ্মা ও যাবতীয় কাশি
আকাশে বাতাসে ওড়ে কথার পালক
কথা এই জীবনের পালকও চালক
কথা শুনে ঘুম ভাঙে ফের আসে ঘুম
কথা যেনো আদরের উর্বরা চুম
কথার কারুতে রাঙা এই পরিবেশ
কথার কখনো যেন নাই কোন শেষ


রব্বানী চৌধুরীর ছড়া

নদী ভরা জল ছিল মাঠে মাঠে ধান
ঘাটে ঘাটে নাও ছিল হাটে হাটে গান।
বটগাছ কই গেল পিচঢালা পথ
ভাই ভাই মিল নেই ঘরে ঘরে মত!
গাছপালা কেটে কেটে পরিবেশ ফাঁদে
হিন্দুরা চলে গেছে সারা গাঁও কাঁদে!
সেই গাঁয়ে এই গাঁয়ে নেই কোন মিল
সেই গাঁয়ে পড়ে আছে আমাদের দিল।

২,

মোবাইলে কল দে
ফুলগাছে জল দে!

ফুলগাছ হাসলো
ছাগলটা আসলো!
ছাগল রে! দুধ দে !
খোকা যাবে যুদ্ধে !

যুদ্ধে না, পড়াতে
গাছ কাটে করাতে!!
করাতের শব্দ
খোকা করে জব্দ।

গাছ কাটা বন্ধ
শেষ হলো দ্বন্দ্ব !
পরিবেশ বাঁচল
গাছে পাখি নাচল!


ইউসুফ রেজা
ভুতের ছেলে

ভুতের ছেলের ঘুম আসে না
একটা কোনও গল্প ছাড়া
শ্মশানে আজ বাঁশি বাজায়
কোন মড়াটার মাথার চাড়া ।

কোন জানোয়ার রক্ত চোষে
অন্ধকারে মানুষ গেলেই
কোন ডাকিনী বেড়াল বানায়
হাতের কাছে শিশু পেলেই।

আজিমপুরে মেঘলা দিনে
কালকে হলো যার দাফন
আজ রাতে কেন নেচে বেড়ায়
গোরস্থানে তার কাফন!

এসব গল্প ছেলে শোনে
বসে মায়ের পায়ের কাছে
সারাটা রাত জেগেই থাকে
ভুতের ছেলে মায়ের কাছে।

সুরাজ চৌধুরী
যুদ্ধ

ঢঙ ঢঙ ছেড়ে দিয়ে ঠন ঠন বেজে ওঠে ঘড়ি
লোকে কয়,ধুর্ বোকা!তুই কালা!কানে খড়খড়ি!
মড় মড় বাদ দিয়ে ঝন ঝন ভাঙে বটগাছটা
লোকে কয়,কান নিয়ে গেলো চিল পাঁচটা!

এই নিয়ে তক্কটা জমেছিলো সেদিনের আড্ডায়
উইপোকা কেটে গেলো এ্যাব্বড়ো খাল সেই বাড্ডায়!
তক্কের মাঝখানে বেঁধে গেলো ভীষণ এক যুদ্ধ
লোকে কয়,বাহ্ বাহ্ এই তবে রামপুরা শুদ্ধ!



জুলফিকার আলী
রূপকথার রাজ্যে

খোকন সোনা চলছে খুঁজে,
কোমরে পিস্তুল বলছে গুঁজে।
আনবো খুঁজে আজব প্রাণী,
শব্দ শুনে আজব সাড়া'নি|

পিঠের ওপর বাজবে কাঁটা,
তারে দেখে নাচবে গা'টা।
প্রাণীটির নাম সজারু,
দেখতে লাগে মজার উঁ!

হায়রে হায়!কোথাই যাই!
দেশ থেকে হয়েছে কি লুপ্ত?
প্রাণীটি অনেক আগে-
হয়ে গেছে বিলুপ্ত!

তবুও খোকা চলছে খুঁজে,
কোমরে পিস্তুল বলছে গুঁজে।
সজারুর দেখা পেল না সে,
তাই ভাত খেল না সে।


রাগে-হয়রানে ভীষণ তেজে,
খেল সজারু ধরার মিশন ভেজে।


প্রাণীটি আছে রূপকথার রাজ্যে,
কিন্তু জানত না খোকা-কারণ
খুলত না সে বইয়ের ভাঁজ যে।

আল মামুন
শিশির

হেমন্ত এলেই আমি আবার
গাঁয়ে ফিরে আসি,
ঘাসের ওপর বসে আমি
খিল-খিলিয়ে হাসি ।

নদীর ধারের কাশফুল
আমায় শুধু ডাকে,
আমায় নিয়ে খোকা-খুকি
মিষ্টি ছবি আঁকে ।

আদর করে ওরা আমার
নাম দিয়েছে শিশির,
আমায় দেখে ভোরের পাখি
ডাকে কিচির-মিচির ।

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test