E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফয়সাল শাহ এর শিশুতোষ গল্প

২০১৫ অক্টোবর ২৭ ১৩:১৭:২৩
ফয়সাল শাহ এর শিশুতোষ গল্প






 

বানরছানা ও কৃষক

বনবাদাড়ে, গাছে-গাছে,ডালে-ডালে ছুটাছুটি লাফালাফি করে ভালোই দিনকাল যাচ্ছিল বানর ছানাটির । জঙ্গলে তার খাবারের অভাব নেই। রোজ রোজ একই রকম ফলফলাদি খেতে তার অরুচি ধরে গেল। প্রত্যেক দিন একই ধরনের খাবার খেতে মজা লাগছে না আর। একদিন ছুটাছুটি করে সে বনের বাইরে লোকালয়ে বের হয়ে গেল। সেখানে সে নতুন খাবারের খোঁজ পেয়ে গেল। এক কৃষকের ফলের বাগান ও সবজিখেতের খোঁজ পেল সে। শশা, গাঁজর ও পেয়ারা খেয়ে নতুন স্বাদ সে পেয়ে গেল। আর কি স্বাদ ! জিভে সারাক্ষণ অপূর্ব এই স্বাদ লেগে থাকে। সে মনে মনে আক্ষেপ করতে থাকে এ সুযোগের সন্ধান আগে কেন পাইনি। এই কথা আপন মনে ভাবতে থাকে বানর ছানাটি।

কচি পেয়ারা, শশা, গাঁজর খেতে কী যে মজা ! কচকচ করে খেয়ে বানর ছানা পেট ভরে ফেলে। প্রায়ই সে চাষির সবজি ও ফলবাগানে লুকিয়ে লুকিয়ে হানা দেয়। কৃষক বুঝতে পারছিল না শশা, গাজর, পেয়ারা কে বা কারা খেয়ে ফেলছে। বুদ্ধি করে চাষী মজবুত জালের ফাঁদ পেতে রাখে। আটকা পড়লে বোঝা যাবে কোন প্রাণী সবজি ও পেয়ারা খাচ্ছে। একদিন হঠাৎ বানর ছানাটি জালের ফাঁদে আটকে গেল।

বানরছানা ফাঁদে আটকা পড়ে সে কী চেঁচামেচি করতে লাগল। বাঁচাও! বাঁচাও! বলে কান্নাকাটি করল অনেক। কিন্তু কেউ তাকে ফাঁদ থেকে উদ্ধার করতে এল না। দাঁত দিয়ে সে ফাঁদ কেটে বের হতে চেষ্টা করল কিন্তু কিছুতেই সে ছুটতে পারছে না। লাফঝাঁপ দাপাদাপি করবার ফলে তার শরীর ফাঁদে আরো আটকে গেল। টানা হ্যাঁচড়া কামড়া কামড়ি করে তার শরীর প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে গেল। একটু পরে কৃষকের হাতে ধরা পড়লে তার কী পরিনতি হবে, একথা ভেবে সে শিউরে ওঠে। কৃষক নিশ্চই তাকে পিটিয়ে মারবে। সমূহ মৃত্যুর কথা চিন্তা করে তার গায়ের রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ভয়ে কাঁপতে লাগল, চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করল। জীবনে এর আগে সে এধরনের বিপদে পড়েনি। যে করেই হোক পালাতে হবে এখান থেকে। কিছুতেই চাষির পিটুনী খেয়ে জীবন দিতে রাজী নয় বানর ছানাটি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতে লাগল এবার যদি সে বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে যায়, তা হলে জীবনে আর কোনোদিন চুরি করে কোনোকিছু খাবে না। বন ছেড়ে লোকালয়ে আসবে না। অনেক ভেবে চিন্তে তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। তা যদি কাজে লাগে এযাত্রায় জীবন বেঁচে যাবে।

