E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোনার তরী(এ সপ্তাহের ছড়া)

২০১৫ নভেম্বর ২৮ ২০:২৪:২৩
সোনার তরী(এ সপ্তাহের ছড়া)












 

সুকুমার রায়
ভাল রে ভাল

দাদা গো! দেখ্ছি ভেবে অনেক দূর
এই দুনিয়ার সকল ভালো,
আসল ভালো নকল ভালো,
শস্তা ভালো দামীও ভালো,
তুমিও ভালো আমিও ভালো,
হেথায় গানের ছন্দ ভালো,
হেথায় ফুলের গন্ধ ভালো,
মেঘ-মাখানো আকাশ ভালো,
ঢেউ-জাগানো বাতাস ভালো,
গ্রীষ্ম ভালো বর্ষা ভালো,
ময়লা ভালো র্ফসা ভালো,
পোলাও ভালো কোর্মা ভালো,
মাছ-পটোলের দোল্মা ভালো,
কাঁচাও ভালো পাকাও ভালো,
সোজাও ভালো বাঁকাও ভালো,
কাঁসিও ভালো ঢাকও ভালো,
টিকিও ভালো টাকও ভালো,
ঠেলার গাড়ি ঠেল্তে ভালো,
খাস্তা লুচি বেল্তে ভালো,
গিট্কিরি গান শুনতে ভালো,
শিমূল তুলো ধুন্তে ভালো,
ঠান্ডা জলে নাইতে ভালো,
কিন্তু সবার চাইতে ভালো—
পাঁউরুটি আর ঝোলা গুড়।



আলম তালুকদার
সেই যে একাত্তরে :

আকাশ যদি কালো মেঘে যায় কোনোদিন ঢেকে
বাতাস যদি না বহে আর একটা সময় থেকে
পাখি যদি না উড়ে আর ঝিমায় নিজের নীড়ে
সাত সমুদ্র তের নদী হাজার নদীর তীরে।
হঠাৎ যদি নিটাল হয়ে ঢেউ যদি না ভিড়ে
একটা যুবক বাইরে গেলে আর যদি না ফিরে
একটুখানি মালুম হবে সেই যে একাত্তরে
অবস্থাটা ছিল এমন বাইরে অন্তপুরে।

সেই সময়টা হঠাৎ যদি কারো মনে পড়ে
কেমনভাবে সুস্থ থাকে হাসবে কেমন করে?
হঠাৎ হঠাৎ রাজাকারে পুত্রকন্যা ধরে
বসতাড়ি বিরান তাকে কেউ থাকে না ঘরে।
পাক বাহিনীর গুলি খেয়ে যাচ্ছে মানুষ মরে
দিনের বেলায় রাত্রি নামে বিশ্ব চরাচরে
পরিবেশটা এমন ছিল ঐ যে একাত্তরে
মনে হলেই বুঝতে পারি আত্মা খালি উড়ে।



জগলুল হায়দার
খুশিতে

টিয়ে নাচে বাঁদর নাচে
সঙ্গে নাচে হুলো
বাংলাদেশের এমন জয়ে
বিজয় ধ্বনি তুলো।
তাই কি বনের পাখিরা সব
গাচ্ছে এমন শিসে
খুশিতে আজ যাচ্ছে সবাই
গলায় গলায় মিশে।


রব্বানী চৌধুরী
লাটসাহেবের নাতি



লাটসাহেবের নাতি
লক্ষ টাকায় আনল কিনে
সুন্দরবনের হাতি।
হাতির শুঁড়টা লম্বা
নাতির পাওয়ার কম বা ?
হাতির পিঠে টানিয়ে ছাতি
আনল দীঘল রাতি!
রাতি ছিল ভীষণ কালো
কেউ দেখে না সূর্য-আলো
সূর্য গেল ডোবে !
সূর্যসেনরা সূর্য খোঁজে
পড়ল ফেটে ক্ষোভে!
লাটসাহেবরা হাওয়া
সূর্যটা যায় পাওয়া।


সুখী আরিফুন নেছা
মেঘের সাথে কথামালা

রাশভারী মেঘ
থমথমে মুখ
চেয়ে আছে ওই
সেই আমার সুখ।

মেঘখানা উড়ে যায়
চাঁদ হাসে ওই
তবু আমি অপলক
চেয়ে থাকি সই।

সই আমার বলে হেসে
চলো সই ঘরে যায়
আমি বলি ওরে মেঘ
ফিরে আয় ফিরে আয়...

মেঘ বলে ফিরবোনা
আমিতো রাশভারী
তবু তুমি ডাকো বলে
না এসে কি বলো পারি...

ফয়সাল শাহ
বাবুই ও চড়–ই

তাল গাছের পাতার ফাঁকে
বাবুই পাখির বাসা,
কিচিরমিচির যায় যে ডেকে
বুঝি না তার ভাষা।

সকাল দুপুর বিকেল বেলা
ছোট্টো বাসা বুনে,
দিন চলে যায় মধুর গানে
সুখের প্রহর গুনে।

চড়–ই হঠাৎ বললো ডেকে
বাবুই পাখি শোনো,
ঝড় হাওয়ায় তোমার কে ভাই
উপায় আছে কোনো?

