E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফয়সাল শাহ এর তিনটি শিশুতোষ গল্প

২০১৬ জানুয়ারি ২৭ ১৩:০৬:০২
ফয়সাল শাহ এর তিনটি শিশুতোষ গল্প


বানর ভূত
ফয়সাল শাহ

ওরা সকলেই ক্লাস সিক্স-এর ছাত্র। স্কুলের নাম নীলগঞ্জ হাই স্কুল। নরসন্দী নদী থেকে প্রবাহিত খালপাড়ে অবস্থান। স্কুলের সামনে বিরাট খেলার মাঠ। স্কুলের চারি সীমানা ধরে তাল, মেহগনী গাছ একটি বিরাট রেইনট্রী মাঠের পূর্ব সীমানায়। দক্ষিণ সীমানায় একটি বড় জামগাছ আছে। খেলার মাঠে ছাত্ররা ফুটবল, দাড়িয়া বাধা, ক্রিকেট খেলে।

একদিন ক্লাসরুমে অঙ্কের ক্লাস চলছে। আবু স্যার হোমওয়ার্কের খাতা দেখছেন। প্রায় পায়ত্রিশটি খাতা দেখলেন তিনি। আবু স্যার দেখলেন দশটি অঙ্কের মধ্যে বেশির ভাগ ছেলেই চার-পাচঁটি অঙ্ক ভুল করেছে। শুধু আরিফ সকল অঙ্ক সঠিক ভাবে করে এনেছে। আর স্যারের সন্দেহ হলো আরিফ নোট বই দেখে অঙ্কগুলো করেছে কিনা তাই আরিফকে ডেকে ক্লাসরুমে হোমওয়ার্কের দশটি অঙ্ক থেকে তিনটি অঙ্ক কষতে দিলেন। আরিফ পর পর তিনটি অঙ্ক সঠিকভাবে কষে দিল। আর স্যারের সন্দেহ দূরীভূত হলো। আরিফ ক্লাসে চোপচাপ থাকে কোন দুষ্টুমী করে না, কারো সাথে তেমন বন্ধুত্ব নেই। ক্লসে শুরুর একটু আগে ক্লাসরুমে প্রবেশ করে আবার ক্লাস শেষ হবার সাথে সাথেই বাড়ি চলে যায়। টিফিনের সময় অন্যেরা খাওয়া-দাওয়া করলেও সে কিছুই খেত না। প্রায় সবসময় কালো হাফপ্যান্ট ও সাদা হাফসাট পরে স্কুলে আসত। বইগুলে একটি পাটের তৈরী সুন্দর ব্যাগে থাকত। ক্লাসে প্রতিদিন ত্রিশ চল্লিশজন ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত থাকত। ক্লাস আরম্ভ হতো সকাল এগারটায়, ছুটি হতো বিকেল চারটায়। বাংলা, আঙ্ক, ইংরেজী, সমাজ, বিজ্ঞান, ধর্ম ক্লাশেগুলো সকাল থেকে আরম্ব হয়ে বিকেলে শেষ হতো। মামুন, বাদল নজরুল, বদরুল, আলম, কাসেম এরা ক্লাসের দুষ্ট ছেলে। মেয়েরা দুষ্টুমী করতে না কখনো, বাকী ছেলেরা টুকটাক দুষ্টুমী করতো। দুষ্টুমীর ছাড়াও ক্লাসে পড়া শিখে না, আসলে শিক্ষকের শাস্তি পেত হতো। শাস্তিগুলোর মধ্যে হচ্ছে কানমলা দেয়া, হাতের তালুতে পিঠে বাশের কঞ্চি দিয়ে পিটানো কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাকা তাছাড়া শিক্ষকেরা বকাঝকা করতো। ক্লাসের ক্যাপটেন ছিল ফাষ্ট বয় কাওসার। ক্যাপটেনের দায়িত্ব ছিল শ্রেণী কক্ষে শিক্ষককে সহায়তা করা, ক্লাসের ফাকে কেউ কোনো দুষ্টুমী, ঝগড়া করলে শ্রেণীর শিক্ষককে জানানো। স্যারদের মধ্যে আশু স্যার ইংরেজী, বাংলা, , ভজন স্যার সমাজ ও বিজ্ঞান এবং ইসমাইল স্যার ইসলামীয়াত পড়াতেন।