কতক্ষণ পর দেখা গেল কৃষক একটি লাঠি হাতে নিয়ে সবজি খেতের দিকে আসছে। ভয়ে বানর ছানার বুক কাঁপছে, আর কতক্ষণ পর তাকে মারা যেতে হবে। কৃষক হন্তদন্ত হয়ে ফাঁদের দিকে ছুটে আসছে। প্রায় কাছে এসে পড়েছে কৃষক লাঠি দিয়ে ফাঁদ উল্টে পাল্টে দেখে একটি মরা বানর ছানা ফাঁদে আটকা পড়েছে। তার নাকে মুকে নখে রক্তমাখা। কৃষক মনে করল বানর ছানাটি ফাঁদে আটকা পড়ার পর দাপাদাপি করে মারা পড়েছে। কৃষক কি করল হাতদিয়ে জাল থেকে মরা বানর ছানাটি বের করে লেজে ধরে দূরে ছুড়ে ফেলে দিল। বানরছানাটি আছাড় খেয়ে ক্যাঁত করে উঠল এবং কৃষকের দিকে তাকিয়ে একটা ভ্যাংচি কেটে দৌঁড়ে বনের ভিতর পালিয়ে গেল। কৃষক একেবারে বোকা হয়ে গেল। এই পুঁচকি বানরের বাচ্চা আমাকে এতবড় একটা ধোঁকা দিল। ক্ষোভে দুঃখে কৃষক কাচি দিয়ে জালের ফাঁদ ছিড়ে বাড়িতে চলে গেল। আর মনে মনে বলতে লাগল কোনও দিন যদি বানরের বাচ্চা তোর নাগাল পাই, তবে উচিত শিক্ষা দেব। তখন বুঝতে পারবি কত ধানে কত চাল।

বানরছানাটি জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে একগাছ থেকে আরেক গাছে লাফালাফি করে ফলফলাদি খায়, এভাবে তার দিন যেতে লাগল। কৃষকের সবজি বাগানের কথা মনে হলে তার জিভে পানি এসে যায়। কিন্তু সেখানে গেলে এবার জীবনটাই যাবে। প্রথমবার সে কপালগুনে বাচতে পেরেছে। গাজর, শশা ও পেয়ারার স্বাদ কিছুতেই ভুলতে পারছে না। তার একমনে বাগানে যেতে ইচ্ছে করে, আবার অন্যমনে ধরা পরার ভয়ে আঁতকে উঠে। তাছাড়া সে প্রতিজ্ঞা করেছিল কোনোদিন বাগানে যাবে না। কিন্তু কিছুতেই সে আর লোভ সামলাতে পারছিল না। লোভে পরে সে বিপদের কথা ভুলে গিয়ে একদিন আবার কৃষকের সবজি বাগানে চলে গেল। এবার সে পেটপুরে শশা আর গাজর খেয়ে নিল। এভাবে সে প্রায়ই কৃষকের সবজি বাগানে লুকিয়ে লুকিয়ে শশা, গাঁজর, আলু খেতে লাগল। এবার কৃষক টের পেল আবার বানরছানাটি তার বাগানে আসছে। এভাবে দিন কয়েক যাচ্ছে, বানরছানার উৎপাত বেড়ে গেল। কৃষক চিন্তা করতে লাগল কিভাবে দুষ্ট বানরছানাটিকে শিক্ষা দেয়া যায়।

একদিন সকালে বানরছানাটি আবার সবজি বাগানে এলো এবার সে দেখতে পেল বাগানে বড় একটি কুমড়ো পরে আছে। কুমড়োর কাছে গিয়ে প্রথমে নাক দিয়ে শুঁকে নিল এতে করে তার জিভে পানি এসে গেল। এবার সামনে দু’পা দিয়ে কুমড়োটি খামচে ধরে একটি কামড় বসিয়ে দিল। কিন্তু হায় বানর ছানাটির দু’পা কুমড়োর সাথে শক্তভাবে আটকে গেছে গায়ের শক্তি দিয়ে টানাটানি করছে কিছুতেই পা ছোটাতে পারছে না। এবার বানরছানাটি চেঁচামেছি করতে লাগল, কৃষক টের পেয়ে গেল তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে বানরছানাটিকে কৌশলে একটি পাটের বস্তার ভিতর ভরে ফেললো এবং বস্তার মুখ বেধে কাধে করে বাড়িতে নিয়ে গেল। বাড়ির পেছনে মুরগির খোয়াড়ে বস্তার মুখ খুলে রেখে দিল এবং দরজা বন্ধ করে রাখল।

