E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফয়সাল শাহ এর শিশুতোষ গল্প

২০১৫ নভেম্বর ৩০ ২০:৪৮:৫৬

চিল্টু পিংটু ও বিল্টু

এক বনে অন্যন্য পশুপাখিদের সঙ্গে বাস করতো তারা তিনজন। তিনজনই বনবিড়াল। একজনের নাম পিংটু, আরেকজনের নাম চিল্টু, তৃতীয়জনের নাম বিল্টু।
তিনজন একেবারে গলায় গলায় আর লেজে লেজে বন্ধু। একজন ছাড়া বাকি দুজনের একেবারেই চলে না।

ফয়সাল শাহ এর শিশুতোষ গল্প

দিন যায়, মাস যায় খায় দায় আর মনের সুখে তিন বন্ধু খেলাধুলা করে, ঝর্নার ধারে নদীর পাড়ে তারা সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায়। একদিন বনের মধ্যে খেলা করতে করতে চিল্টু দেখতে পেল দূরে একটি ছোট্ট ছেলে গাছের নিচে বসে খেলা করছে। পিংটু আর বিল্টুকে দেখিয়ে বলল, ‘দেখ দেখ কি ফুটফুটে একটা বাবু গাছের নিচে বসে খেলা করছে।’
পিংটু লেজ নাড়িয়ে বলল, ‘ওদিকে যাবার দরকার নেই বিপদ হতে পারে। কি জানি কি মতলবে এ বনে পিচ্চি বাবুটি এসেছে।’
বিল্টু বলল, ঠিকই বলেছিস, ‘ওটা মনে হয় ভূতের বাচ্চা-টাচ্চা হবে। আমাদের ঘাড় মটকে খাবার মতলব করছে। সাবধান ভুলেও আমরা সেদিকে পা-মাড়াব না।’
তবে পিচ্চি বাবুটার বিষয়ে তাদের আগ্রহের কমতি ছিল না।

তিনজন মিলে বুদ্ধি করল একজন প্রথমে পিচ্চি বাবুটির পেছনে চুপি চুপি গিয়ে হঠাৎ একটা চিৎকার দিবে, তারপর সাথে সাথে বাকি দুজন বাবুটির সামনে গিয়ে দাঁত বের করে ভেংচি দেবে।

কথামতো প্রথমে পিংটু পা টিপে টিপে সাবধানে কোনো শব্দ না করে কিছুক্ষণের মধ্যে একেবারে পিচ্চি বাবুটির পেছনে গিয়ে সজোরে ম্যা-য়্যা-ও করে একটা চিৎকার দিল। এক চিৎকারে পিচ্চি বাবুটি মুহর্তের মধ্যেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। তাকিয়ে দেখে তিনটি বনবিড়াল তাকে জিহ্বা বের করে ভেংচি দিচ্ছে। পিচ্চি বাবুটা প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরক্ষণেই সেও চোখ দুটি ট্যারা করে জিহ্বা বের করে ভেঙাতে লাগল। বনবিড়াল তিনটি দেখেতো অবাক। এত্তটুকু পিচ্চি বাবু ভেঙাচ্ছে ? তিনজনে তখন ভেংচি কাটা বন্ধ করে পিচ্চি বাবুটার দিকে তাকিয়ে আছে।

ইতোমধ্যে পিচ্চি বাবুটার পোষা কুকুর রকি এসে হাজির। রকি এসে দেখল তিনটি বনবিড়াল দূরে দাঁড়িয়ে পিচ্চি বাবুর ভেঙানো দেখছে। রকি পিচ্চি বাবুর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই বনবিড়াল তিনটি লেজ গুটিয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে গেল। বনবিড়াল তিনটি দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছে, দৌড়াতে দৌড়াতে তারা একটি গাছের ছায়ায় বসে জিহ্বা বের করে হাপাতে লাগল।
পিংটু বলে উঠল, ‘আজকে কি মহা বিপদ থেকেই না বাঁচা গেল। আরেকটু হলেই কুকুরটি কামড়িয়ে আমাদের রক্তাক্ত করে ফেলত।’ এদিকে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তিনজনেই ঘুমিয়ে পড়ল।