একদিন নজরুল ও কাশেম টিফিনের ছুটির সময় ক্যাপটেন কাওসারকে মোটকা বলে খেপাচ্ছে এবং ভেংচী দিচ্ছে, কাওসার তাদের কিচ্ছু বললো না। ক্লাস শুরুর সাথে সাথেই আশু স্যারের কাছে বিচার দিল সাথে সাথেই আশু স্যার হাতে থাকা বাশের কঞ্চি দিয়ে কাশেমের পিঠে পাঁচটি এবং নজরুলের হাতে দশটি বাড়ি দিল এবং তিনবার করে কানধরে উঠবস করালো সাথে সাথে ভবিষ্যতের জন্যে সাবধান করে দিলেন। আবার ক্লাসের অঙ্ক ও ইংরেজী না পরার জন্যে মামুন, বাদল, আলমসহ প্রায়ই শাস্তি পেতো। আরিফ সবসময় ক্লাসের সববিষয় মুখস্ত করে আসত এবং কোনো দুষ্টুমী করতো না তাই তাকে কোনো দিন কান ধরেন উঠবস, পিটুনী খাওয়া অথবা ক্লাসে দাড়িয়ে থাকতে হতো না।

একদিন কাসেম ও মামুন ক্লাসের ছুটির পর আরিফকে হাটার সময় পিছন থেকে পায়ে ল্যাং দিয়ে ফেলে দেয়। আরিফ মাটিতে পড়ে যায়। বৃষ্টির পানি ও কাদায় আরিফের সাদা সাট ও প্যান্ট ময়লা হয়ে যায়। বইয়ের ব্যাগটি কাদায় পরে যায়। সাথে সাথেই অন্য ছাত্ররা আরিফকে মটি থেকে টেনে উঠাল। আরিফ কিছু না বলে সরাসরি হেডমাষ্টারের কাছে নালিশ দিয়ে এলো। এদিকে দূরেই সৌমিক ও আবির দাড়িয়েছিল।

আরিফ হেডমাস্টারের রুম থেকে বের হতেই কাসেম ও মামুন তার দিকে তেড়ে এলো। এসেই শাসনের সুরে আরিফকে গালাগাল করতে লাগল। অন্য ছাত্রদের মধ্যে একজন ততক্ষণে হেডস্যারকে নিয়ে মাঠের কাছে চলে এলো। কাসেম ও মামুন হেডস্যারকে দেখে দৌঁড়ে পালাল। হেডস্যার আরিফকে এসে সান্ত্বনা দিয়ে বললো কাল তাদের শাস্তি হবে। যাও তুমি বাড়ি চলে যাও।

সেদিন রাতে কাসেম তার পড়ার ঘরে পড়া ফেলে বড় কাগজে বড় বড় হরফে লিখতে লাগল। আরিফ একটা বানর, আরিফ একটা হাতি, আরিফ একটা ভূত। হঠাৎ কাসেম জানালার পাশে খস্খস্ শব্দ শুনতেপেল। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে কাসেম হক চকিয়ে যায়। বাদামি রং এর লোমে ভরা এক বিশাল বানর তার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটছে। সৌমিকের প্রাণটা বুঝি যায়। বানরটা পিলন ফিরে কাসেমের জানালা দিয়ে তার বিশাল মোটা লেজ ঠেলে ঢুকিয়ে দিল। সৌমিক তা দেখে বাবাগো মাগো বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। এদিকে সাথে সাথে বানরটি হওয়ায় মিলিয়ে গেল। এদিকে কাসেমের দাদ, দাদী, মা চিৎকারে শুনে ছুটে এসে দেখে সৌমিক বিছানায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। দাদীমা ডাকা-ডাকি করছে কিছুতেই জ্ঞান ফিরছে না, সৌমিকের এ অবস্থা দেখে দাদীমাও ভরকে গিয়ে চিৎকার করে সকলকে জড়ো করল। সৌমিকের মা রান্না ঘরে তরকারী পাক করতেছিল, চিৎকার শুনে দৌড়ে এল সৌমিকের অবস্থ দেখে সাথে সাথেই বাড়ির পিছনের টিউবওয়েল থেকে জগে করে ঠান্ডা পানি এনে সৌমিকের নাকে-মুখে ছিটাতে লাগল এবং সৌমিকের মাথায় পানি ডালতে লাগল।