এদিকে বানরছানা ভয়ে প্রায় অজ্ঞান এবার বুঝি আর রক্ষা নেই। সে মনে মনে আবার চিন্তা করতে লাগল লোভে পাপ পাপে মৃত্যু তা না হলে প্রথমবার ভাগ্যগুণে বেঁচে যাবার পর দ্বিতীয়বার যদি লোভ না করে সবজি বাগান থেকে দুরে থাকত তাহলে আজকে তার এ পরিনতি হয় না। এবার সে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে লাগল আর প্রতিজ্ঞা করল এবার যদি ভাগ্যগুনে মুক্তি পায় তাহলে জীবনে আর কোনোদিন সবজি বাগানের ত্রি-সীমানায় পা মাড়াবে না। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা ঘটিয়ে রাত এসে গেল, আর বানরছানাটি তার মৃত্যুর প্রহর গুনতে লাগল, নিশ্চিত সকালে কৃষক তাকে জীবনে মেরে ফেলবে।

রাত যতই গভীর হতে লাগল বানরছানাটি হঠাৎ শুনতে পেল দূরে কয়েকটি বনবিড়াল ডাকছে। সাথে সাথেই তার মাথায় একটি বুদ্ধি এসে গেল, এবার বুঝি মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার শেষ চেষ্ট করার সুযোগ এসে গেল। তাড়াতাড়ি করে তার সাথে থাকার দুটি মুরগিকে খামচাতে লাগল, এতে করে মুরগি দুটি কক্-কক্-কক্ শব্দ করতে লাগল। মুরগির গলার আওয়াজ শুনে দুটি বনবিড়াল একেবারে মুরগির খোয়াড়ের সামনে এসে চারদিকে খামচাতে লাগল, কিভাবে খোয়াড় থেকে মুরগি দুটিকে ধরা যায়। খামচা খামচি করতে হঠাৎ খোয়াড়ের দরজা খুলে গেল, আর অমনি বানরছানাটি মুরগি দুটিকে লেজে ধরে টেনে দরজা দিয়ে বের করে দিল। আর সাথে সাথেই বনবিড়াল মুরগি দুটি গলায় কামড় দিয়ে জঙ্গলে চলে গেল। বানরছানাটি খোয়াড়ের দরজা দিয়ে একলাফে বের হয়ে লেজ উচিয়ে একদৌড়ে জঙ্গলে পালিয়ে গেল এবং একটি উচু গাছের মগডালে উঠে বসে রইল।