একটু হেসে বললো বাবুই
বুঝবি কেমন করে,
স্বাধীনতার স্বাদ কি পাবি
থাকলে পরের ঘরে।



মিলন সব্যসাচী
বৃষ্টি রোদের খেলা

এই শরতে নদীর খূলে
কাটাই সারা বেলা

আমায় ষিম মুগ্ধ করে
বৃষ্টি রোদের খেলা।

রুম ঝুমা ঝুম বৃষ্টি ঝরে
শিষির গাছের ডালে
ঝুম ঝুমা ঝুম নূপুর বাজে
মিষ্টি মধুর তালে।

মেঘলা আকাশ মেঘে ভরা
মেঘের লুকোচুরি
শরৎ হাওয়ায় ওড়াই আমার
স্বপ্ন রঙিন ঘুড়ি।


আদিত্য আনাম
"শীতের আগমন"


শীত আসছে তেড়ে
গাছের পাতা ঝেরে
গীত গাইছে কে রে?
রাখাল ছেলে ফেরে
মোটা কাপড় দেরে
শীত আসছে তেড়ে।

শীত আসছে ফিরে
এই শহরের ভীড়ে
হাজার লোকের ভীড়ে
যাচ্ছে পাখি উড়ে
আপন আপন নীড়ে
শীত আসছে ফিরে।

শীত আসছে শীত
হাড় কাঁপানো শীত
হিম জমানো শীত
বরফ মাখা শীত
শীত আসছে শীত।


জুলফিকার আলী
শীতবাবা

সূর্য্যি মামা মুখ লুকায়
নেই কোথাও তাপ,
বরফ জমে হয়েছে ক্ষীর
পড়ছে শীতের চাপ।

এমন শীতে কাঁপছে সবাই
খোকাও কাঁপে বেশি,
বাঘাবাঘা বীর,কেঁপে অস্থির
শীতটা কোন দেশি?

কাঁথা কম্বল মুড়ি দিয়ে
লুকায় লেপের তলে,
হিম পড়ে টুপ টাপ
শীতের কথা বলে।

তখনি খোকা জ্বালালো আগুন
চলে এলো তাপ,
বলল সবাই হেসে শীতবাবা
করে দে'না মাপ।


আলমগীর কবির
হেমন্তের সকালে

রোদটা যেন হলদে পাখি
ইস,
পাতার ফাঁকে দোেয়ল দিলো
শিস।
ধানের গায়ে শিশির কণা
হাসে,
পাকা ধানের সুবাস নাকে
আসে।

ধানশালিক ফিঙে পাখির
ঝাঁক,
উঠলো হেসে মেঠো পথের
বাঁক।
নতুন ধানে নতুন চালে
পিঠা,
সবার চেয়ে মায়ের হাসি
মিঠা।


মামুন সিরাজী
শীত বুড়ি আসছে

হিম হিম লাগছে
ঠোঁট দুটো কাঁপছে,
হাঁটু দুটো অবিরাম
ঠক ঠক বাজছে ।

হেলে দুলে হাঁটছে
শীত বুড়ি আসছে,
পাতাগুলো গাছ ছেড়ে
কোথা উড়ে যাচ্ছে?

সূর্যের তেজও যেন
আজ ভয় পাচ্ছে,
হন হন তাই বুঝি
দূরে ছুটে যাচ্ছে ।


সাকিব হোসাইন শাকিল
আমার গ্রাম

সবুজ শ্যামল গ্রামটি
আমার গাছেগাছে পাখি,
পরাণ জুড়ায় গ্রামটি দেখে
জুড়ায় দুটি আঁখি ।

ঝিলিক খ্যালে সোনা রোদ
শিশির ভেজা ঘাসে,
রঙবেরঙে প্রজাপতি
গায়যে চারিপাশে ।

রুপালি এক বিল আছে
গ্রামের শেষ প্রান্তে
শাপলা শালুক পদ্ম পাতা
যায় যে সবাই আনতে ।

আব্দুস সালাম
নবান্নের উৎসবে

ধান কাটতে যায় রে এখন
কাস্তে হাতে কৃষাণে
সোনা ধান হচ্ছে কাটা
মাঠে মাঠে মেশিনে।


কৃষাণীরা ধান ভানছে
রাতটা যে নিস্তব্ধ
চারিদিকে যায় রে শোনা
ধান মাড়ায়ের শব্দ।

কৃষকেরা ভরছে গোলা
হেমন্তের এই অঘ্রাণে
প্রাণটা সবার যায় রে ভরে
পিঠা পুলির সুঘ্রাণে।

পালাগানের জমবে আসর
নবান্নের উৎসবে
রাত জেগে সব দেখবে তা যে
গ্রাম বাংলার লোক সবে।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test