কুটু ও পিপানী
ফয়সাল শাহ

পিপানী একটি মেয়ে দোয়েল। সে বনে জঙ্গলে লোকালয়ে গাছের শাখায় শাখায় উড়ে বেড়ায়, আর মনের সুখে গান গায়। তার মনে কত শান্তি, কোনো চিন্তা নেই। ভাবনা নেই। কোনো লেখাপড়া করতে হয় না। ইচ্ছেমতো কীটপতঙ্গ ধরে ধরে খায়। মাঝে মাঝে ফুলের মধুও খায়। মধু খেতে তার কাছে অনেক মজা।

পিপানীর বয়স একজন বন্ধু দরকার। সে বন্ধু খোঁজাখোজি করে। কাউকেই ভালো লাগে না। মন মতো হয় না। কেউ দেখতে সুন্দর হলে মেজাজে একটু রাগী হয়। আবার মেজাজ ভালো থাকলে বোকা হয়। আবার বুদ্ধিমান হলে প্রতারক হয়। সে এক মহাবিপদে আছে। তার জোড়া মিলছে না।

একদিন ভোর সকালে মনের সুখে গান গাচ্ছে। হঠাৎ একটি ছেলে দোয়েল এসে পিপানীর পাশে বসল। পিপানীকে জিজ্ঞেস করলো, তোমার সাথে কথা বলতে পারি? পিপানী বলল, আজ আমার মন খারাপ, তুমি কাল এসো, কথা বলব। আচ্ছা তোমার নামটা কি বলে যাও? আমার নাম কুটু। ছেলে দোয়েলটি আর কথা না বাড়িয়ে উড়ে চলে গেল।

পিপানী ভাবে কুটুর সাথে কথা বলা দরকার ছিল।
পরের দিন আর কুটু এলো না। পিপানী সারাদিন আপেক্ষা করে করে মন খারাপ করে ঘুমোতে গেল।

সকালে ঘুম থেকে উঠে পুকুরপাড়ে লিচুগাছের ডালে বসে আছে। এক দৃষ্টিতে পানিতে তাকিয়ে আছে। মনটা বিষণœ। কেমন জানি খারাপ লাগছে। খেতে ইচ্ছে করছে না। সকাল থেকে একটি পোকাও খায়নি। পাশে তাকিয়ে দেখে একটা ঘাসফড়িং লাফাচ্ছে। পিপানীর ইচ্ছে হলো না ধরে খেতে। আবার এক দৃষ্টিতে পানিতে তাকিয়ে আছে। দূর থেকে গানের শব্দ আসছে। মনে হচ্ছে কোনো দোয়েল পাখি গান গাচ্ছে। পিপানী উড়ে গিয়ে পাখিটার কাছে বসলো। তাকিয়ে দেখে কুটু বসে বসে মন খারাপ করে গান গাচ্ছে। পিপানী জিজ্ঞেস করলো, কুটু তুমি গতকাল আসোনি কেন? কুটু কোনো কথা না বলে উড়ে চলে গেল। পিপানী অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আর চিন্তা করতে লাগলো গত পরশু কুটুর সাথে কথা না বলাতে সে কষ্ট পেয়েছে ও অভিমান করেছে। পিপানীর মনে একটু অনুশোচনা হলো, কুটুর সাথে এমন আচরণ করা ঠিক হয় নি।

পিপানী উড়ে গিয়ে সাজনা গাছের ডালে কুটুর পাশে গিয়ে বসলো। কুটুর দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করে পিপানী বলল, ভাই কুটু আমার ভুল হয়ে গেছে। সেদিন তোমার সাথে কথা না বলে ভাল কাজে করিনি। তুমি বন্ধু আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আজ থেকে আমরা দুজন বন্ধু। একসাথে খেলাধূলা করবো। আকাশে উড়বো। পোকামাকড় ধরে ধরে খাবো।

কুটু একটু ভাবল। ভেবে বলল, কোনো অহংকার ভালো নয়। তবে, তুমি এজন্য অনুতপ্ত জেনে খুশি হলাম। ঠিক আছে আজ থেকে আমরা বন্ধু।
এই বলে ওরা ডুমুর ডালে বসে মধুর সুরে গান গাইতে লাগল। সে সুর ছড়িয়ে গেল বাতাসে বাতাসে।