এদিকে সকালে ঘুম থেকে এসে কৃষক দেখতে পেল খোয়োড়ের দরজা খোলা বানরছানা ও তার মুরগি দুটি নেই। সামনে জঙ্গলে এগিয়ে গিয়ে দেখে মুরগির পাখনা ও হাড্ডিগুড্ডি পড়ে আছে। শোকে-দু:খে ও রাগে কৃষকের মাথায় রক্ত উঠে গেল। তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে বিছানায় শটান হয়ে শুয়ে রইল। আর চিন্তা করতে লাগল এবারও বানরছানাটি তাকে বোকা বানিয়ে পালিয়ে গেল। এবার সে সবজি বাগানে গিয়ে সব গাছ কেটে ফেলল। কৃষকের পাগলামি দেখে তার ছোট্ট মেয়ে কাকলী জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে বাবা, তুমি সবজি বাগানের সব গাছ কেটে ফেলছ কেন, কৃষক বলল, আর বলিস না মা বানরছানাটি আমাদের সবজি খেয়ে যেভাবে ক্ষতি করছে তার দু-দু’বার তাকে হাতের নাগালে পেয়েও কিছুই করতে পারিনি তাই রাগে অপমানে সবজি বাগান ধ্বংস করে ফেলেছি। কাকলী বাবাকে বলল তা এখন আমরা কিভাবে চলব আর তুমিইবা কিভাবে আমার ইস্কুলের বই, খাতা, পেন্সিল কিনবে।
চিন্তা করিস না মা কোনোভাবে আমাদের চলে যাবে। দরকার হলে বাজারে গিয়ে দোকানদারি করব, তাও না পারলে কুলির কাজ করব কিন্তু আমি আর কৃষিকাজ করব না।
বাবার কথা শুনে কাকলী চিন্তায় পড়ে গেল। এটুকু বান্দরের বাইচ্চা আমার বাবাকে এভাবে নাস্তানুবাদ করেছে। আমি তাকে সারা জীবনের জন্য বন্দী করব।

কাকলী প্রতিদিন সকালবেলা কেটে ফেলা সবজি বাগানের ভিতরে হাঁটাহাঁটি করে আর জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে থাকে বানরছানাটির দেখা পায় কিনা। একদিন সে জঙ্গলের কিনারে গিয়ে গাছের নিচে দুটি কলা ফেলে রাখে। পরের দিন গিয়ে দেখে কলাদুটির ছোকলা পড়ে আছে। এভাবে একদিন সকালে আবার দু’টি কলা ডুমুর গাছের নীচু ডালে বেঁধে রাখে আর দূরে সবজিক্ষেতের মধ্যে বসে তাকিয়ে দেখতে থাকে। হঠাৎ দেখতে পেল বানরছানাটি একগাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে লাফিয়ে এসে ডুমুরগাছের নিচে বসল এবং একলাফে থাবা দিয়ে ধরে কলা দু’টি খেতে লাগল। এভাবে প্রায়ই কাকলী বানরছানাকে কলা খাওয়াতে লাগল। এখন বানরছানাটি কাকলীর একেবারে কাছে এসে হাত থেকে কলা খায় এবং দু’জনে একসাথে খেলা করে।

একদিন কাকলী যখন খেলাশেষে বাড়িতে যাচ্ছে তখন বানরছানাটিও কাকলীর পিছু পিছু বাড়ি পর্যন্ত এসেছে। কাকলী তাকিয়ে দেখে বানরছানাটি তার পেছনে। সে তখন তাকে তুলে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায়।

কৃষক বানরছানাটি দেখে রাগে কটমট করে কাকলীর কাছ থেকে নিয়ে ডানায় দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে।

আব্বুর রাগ দেখে কাকলী ভয় পেয়ে যায়, এবার বুঝি বানরছানাটিকে পিটিয়ে মারবে। কাকলী ভয়ে ভয়ে তার আব্বুকে বলে, বানরছানাটির সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে এবং তার সাথে খেলা করে এখন থেকে তাকে বাড়িতে রেখে পোষ মানাবে।

কৃষক রেগে কাকলীকে এক ধমক দিয়ে বলে, না ওকে আজ পিটিয়ে মারব। সবজি খেয়ে আমার অনেক ক্ষতি করেছে। কাকলী কান্নাকাটি শুরু করে দিল, সে কিছুতেই বানরছানাটিকে মারতে দেবে না। মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাকলী জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।

কাকলীর মা এসে কান্না থামাতে চেষ্টা করলো, কিছুতেই কান্না থামছে না। কাকলীর মা কৃষককে অনুরোধ করলো, বানরছানাটিকে না মারতে, কৃষক একটু নমনীয় হলো। ঠিক আছে তোমরা যখন বলছ তা হলে বানরছানাটিকে আর মরবো না, এই বলে বানরছানাটির বাঁধন খুলে কাকলীর হাতে দিল। কাকলী তো মহাখুশি।