কয়েকদিন পর পিচ্চি বাবুটা আবার জঙ্গলে এসে তাদের ডাকছে এবং হাতে কয়েকটা বড় বড় চিংড়ি মাছের ফ্রাই। বিল্টু বলছে, ‘দেখ দেখ পিচ্চি বাবুটা আবার এসেছে মনে হচ্ছে আবার নতুন কোন ফন্দি করছে, আবার আমাদের ধরার জন্য।’
কতক্ষণ পর বাবুটা একটা একটা করে তিনটি চিংড়ি মাছের ফ্রাই চিল্টু, বিল্টু ও পিংটুর দিকে ছুঁড়ে দিল। তিনজনই সাবধান। বুদ্ধি করতে লাগল কি করা যায়। এদিকে চিংড়ি মাছের মজার গন্ধে তাদের জিহ্বায় পানি এসে গেল। কিছুতেই লোভ সামলোতে পারছে না। এদিকে পিচ্চি বাবুটা আর নেই, কোথায় যেন চলে গেছে। ওরা পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে সামনে গিয়ে চিংড়ি মাছের ফ্রাই নাকে শুকছে। কি মজার গন্ধ ! এই মাত্র ভেজে এনেছে, এখনো একটু একটু গরম আছে। চিল্টুর আর ধৈর্য ধরল না। চিংড়ি মাছের ফ্রাইটি খেতে লাগল, আহ্ কি মজা ! জীবনে এর আগে এখনো এতো মজার খাবার খায়নি। চিল্টুর দেখা দেখি বিল্টু ও পিংটু বাকি দুটি চিংড়ি ফ্রাই খেতে লাগল। তিনজনই মজা করে চিবিয়ে চিবিয়ে চিংড়ি খাচ্ছে, আর পিচ্চি বাবুটাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। খাবার শেষে তিনজনেই পাশের খাল থেকে পানি পান করে জঙ্গলে হাঁটছে, পিচ্চি বাবুটাকে খুঁজে পাওয়া যায় কি না? এদিকে লুকিয়ে লুকিয়ে একটি গাছের উপর বসে বাবুটা সব দেখছে। বনবিড়াল তিনটি হাঁটাহাটি করছে, তিনজনের কেমন জানি ঘুম ঘুম ভাব হচ্ছে, চোখে ঝাপসা দেখছে। গাছের সবুজ পাতাগুলে হলুদ মনে হচ্ছে। একজনের চোখে আরেকজনের চেহারা বানরের মতো মনে হচ্ছে। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে, মাথা ঘুরাচ্ছে আস্তে আস্তে তিনজনেই মাটিতে ঢলে পড়ল, ধীরে ধীরে অজ্ঞান হয়ে গেল।

গাছে বসে পিচ্চি বাবুটা সবই দেখছিল, কতক্ষণ পর গাছ থেকে নেমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা তিন বনবিড়ালের কাছে গেল, সাঙ্গে কুকুর রকিও আছে। বিল্টুর কানে, চিল্টুর নাকে ও বুকে আঙ্গুল দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে পিচ্চি বাবুটা দেখতে লাগল। পরীক্ষা করে বুঝতে পারল তাদের হৃৎপিন্ড সচল আছে, কিন্তু একেবারে অচেতন। এবার বাবুটি বিল্টুর লেজে ধরে। চিল্টু ও পিংটুকে রকির পিঠে উঠিয়ে সোজা বাড়ি চলে এল। বাড়িতে এসে তাদের বড় একটি মুরগীর ঘরে রেখে দিয়ে পানি এনে এদের শরীরে ও নাকে মুখে ছিটিয়ে দিতে লাগল। চব্বিশ ঘন্টা পর বিল্টু, চিল্টু ও পিংটুর জ্ঞান ফিরল। তাকিয়ে দেখে তারা লোকালয়ে একটি খাঁচায় বন্দি। খিদায় পেট চ্যু চ্যু করছে। কোন খাবার নেই। কতক্ষণ পর পিচ্চি বাবুটা খাচার দিকে এসে দেখল বনবিড়াল তিনটির জ্ঞান ফিরেছে এবং পিট পিট করে তাকিয়ে আছে। এবার ঘরে গিয়ে বাবুটি কিছু মুড়ি এনে খেতে দিল। তিনজনই খিদের চোটে মুড়িগুলো সাবাড় করে ফেলল। তারপর থেকে বিল্টু চিল্টু ও পিংটুর বন্দি জীবন-যাপন শুরু হলো।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test