নানার মামাবাড়ি
ফয়সাল শাহ

জুয়েল বহুদিন পর ঢাকা থেকে নানাবাড়ি বেড়াতে গেল। নানা গ্রামের ধনী কৃষক। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। চুলদাড়ি পেকেছে। স্বাস্থ্য ভালো। প্রেসার-ডায়বেটিস নেই। হেঁটেই বাজারে যান। নানি বেঁচে নেই। চার মামা তিন খালা। সবাই সংসার করছে। ছোট মামা গ্রামেই থাকে। তার এক ছেলে এক মেয়ে। নাতি পোতাদের নিয়ে নানার ভালোই দিন কাটে।

নানার বাড়ির পূর্ব দিকে বিরাট এক পুকুর। পুকুরপাড়ে তালগাছ, লিচুগাছ, খেজুরগাছ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। জুয়েল নানারবাড়ি গিয়ে প্রথমেই পুকুরপাড়ে চলে যায়। লিচুগাছের ডালে বসে একদৃষ্টিতে তালগাছের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাবুই পাখিগুলো কিচির-মিচির করছে। বাসায় ঢুকছেবের হাচ্ছে। মাঝে মাঝে জুয়েলের বাবুই পাখি হতে ইচ্ছে করে। এদের কোনো চিন্তা নেই। স্কুলে যেতে হয় না। পড়ালেখা করতে হয় না। কী মহা আনন্দে ইচ্ছে হলেই মুক্তভাবে আকাশে উড়ছে, মাটিতে বসছে, গাছে গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এ বছর রোজার ঈদে জুয়েল মা-বাবার সাথে নানারবাড়ি ঈদ করতে এসেছে। ঈদে গ্রামে জুয়েলের খুবই ভালোলাগে। ঢাকায় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে হয়। অপরিচিতই বেশিরভাগ মানুষ। কোলাকুলি করতেও তেমন ভালোলাগে না। আত্মীয় স্বজনের বাসায় বেড়াতে গেলেও সেমাই-ফিরনী খেতে খেতে হাপিত্যেস অবস্থা। শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, নন্দনপার্ক ছাড়া বেড়ানোর তেমন কোনো জায়গা নেই। হাজার হাজার মানুষ গিজ গিজ করে। আনন্দের চেয়ে অস্বস্তিই বেশি। আর গ্রামে নানাবাড়ির সকলে মিলে দলবেঁধে নদীর পাড়ে বিরাট ঈদগাতে ঘাসের উপর চট বিছিয়ে মুক্ত আকাশের নিচে নামাজ পড়ার মজাই আলাদা। নামাজ শেষে নানা-মামা-মামাত ভাইসহ অন্যান্যদের সাথে কোলাকুলি করতে মহা আনন্দ। মুরুব্বিদের কাছ থেকে সালামী নিয়ে মার্বেল কিনে খেলতে খুবই মজার। প্রত্যেক ঘরে ঘরে গিয়ে পিঠা, সেমাই খেতে জুয়েলের খুবই ভালো লাগে। জুয়েল ভাবে, আহা- শহরগুলো যদি গ্রামের মতো এতো সুন্দর হতো।