তারপর থেকে বানরছানাটি কাকলীর সাথে বসবাস করে। কাকলী বানরছানাটিকে সময়মতো কলা, রুটি, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়াত। কাকলীর পিছুপিছু সে সারাক্ষণ থাকে, শুধু স্কুলে যাবার সময় কাকলীর মায়ের কাছে থাকে। বানরছানাটিকে নিয়ে কাকলী গাছে ওঠে, মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে, পুকুরে গোছল করে, বৃষ্টিতে ভেজে। এভাবে ধীরে ধীরে কাকলীর সাথে থেকে বানরছানাটি বড় হতে লাগল।

এদিকে কৃষকের বড় মেয়ে শেফালীকে বিয়ে দেয়ার জন্য কৃষকের টাকার প্রয়োজন। মাঠের যেটুকু কৃষিজমি ছিল তা গ্রামের মাতব্বরের কাছে বন্ধক দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে যথারীতি ধুমধাম করে শেফালীর বিয়ে দিয়ে দেয়। দিন যেতে থাকে কৃষকের। সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। কৃষক টাকা পরিশোধ করে জমির বন্ধক মাতব্বরের কাছ থেকে ছুটাতে পারে না। একদিন কৃষক মাতব্বরের কাছ থেকে আরো কিছু টাকা নিয়ে কৃষিজমিটুকু মাতব্বরের কাছে বিক্রি করে ভূমিহীন হয়ে যায়। এখন কৃষক মানুষের জমিতে মুজুরখেটে সংসার চালায়। ইতোমধ্যে বানরছানাটি বড় হয়ে একটি পরিণত বানর হয়ে যায়। কাকলীর সাথে বসবাস করতে করতে বানরটি মানুষের অনেক কথাবার্তা আকার ইঙ্গিত বুঝতে শেখে। কাকলী বানরটিকে ডিগবাজী খেতে বললে ডিগবাজী খায়, লাফ দিতে বললে লাফ দেয়, ভেংচি কাটতে বললে ভেংচি কাটে। এভাবে বানরটি সার্কাসের বানরের মতো অনেক খেলা শিখে ফেলে ।

একদিন কাকলী তার বাবাকে বলে চলো আমরা শহরে গিয়ে বানর খেলা দেখিয়ে আয় করি এবং আমাদের সংসারে আর কোনো অভাব-অনটন থাকবে না, আমিও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারব। কাকলীর কথা তার মায়ের মনঃপুত হলো এবং কৃষককে বলল, সকলে মিলে শহরে গিয়ে বানর খেলা দেখিয়ে আয় করা যাবে। কৃষক যথারীতি কাকলী ও তার মায়ের কথায় রাজি হয়ে গেল।
প্রথমে কৃষক ও কাকলী ঢাকায় এসে গুলিস্তান, কওরানবাজার, কমলাপুর রেলস্টেশনের আশে-পাশে বানর খেলা দেখিয়ে রোজগার করতে লাগল । আর কাকলীর মা গ্রামে থেকে গেল, কৃষক মাসে মাসে টাকা পাঠায়। তা দিয়ে কাকলীর মা সংসার চালায়। বাবা আর মেয়ে কমলাপুর বস্তিতে বসবাস করে এবং কাকলী একটি স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যায় ।

ধীরে ধীরে বানর খেলা দেখিয়ে কৃষকের হাতে অনেক টাকা জমা হলো, এখন বস্তি ছেড়ে তারা একটি ছোট্ট বাসা ভাড়া করে গ্রাম থেকে কাকলীর মাকে ঢাকায় নিয়ে এসে পরিবারের সকলে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

কৃষক একদিন যে বানরছানাটিকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল এখন সে-ই তাদের জীবিকার অবলম্বন হয়ে উঠল। সুতরাং রাগ করে ক্ষুব্ধ হয়ে কারোই ক্ষতি করতে নেই, বরং সকল প্রকার প্রাণী, উদ্ভিদ ও অন্যান্য জীবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test