লিচুগাছের নিচে বসে পুকুর পাড়ে নানা হুক্কায় ধূমপান করছে। পাশেই পুষি বিড়ালটা বসে আছে। তেলাপিয়া মাছগুলো পুকুরে কিলবিল করছে। জুয়েল বাড়ি থেকে একটা ছোট জলচকি এনে নানার পাশেই বসল। এক দৃষ্টিতে দেখছে নানা হুক্কা টানছে, আর হুক্কার পানি পুটপুট শব্দ করছে। নানা নাকেমুখে ধোঁয়া ছাড়ছে। মনে হচ্ছে ধূমপানের চেয়ে আর কোনো মজার কিছু নেই। জুয়েল ধূমপান একদমই পছন্দ করে না। তার বাবা ধূমপান করে না। ধূমপানের ক্ষতিকর বিষয়গুলো জুয়েলের জানা। সে পণ করেছে জীবনে ধূমপান করবে না। বিড়ি-সিগারেট ছূঁয়েও দেখবে না। নানাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কখন থেকে ধূমপান করো?
দাদা বলল, একে বারে ছোট থাকতেই লুকিয়ে লুকিয়ে দাদার হুক্কা টানতাম। অনেক মজা পেতাম। তারপর থেকে আর ছাড়তে পারি নাই। দেখিস না ধূমপান করাতে একটু কাশির ব্যারাম আছে। শরীরে আর কোনো রোগ নেই। তা বেশিদিন হয়তো বাঁচবো না। যারা ধূমপান করে তাদের আয়ু কমে যায়।
এতসব জেনেও ধূমপান করো কেন নানা?
কি আর করবো তোর নানিও বেঁচে নেই। একা একা ভালোলাগে না তাই হুক্কায় দম দেই।
নানা তুমি কিন্তু কাজটা ভালো করছো না।
আসলে আমাদের সময় ধূমপানের খারাপ দিক সম্পর্কে লোকজন এতো সচেতন ছিল না। তাই অভ্যেস করে ফেলেছি এখন ছাড়তে পারি না।
শোনো নানা, অভ্যাস বলে কিছু নেই। তুমি ইচ্ছা করলেই দাড়াতে পারো। সে থাকবে এখন বলোতো, তোমরা যখন ছোট ছিলে তখন ঈদে কেমন মজা হতো?
যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি তখন মামাবাড়িতে একবার ঈদ করেছিলাম। কী যে মজা করেছি। এখনো মনে আছে।
কি কি মজা করেছো নানা?
আর বলিস না ঈদের সাতদিন আগেই মা আমাদের নিয়ে তালডাঙ্গা গ্রামে মামার বাড়িতে নিয়ে গেলেন। সাতদিন ধরে আমরা কানামাছি, দাড়িয়াবান্ধা, পলাপলি, ডাংগুলি, হাডুডু খেলেছি। পুকুর থেকে বড় ছিপ দিয়ে মাছ ধরা, নদীতে সাঁতরানো ও নৌকা চালানো শিখেছি।
ঈদের জন্যে কি কি কেনা কাটা করেছিলে নানা?

আমাদের সময় গ্রামের বাজার থেকেই ঈদের কেনাকাটা করা হতো। আমি, ছোটমামা ও মামাত ভাই জুয়েল নীলগঞ্জ বাজার থেকে কেনাকাটা করি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি একটি নীল পাঞ্জাবি একটি গোলটুপি একটা স্যান্ডু গেঞ্জি ও একটা লুঙ্গি কিনেছিলাম, জীবনে এই প্রথম লুঙ্গি পরি।
ঈদের দিন কি করেছিলে?

সকালে উঠে পুকুরে গোছল করি। তারপর পাঞ্জাবি, লুঙ্গি পরে গায়ে আতর মাখি। পিঠা, ফিরনী ও সেমাই খেয়ে আমরা ঈদগাতে নামাজ পড়তে যাই। নামাজ শেষে সকলের সাথে কোলাকুলি করি। বাড়িতে ফিরে নানিদের নানাদের সালাম করি। তারপর গ্রামে অন্য আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাই। প্রত্যেক বাড়িতে কিছু না কিছু খেতে হয়েছে। না খেলে রাগ করে। খেতে খেতে আর ভালো লাগছিল না। দুপুরে পোলাও কোর্মা খেয়ে আবার বের হই। আমরা সকলে মিলে নদীতে নৌকা চড়ি। কী যে মজা হয়েছিল না- নদীতে পানি থৈ থৈ, জেলেরা ধর্মজাল, টাকজাল, ঠেলাজাল দিয়ে মাছ ধরছে। আমি নৌকার ছৈয়্যার উপরে বসে সবকিছু দেখছিলাম। নদীতে হালকা স্রোত। নদীর পাড়ে কদমগাছ, শেওড়াগাছ, আম, কাঁঠাল, তাল আরো অনেক সবুজ গাছের সমারোহ। পাখিরা কিচির-মিচির করছে। হালকা বাতাস বইছে। আহ কি যে ভালোলাগছিল।
আচ্ছা নানা বিকেলে কি করেছিলে?
বিকেলে আমরা মার্বেল খেলি, তারপর সকলে মিলে হাডুডু খেলি। সন্ধ্যার পর সকলে মিলে বড়মামার কাছে গল্প শুনি। তারপর রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
দুদিন পর মায়ের সাথে আমি আমাদের দাদার বাড়ি চলে আসি। আমার মামার বাড়ির এই ঈদ আমার জীবনের সবচেয়ে মজার ঈদ ছিল।

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test